বাহীন জমিদার বাড়ীর সিংহবাহিনী মন্দিরের দুর্গাপূজার জৌলুস না থাকলেও আচার নিষ্ঠার খামতি নেই
1 min readপিযা গুপ্তা —উত্তর দিনাজপুর জেলার বাংলা–বিহার সীমান্তে লাগোয়া বাহীন জমিদার বাড়ীর দুর্গা পূজার নিষ্ঠা ও বাড়ির সিংহ বাহিনী দুর্গাপূজার বর্তমানে আগের সেই জৌলস না থাকলেও আচার– নিষ্ঠায় পূজার বনেদিয়ানা আজও মানুষকে আকৃষ্ট করে থাকে।পিছন দিয়ে বয়ে যাওয়া নাগর নদীর ধারে যে পাকা ঘাটটি রয়েছে সেটির এখন ভগ্নদশা। কিন্তু এখনও রয়েছে হাতি বাঁধার কংক্রিটের কয়েকটি খুঁটি।
এই খুঁটিগুলিতেই এক সময়ে জমিদার বাড়ির হাতি বাঁধা থাকত। নাগরের ঘাটে লাগত জমিদারের বজরা। এসবই এখন অতীত ইতিহাস বাহিন জমিদার বাড়ির। এক সময়ে এই জমিদার বাড়িতেই মহা ধুমধাম করে দুর্গাপুজো হতো। এখন গ্রামের মানুষ উদ্যোগ নিয়ে কোনওক্রমে সেই পুজো বাঁচিয়ে রেখেছেন। গত বছর গ্রামে নাগরের জল ঢুকে ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে। সেই কারণে পুজো আরও ছোট করে হবে বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন। রায়গঞ্জ শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে বাহিন জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজোর এবার এটাই বাস্তব চিত্র।
এই বাড়িটিতে এখন আর জমিদার পরিবারের কেউ থাকেন না। ভগ্ন, জরাজীর্ণ জমিদার বাড়ির পাশেই পুরানো সিংহবাহিনী মন্দির। সেখানেই প্রতিবছরের মতো এবারও দুর্গাপুজো হবে। সিংহবাহিনীর সোনার মূর্তি বহু দিন আগেই চুরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও সিংহবাহিনীর থানে নিত্যপুজোর রীতি চালু রেখেছেন গ্রামবাসীরাই। মায়ের পুজোতে জলুস না থাকলেও নিষ্ঠা ভরেই এখানে পুজো হয়।
নাগর নদী এখানে বিহার–বাংলা সীমান্তকে ভাগ করে রেখেছে। কিন্তু পুজোর টানে বিহার থেকেও অনেকে বাহিন জমিদার বাড়ির এই ঐতিহ্যমণ্ডিত পুজো দেখতে ভিড় জমায়। স্থানীয় বাসিন্দা ও এই পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা শ্যামল চৌধুরি বলেন, এবারে এখানে বড় করে পুজো করা সম্ভব হচ্ছে না। গ্রামে নাগরের জল গত বছর ঢুকে যাওয়ায় প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। এক সময়ে এখানে রায়চৌধুরি পরিবারের সবিরাট জমিদারি ছিল। জাঁক–জমক করে দুর্গাপুজো হতো। কিন্তু এখন বাহিন জমিদার বাড়িটি আর বসবাসের যোগ্য নেই।
এখানে কেউই থাকেন না। গ্রামবাসীরাই সেই দুর্গাপুজো করেন। সোনার সিংহবাহিনীর মূর্তিটি ১০–১২ বছর আগে চুরি হয়ে গিয়েছে। তবে সেই থানে এখনও নিত্যপুজো হয়। গ্রামবাসীরা জানান, এক সময়ে ইটাহারের চূড়ামনের রায়চৌধুরি পরিবারের জমিদারির শরিকরাই এখানে জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন। তারপর এখানে দুর্গাপুজো শুরুহয়। সেটা ঠিক কত বছর আগে তা অবশ্য সঠিক করে কেউ বলতে পারেন না।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
সেই সময়েই জমিদার বাড়ির সামনে ‘বড় বাগানে‘ হাতি বাঁধা থাকতো। সেই কংক্রিটের খুঁটিগুলি এখনও রয়েছে। গ্রামবাসীদের দাবি, এখানে চার–পাঁচটি হাতি বাঁধা থাকত। সেই হাতির পিঠে চড়েই জমিদারি পরিদর্শনে যেতেন জমিদারেরা। জমিদার বাড়ির পিছন দিয়েই বইছে ভরা নাগর।
নদীর ওপারে বিহারের বারসই, গাঞ্জন, কাদনা প্রভৃতি গ্রামের থেকে এখনও প্রচুর মানুষ এই পুজো দেখতে আসেন। সেই কারণে প্রতি বছর পুজোর আগেই নাগর নদীর উপরে অস্থায়ী বাঁশের সেতু তৈরি হত। কিন্তু এবারে এখনও তা করা সম্ভব হয়নি। আগে সিংহবাহিনী মন্দিরে চণ্ডীপাঠ ও দুর্গাপুজো করতেন তিন জন পুরোহিত। এখন আর সেসব নেই। তবে যা আছে তাহল আচার– নিষ্ঠা। এই আচার –নিষ্ঠা সহকারে পুজো দেখবার জন্য দূর দূরান্ত থেকে অজস্র ভক্তের ঢল নামে প্রতি বছরেই।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});