চূড়ামন জমিদার বাড়ির পুজো সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ
1 min read
সেই জমিদারি আজ আর নেই, নেই পুজোর জৌলুসও।কিন্তু আজও বিভিন্ন সম্প্রদায়, জাতি ও ধর্মের মধ্যে সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের বার্তা দিয়ে যাচ্ছে আজও ইটাহারের চূড়ামনের জমিদার বাড়ির পুজো।ঐতিহ্য ও সম্প্রীতির মেলবন্ধনের উদাহরণ হয়ে আছে চূড়ামন গ্রামটি একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো। একপাশ দিয়ে বয়ে চলেছে মহানন্দা, অন্য পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে বুড়ি মহানন্দা নদী। জমিদারের আমলেই এই গ্রাম ছিল এককথায় বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের প্রতিরূপ।
জাতপাতের কোনও বাছবিচার ছিল না। অতীতের সেই ঐতিহ্যকে আজও বহন করে চলছে চূড়ামন।আজ থেকে আনুমানিক ২০০ বছর আগে তৎকালীন জমিদার জগৎবল্লভ রায়চৌধুরী এই পূজোর সূচনা করেছিলেন। এরপর জমিদার মোহনী মোহন রায়চৌধুরীর আমলে পুজোর জৌলুস বেড়ে যায়। এখন আগের মতো আড়ম্বর না থাকলেও জমিদার পরিবারের বংশধররা পুজোর আয়োজন করেন। পুজোর দিনে মহিষ বলির প্রথা ছিল। পুজোর দিনে যাত্রাপালার আসর ও বিশাল মেলা বসত। সেই মেলা দেখতে দূরদূরান্ত থেকে বহু লোক আসত। সেসময় গৌড়, বিহার থেকে হাজার হাজার মানুষ এসে ভিড় জমাত। এখন সেসব না থাকলেও শুধুমাত্র দশমীর দিন ছোট আকারের মেলা বসে। এখানে ব্রাহ্মণ, বৈষ্ণব, পাটনী, হরিজন, মুসলিম, জেলে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ জমিদার বাড়ির পুজোয় অংশ নেয়। নদীগর্ভে চলে যাওয়ার পরও অবশিষ্ট জমিদার বাড়ির একাংশে প্রতিবছর স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে এই পুজোর আয়োজন হয়। অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষের সামান্য দূরেই রয়েছে ভগ্নপ্রায় শিব মন্দির। সেই মন্দিরের সামনেই রয়েছে পীরের ধ্বজা। দশমীর দিন সাড়ম্বরে এই পীরের ধ্বজা পাল্টানো হয়। স্থানীয় মৌলবীর উপস্থিতিতে ওইদিন একটি বাঁশে তেল ও সিদুঁর মাখিয়ে তাতে লাল কাপড় ওড়ানো হয়। সেখানে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষরাই উপস্থিত থাকলেও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের উৎসাহের কোন খামতি থাকে না।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
জমিদারের বংশধর জীবনাথ রায়চৌধুরী এলাকায় থাকলেও তাঁর ছেলে কৌশিক রায়চৌধুরী কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। তাঁরা বলেন, এখন জমিদারি নেই, তবুও আগের মতই নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে পুজোর আয়োজন হয়। মহালয়ার দিন ঘট বসিয়েই শুরু হয় দেবী আরাধনা। নবমীর দিন রাতে মোষ বলি হতো। তবে এখন বলিপ্রথা নেই। মোষ কেনার বরাদ্দ অর্থ দিয়ে মায়ের ভোগ নিবেদন করা হয়।
চূড়ামন জমিদার বাড়ির পুজোয় এখন বাহুল্য না থাকলেও এর আকর্ষণের কোনও অভাব নেই। অত্যন্ত নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে এই পুজো হয়। এখনও এলাকার বিভিন্ন সম্প্রদায় ও ধর্মের মানুষ এই পুজোকে ঘিরে আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});