নির্ধারিত সময়ের কিছুটা আগেই এবার বর্ষা কেরলে পৌঁছে যাবে বলে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর আশা করছে
নির্ধারিত সময়ের কিছুটা আগেই এবার বর্ষা কেরলে পৌঁছে যাবে বলে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর আশা করছেকেরলে বর্ষা বা দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু পৌঁছনোর স্বাভাবিক সময় পয়লা জুন। কিন্তু এটা কয়েক দিন এদিক ওদিক হতে পারে। ২০১৬ সালে কেরলে বর্ষা ঢুকেছিল ৭ জুন। আবহাওয়া দপ্তর শুক্রবার জানিয়েছে, এবার ২৯ মে নাগাদ অর্থাৎ স্বাভাবিক সময়ের দিন তিনেক আগেই মৌসুমি বায়ুর প্রবেশ হবে কেরলে। তবে একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, এটা দিন চারেক আগে–পরে হতে পারে। কেরলে আসার সাধারণত আট–দশদিনের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা ঢুকে পড়ে। ১০ জুনের আশপাশে বর্ষা আসে এখানে। উত্তরবঙ্গে বর্ষা আসে আরও কয়েকদিন আগে। তবে এ রাজ্যে বর্ষা আগে আসবে কি না সেব্যাপারে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের কর্তারা এখনই কিছু বলতে চাইছেন না। অধিকর্তা গণেশ দাস জানিয়েছেন, কেরলে ঢোকার পর বর্ষার গতিবিধি পর্যালোচনা করে এটা বলা সম্ভব। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, কেরলে স্বাভাবিক সময়ে এলেও এ রাজ্যে কিছুটা দেরিতে বর্ষা ঢুকেছে, এটা অনেকবারই হয়েছে। বর্ষার অগ্রগতি আবহাওয়ামণ্ডলের বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে।
দক্ষিণ–পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর উৎপত্তি হয় আন্দামান সাগরে। সাধারণত ২০ মে নাগাদ এটা হয়ে থাকে। মৌসুমি বায়ু সৃষ্টি হওয়ার সময় সাতদিন এদিক ওদিক হতে পারে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ২৩ মে নাগাদ দক্ষিণ–পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আন্দামান সাগর ও দক্ষিণ–পূর্ব বঙ্গোপসাগরে ঢুকে পড়ার অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
মৌসুমি বায়ুর স্রোতের একটি প্রান্ত আন্দামান সাগর হয়ে কেরল দিয়ে দেশের স্থলভূমিতে প্রবেশ করে। অন্য প্রান্তটি মায়ানমারের উপর দিয়ে ঢোকে উত্তর–পূর্ব ভারতে। ওই স্রোতটি পৌঁছে যায় উত্তরবঙ্গে। কেরলে ঢোকার পর মৌসুমি বায়ুর স্রোত দক্ষিণ ভারত হয়ে মধ্য ভারতের দিকে অগ্রসর হয়। জুলাই মাসের শুরুর মধ্যেই গোটা দেশ মৌসুমি বায়ুর আওতায় চলে আসে। সব থেকে শেষে মৌসুমি বায়ু ঢোকে উত্তর ভারতে। বর্ষার বিদায় শুরু হয় সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিক থেকে। বিদায় শুরু হয় উত্তর ভারত থেকে। এ রাজ্যে বর্ষা সাধারণত বিদায় নেয় অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে।
বায়ুমণ্ডলের ছ’টি উপাদানের উপর কেরলে মৌসুমি বায়ুর প্রবেশ নির্ভর করে। এই উপাদানগুলির পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে কেরলে বর্ষার প্রবেশের ব্যাপারে পূর্বাভাস জারি করেছে আবহাওয়া দপ্তর।
আবহাওয়া দপ্তর আগেই পূর্বাভাস জারি করেছে যে দেশে এবার স্বাভাবিক বৃষ্টি হবে। এবার প্রাক বর্ষা মরশুমে গোটা দেশ জুড়ে ভালো ঝড়–বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, এর সঙ্গে বর্ষার গতিপ্রকৃতির কোনও সম্পর্ক নেই। দক্ষিণ–পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে চার মাস ধরে যে বর্ষাকাল চলে, তা সম্পূর্ণ অন্য একটি সিস্টেম। এর সঙ্গে প্রাক বর্ষার মরশুমে বজ্রগর্ভ মেঘ সঞ্চার হয়ে যে ঝড়–বৃষ্টি হয়, তার কোনও সম্পর্ক নেই। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল মিহির গুহ জানিয়েছেন, এবার যে রাজ্যে বেশি কালবৈশাখীর ঝড়–বৃষ্টি হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। ঘূর্ণাবর্ত, নিম্নচাপ, নিম্নচাপ অক্ষরেখা প্রভৃতি তৈরির উপর কালবৈশাখীর সৃষ্টি নির্ভর করে। সাধারণত আলিপুর–দমদম আবহাওয়া অফিসে মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে গড়ে ১২টি কালবৈশাখী হয়ে থাকে। এবার সেখানে এখনও পর্যন্ত ১১টি কালবৈশাখী হয়েছে। মার্চ মাসে একটি কালবৈশাখী হয়েছিল। বাকিগুলি হয়েছে এপ্রিল ও মে মাসে। এই মরশুমে ১৫টি পর্যন্ত কালবৈশাখীর নজিরও আছে বলে তিনি জানিয়েছেন। সেই রেকর্ড এবার ভাঙে কি না সেটাই এখন দেখার।
ঘন ঘন কালবৈশাখী হওয়ার জেরে এবার গরমের মাত্রা বেশ কম। এপ্রিল মাসে কলকাতায় মাত্র পাঁচদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি ছিল। মে মাসে মাত্র দু’দিন তা হয়েছে। কলকাতায় এপ্রিল–মে মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কখনও কখনও ৪০ ডিগ্রির আশপাশে চলে আসে। এবার ৩৭.১ ডিগ্রির উপরে এখনও তাপমাত্রা ওঠেনি। জেলাগুলিতেও একই চিত্র।