ছাতার লাঠি থেকে দাদুর লাঠি, পুলিশের লাঠি, এই লাঠি তৈরিই কুটির শিল্পের রূপ নিতে চলেছে রায়গঞ্জের গ্রামে
1 min readছাতার লাঠি থেকে দাদুর লাঠি, পুলিশের লাঠি, এই লাঠি তৈরিই কুটির শিল্পের রূপ নিতে চলেছে রায়গঞ্জের গ্রামে
তন্ময় চক্রবর্তী, রায়গঞ্জ বয়সের ভারে হাঁটতে পারছেন না বৃদ্ধ। সহায় তখন লাঠি।বর্ষাকালের ছাতা কার না জানা। কিন্তু সে ছাতা আপনার মাথায় থাকে একটি লাঠির জন্য।আর পুলিশের লাঠির কথা নতুন করে বলার দরকার নেই।আর এই সব ধরণের লাঠি তৈরি হয় কোথায় জানেন? উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জের দীর্ঘই অঞ্চলের জয়নগর গ্রামে। রংবেরঙের লাঠি তৈরি করছেন একদল যুবক। ছাতার লাঠি, পুলিশের লাঠি থেকে শুরু করে বয়স্ক মানুষদের চলাচলের লাঠি।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘাম ঝরিয়ে লাঠি তৈরিতে ব্যস্ত যুবকরা।সেই লাঠি কলকাতার মহাজনের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে ভিন রাজ্যে। বঙ্গে কদর না পেলেও ভিন রাজ্য তো বটেই, বিদেশেও পাড়ি দিচ্ছে বাঁশের লাঠি। তবে অল্প কিছু বিক্রি হয় স্থানীয় সাপ্তাহিক হাট ও ছাতার দোকানগুলিতেও। জয়নগর গ্রামের বাসিন্দা বাঞ্ছারাম দত্ত স্থানীয় যুবকদের নিয়ে নিজের বাড়িতে গড়ে তুলেছেন লাঠি তৈরির কারখানা। বেত ও বাঁশের কঞ্চি থেকে তৈরি হয় পোক্ত লাঠি। এই লাঠি গুলি দিয়ে বেশিরভাগ ছাতা তৈরি হয়।
চাহিদা মত অন্য জিনিসও তৈরি করা হয় বাঁশের তৈরি এই লাঠি দিয়ে।কিভাবে তৈরি করা হয়? শিল্পীরা জানালেন, প্রথমে কঞ্চি গুলিকে জলে ভেজানো হয় নরম করার জন্য। তারপর সেগুলি ডাইসে ফেলে তার মধ্যে বালি ভরে জোড়া লাগিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তাপ দিয়ে বিভিন্ন আকার দেওয়া হয়। সবশেষে বিভিন্ন রাসায়নিক রং ব্যবহার করে লাঠিগুলিকে সুন্দর করে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হয়।এক সময় ছাতা বলতে বাঁশের লাঠি দিয়ে তৈরি কালো রঙের বড় ছাতা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হতো এই বাংলায়। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাঁশের লাঠি দিয়ে তৈরি ছাতার ব্যবহার নেই বললেই চলে এখন। তবে গ্রাম-গঞ্জের বয়স্ক কিছু মানুষ শতাব্দী প্রাচীন এই ধরনের ছাতা ব্যবহার আজও করেন।
বাঁশ ও কঞ্চি দিয়ে বানানো এই লাঠি কলকাতা থেকে অসম, ত্রিপুরা, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং দক্ষিণ ভারতের কয়েকটি রাজ্যে রপ্তানি হয়। এমনকি বিদেশেও এই লাঠির চাহিদা রয়েছে। বাঞ্ছারাম বাবু জানান, গত বছর আশ্বিন মাসে আমার ভাগ্নে কলকাতা থেকে লাঠি বানানোর কাজের প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে। কলকাতার এক মহাজনের কাছ থেকে বাঁশ ও কঞ্চির লাঠি এবং অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে আসি। গ্রামের বেশ কিছু যুবককে আমার ভাগ্নে লাঠি তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়। এখন পাঁচ থেকে ছয় জন যুবক লাঠি বানানোর কাজে যুক্ত।তিনি বলেন, প্রতি দেড় মাস ছাড়া এখান থেকে মিনি ট্রাকে করে কলকাতায় মহাজনের কাছে পাঠিয়ে দিই। ওখান থেকে ভিন রাজ্যে পাঠান মহাজন। আমি স্থানীয় বাজারেও বিক্রি করি।
রায়গঞ্জে আমাদের এখানেই লাঠি তৈরি হয়। পাইকারি ৯০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে এই লাঠি। তবে দাদুর লাঠি খুচরো ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দরেও বিক্রি হয়। লাঠি তৈরির কাজে যুক্ত গোকুল ভৌমিক জানান, বাবা কাজটা শিখিয়েছেন। আমি আগে কলকাতায় ছাতা সহ বিভিন্ন লাঠি তৈরি করতাম।
এরপর ইচ্ছে হয় নিজে করব। সেই জন্য রায়গঞ্জে চলে আসি। নিজের গ্রামেই মামা বাঞ্ছারাম দত্তের সঙ্গে লাঠি তৈরি কারখানা গড়ে তুলি। গ্রামের কয়েকজনকে কাজ শিখিয়ে দক্ষ করে তুলেছি।দিলীপ মন্ডল নামে আরেক জন শ্রমিক জানান, কৃষি কাজে সেভাবে লাভের মুখ দেখি না। তাই লাঠি তৈরির কাজ শিখে এখানেই কাজ করছি। ভালোই আছি। স্থানীয় দীর্ঘয় গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রফিকুল আলম জানান, স্থানীয় যুবকরা কৃষিকাজের উপর নির্ভর না করে নিজেরাই কাজ শিখে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা পঞ্চায়েত থেকে অবশ্যই সাহায্য করবো।। জেলা শিল্প কেন্দ্রের আধিকারিক সুনীল সরকার জানান, সত্যি ভাল উদ্যোগ। আমরা শীঘ্রই যাব সেখানে। যদি তাদের লোন বা অন্য কোনও সরকারি সাহায্য লাগে তবে নিশ্চয়ই সাহায্য করবো।