তীব্রতর হচ্ছে বিশ্বে জল সংকট
1 min read(বর্তমানের কথা ) জল সম্পদের ভাগবাটোঁয়ারা নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতির চক্রাবর্ত সুস্পষ্ট৷ কেউ কেউ বলছেন বিশ্বের জল সংকটের সমাধান করতে না পারলে জল নিয়ে বিশ্বযুদ্ধ বাধাও বিচিত্র নয়৷ প্রশ্ন হচ্ছে, জলের চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে এর সমাধান কী ?জল জীবন ধারণের এক মৌলিক চাহিদা৷ পরিবেশ সুরক্ষার এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ৷মানব সভ্যতার ভবিষ্যত নির্ভর করছে জলের ব্যবহারের ওপর৷ অথচ মিষ্টি জলের উৎস ক্রমশ ক্ষীয়মাণ৷ আপাতদৃষ্টিতে এই বসুন্ধরা জলসম্পদে সমৃদ্ধ৷ কিন্তু এই জলের ৯৭.৫% পানের বা চাষের অযোগ্য৷ মিষ্টি জলের মোট পরিমাণ আড়াই শতাংশের মত৷তাও সহজলভ্য নয়৷ এই আড়াই শতাংশের ৬৯ শতাংশ আসে গ্লেসিয়ার বা হিমবাহ থেকে আর ৩০% জল মাটির নীচের৷ একদিকে পৃথিবী থেকে মিষ্টি জলের উৎস কমে আসছে, অন্যদিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বেড়ে চলেছে৷ আগামী ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে বিশ্বের অর্ধেক বা দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ পড়বে তীব্র জল সংকটের মুখে, যদি না জলের অপচয় রোধ করা যায়৷দেখা যাক, ভারতে জলের চাহিদা ও জোগানের ছবিটা কেমন ?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতে ঠিক বিজ্ঞানসম্মতভাবে জলসম্পদের সদ্বব্যবহার হয়নি৷ যেটা হয়েছে সেটা অস্থায়ী ও অসঙ্গতভাবে৷ তাই খরা ও বন্যা ভারতে একটা বার্ষিক ঘটনা৷ ভারতে জলের জোগান ও চাহিদা প্রসঙ্গে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ তথা জলসম্পদ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সুভাষ সাঁতরা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ভারতে মিষ্টিজলের উৎস মূলত দুটি৷ এক, হিমালয়ের গ্লেসিয়ার আর অন্যটি বৃষ্টিপাত৷ গ্লেসিয়ার থেকে জলপ্রবাহে কিছুটা টান পড়লেও ভারতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণে কিন্তু বিশেষ তারতম্য হয়নি৷ খামতিটা রয়ে গেছে জলসম্পদ পরিচালন ব্যবস্থাপনায়৷ কী পরিমাণ জল আছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাতে পানীয় জল কতটা দরকার, কৃষি ও শিল্পকারখানার জন্য কতটা দরকার, ভূ-গর্ভস্থ জলের সদ্বব্যবহার কীভাবে করা উচিত সেটা ঠিকমত করা হয়নি৷অধ্যাপক সাঁতরা বলেন, প্রাপ্ত জলের ৮০ভাগ খরচ হয় কৃষিক্ষেত্রে৷ খাদ্য সুরক্ষার তাগিদে দুবার তিনবার চাষ করা হয়৷ বর্ষাকালে অসুবিধা হয়না৷ হয় বছরের অন্য সময়ে৷
তখন মাটির নীচের জলকে বেশি বেশি কাজে লাগাতে ব্যবহার করা হয় হাজার হাজার গভীর ও অগভীর নলকূপ৷ দ্বিতীয়ত, জলের ব্যবহার বেড়েছে ঘরগৃহস্থালিতে, শিল্প কারখানাগুলিতে৷ তৃতীয়ত, উষ্ণায়নের ফলে জলের বাষ্পীভবন হচ্ছে বেশি৷ দেখা যাচ্ছে, চাহিদা জোগানের ব্যবধান বাড়ায় মাথাপিছু জলের পরিমাণ অনেক কমে গেছে৷অধ্যাপক সুভাষ সাঁতরার মতে, এর প্রতিকার হলো জল সংরক্ষণ৷ এক, জলের অপচয় বন্ধ করা দুই, চাষাবাদে যেখানে ৮০% জল ব্যবহার করা হয়, সেখানে জল পরিচালন ব্যবস্থাপনাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া৷অর্থাৎ কী ধরণের শস্য ফলানো হবে, কোন অঞ্চলে ফলানো হবে, কী ধরণের সেচ পদ্ধতি বেছে নিতে হবে, বর্জ্য জলের পুনর্শোধন করে তা চাষের কাজে লাগানো এবংজোর দিতে হবে বৃষ্টির জল ধরে রাখার যাকে বলে ওয়াটার হার্ভেস্টিং-এর ওপর৷নতুন জাতীয় জল নীতিতে আন্ত:নদী সংযোগের কথা বলা হয়৷
মানে এক নদীর বাড়তি জল ঘাটতি জলের নদীতে খাল কেটে প্রবাহিত করা৷ কাগজে কলমে ঠিক মনে হলেও বাস্তবে অনেক সমস্যা জড়িত৷ প্রথম কথা, পরিবেশের মৌলিক ভারসাম্য এতে বিপন্ন হবে৷ যেমন, পশ্চিমবঙ্গে, মানস-সঙ্কোশ-তিস্তা-গঙ্গা সংযোগকারী ১৯২ কিলোমিটার খাল কাটতে গিয়ে নষ্ট হয়, অনেক বনভূমি, কৃষিজমি, বসতি ও চা বাগান৷ ব্রক্ষপুত্র-গঙ্গা-মহানন্দার বাড়তি জল টানে কিংবা গঙ্গা-দামোদর-সুবর্ণরেখা নদীর সংযোগ খাল কাটতে হাজার হাজার হেক্টর চাষের জমি নষ্ট হতো৷গঙ্গা-ব্রক্ষপুত্রের জল টানলে সেখানে ঢুকতো নোনা জল৷ বিপন্ন হতো প্রাকৃতিক ভারসাম্য৷
অধ্যাপক সাঁতরার মতে, নীতি নির্ধারকরা মনে করেছিলেন, হিমালয় নদীগুলিতে বুঝি উদ্বৃত্ত জল আছে৷ এটা ধারণামাত্র৷ আরো একটা সমস্যার কথা তিনি বলেন৷ সেটা হলো, আন্ত:-অববাহিকা জল স্থানান্তরিত করতে গিয়ে রাজনৈতিক বিবাদ দেখা দেবার আশঙ্কা থাকে৷ দ্বিতীয়ত,একটা নদীর জল অন্য নদীতে প্রবাহিত করতে গেলে দূষণ ও পলি জমার ইস্যু আছে৷গঙ্গা নদীর জল বন্টন নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ চুক্তি প্রসঙ্গে অধ্যাপক সাঁতরা মনে করেন, খরা মরসুমে ৪২ হাজার কিউসেক জল বাংলাদেশকে দিতে ভারত চুক্তিবদ্ধ যদি ফারাক্কা ব্যারাজে ৭৫ হাজার কিউসেক জল থাকে৷
কার্যত ফারাক্কা বাঁধে সেই পরিমাণ জল থাকছেনা৷ অন্যদিকে, শুখা মরশুমে ঐ পরিমাণ জল বাংলাদেশ না পেলে সেখানে নোনা জলের পরিমাণ বাড়ার আশঙ্কা থাকে৷ উজান থেকে মিষ্টি জলের প্রবাহ না বাড়লে নোনা জলে বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকা ধ্বংসের মুখে পড়বে৷ তাঁর মতে, এসবের মোকাবিলার সহজ পন্থা, বাঁধ বা জলবিভাজিকা
দিয়ে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করা৷
দিয়ে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করা৷