October 25, 2024

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী মা বয়রা কালী পুজো

1 min read

মা বয়রা কালী
তন্ময় চক্রবর্তী ও তুফান মোহন্ত ঃ- গ্রাম বাংলার পূজা পার্বণে নদ নদী বিশেষ ভুমিকা পালন করে সেই দিক দিয়ে উত্তর দিনাজপুর জেলার নদী গুলির গুরুত্ব অপরিসীম উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জে শ্রীমতি নদীর তীরে বয়রা কালী পূজো শুরু হয়েছিল কয়েশ বছর আগে বর্তমানে প্রায় সারা বছর ধরে শ্রীমতি নদীতে ধান চাষ হলেও এক সময় এই নদী খরস্রোতা ছিল সেই সময় বর্তমান বয়রা কালি মন্দিরের পার্শ্ববর্তী গুদরী বাজার ঘাটে এসে বড়ো বড়ো নৌকা লাগত নদী পথে যে সমস্ত বণিক সম্প্রদা বাণিজ্য করতে আসতেন তাঁরা নদী তীরে একটি জঙ্গলে বয়রা গাছের তলায় প্রথম কালী পূজোর সূচনা করেছিলো
সেই সময় থেকেই এই কালীমা বয়রা কালীনামে পরিচিতি লাভ করে কথিত আছে, কালী পূজোর রাতে মা বয়রা কালিয়াগঞ্জ শহর পরিক্রমায় বের হতেনসেই সময় মা বয়রা কালীর নূপুরের আওয়াজ অনেকেই নিজে কানে শুনেছেনঅনেকে আবার একথাও বলেন   আজ থেকে বহু বছর আগে যখন এই শ্রীমতি নদী দিয়ে বাণিজ্য করতে যেত বড় বড় বাণিজ্যিক রা  

কালীবাড়ির পুরহিত সমর ভট্টাচার্য  
ঠিক সে সময় এই কালী বাড়ির পাশেই ছিল ঘন জঙ্গলে ভরা আর সেখানে ছিল একটি বয়রা গাছ সেখানেই একদিন হঠাৎ একটি কালির স্থানের সন্ধান পাওয়া যায়
মা বয়রা কালী পূজো কমিটির সম্পাদক বিদ্যুৎ বিকাশ ভদ্র 

আর
সেই কালি সন্ধানে রোজী আসতো সেই সময় কিছু ডাকাত দল আর এখানে এসে তারা ডাকাতি করার প্ল্যান করত  পুজো করার পর আর সেই থেকেই প্রাথমিকভাবে এই পুজোর শুরু হয়েছিল
ভক্তপ্রান মানুষ
এই বয়রা কালী মন্দির ঘেঁষে ১৯২৮ সালে কালিয়াগঞ্জে রেল লাইন স্থাপিত হয় সেই রেল পথেই কালিয়াগঞ্জ হয়ে রায়গঞ্জ এসেছিলেন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় বিপ্লবীরা কালিয়াগঞ্জের মজলিশপুর এলাকায় মাঝে মধ্যেই আস্তানা গাড়তেন সেই সঙ্গে বিপ্লবীরা শ্রীমতি নদী তীরের জঙ্গলাকীর্ণ এলাকায় নিয়মিত গোপনে বৈঠক করতেন ১৮৭৪ সালে কালিয়াগঞ্জের পার্শ্বত্ব গ্রাম হাট কালিয়াগঞ্জে থানা স্থাপিত হয়েছিল

ভক্তপ্রান মানুষ
ইংরেজরা মজলিশপুর এলাকা সহ শ্রীমতি নদী তীরবর্তী এলাকায় বিপ্লবীদের উপর নজরদারী চালানোর জন্য হাট কালিয়াগঞ্জ থেকে থানা স্থানান্তরিত করে নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকার কালিয়াগঞ্জে নিয়ে আসে সেই সময় কালিয়াগঞ্জ থানার দারোগা ছিলেন নজমূল হক

ভক্তপ্রান মানুষ


ইংরেজদের অধীনে চাকরী করলেও তিনি ভারতীয় সভ্যতা সংস্কৃতির যথেষ্ট মর্যাদা দিতেন একজন খাঁটী মুসলিম হয়েও হিন্দু ধর্মের প্রতি ছিল তাঁর অগাত বিশ্বাস দারোগা নজমূল হকের উদ্যোগ আপ্রাণ চেষ্টায় সেসময় তৈরি হয়েছিল মা বয়রা কালি মন্দির 
কালী মন্দিরের সামনে “নজমূ নাট্য নিকেতন” সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত 

এই
মন্দির তৈরির জন্য নজমূল বাবু এলাকার মানুষের কাছে গিয়ে অর্থ ভিক্ষা করে এবং কালিয়াগঞ্জ থানায় লবণের গাড়ি নিলাম করে সেই পয়সায় মন্দির তৈরি করেছিলেন সেই সময় নিষ্ঠা আচারের মধ্য দিয়ে মা বয়রা কালী পূজোর আয়োজন তিনি নিজের উদ্যোগে করতেন

                                                              ছবি শঙ্কর গুপ্তা
সাত দিন ধরে চলত গান বাজনার আসর নজমূল হকের নামে মা বয়রা কালী মন্দিরের সামনেনজমূ নাট্য নিকেতনসম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আজও বর্তমানদীর্ঘদিন বাদে কালিয়াগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কনক প্রসাদ শিকদার পুরানো মন্দিরের স্থানেই নতুন ভাবে বয়রা কালি মন্দির তৈরি করেন ১৯৬৬ সালে প্রায় দের লক্ষ টাকা ব্যায়ে মা বয়রা কালির নতুন পাকা মন্দির তৈরি হয় রায়গঞ্জ বালুরঘাটগামী ১০ রাজ্য সড়কের পাশে অবস্থিত মা বয়রা কালী মন্দির ১৯৯৮ সালের এপ্রিল কালিয়াগঞ্জবাসীর চেষ্টায় আর্থিক সহায়তায় প্রায় চার লক্ষ টাকা ব্যায়ে মা বয়রার অষ্টধাতুর বিগ্রহ স্থাপন করা হয় কৃষ্ণনগরের মৃগাঙ্ক পাল এই অষ্টধাতুর বিগ্রহটি তৈরি করেছিলেন 

কালিয়াগঞ্জে শ্রীমতি নদীর তীরে বয়রা কালী পূজো শুরু হয়েছিল কয়েশ বছর আগে

কালী পূজোর রাতে মা বয়রার গোটা শরীর সোনায় অলঙ্কারে ঢেকে দেওয়া হয় পূজো শেষে পরের দিন সকালে মায়ের অলঙ্কার খুলে নিয়ে ব্যাঙ্কের লকারে রাখার ব্যাবস্থা করা হয় কালী পূজোর রাত থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয় গোটা কালীবাড়ি চত্বর প্রতি বছর পূজো শেষে কয়েশ পাঁঠা বলির চল আজও রয়েছে 


(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

                                                               ছবি শঙ্কর গুপ্তা
বয়রা মায়ের পুজোতে প্রতিবছর পাঁচ রকমের মাছ,তিন রকমের সবজী সহ পাঁচ রকমের ভাজা খিচুরীর আয়োজন করা হয় মন্দিরের রান্নার ঠাকুর স্বপন চ্যটার্জী বলেন, মায়ের পূজোতে তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে সোল ,বোয়াল ,পুঠি মাছ সহ পাঁচ রকমের মাছ , পাঁচ রকমের ভাজা তিন রকমের সবজি রান্না করে মায়ের ভোগ বানিয়ে আসছেন

                                                          ছবি শঙ্কর গুপ্তা
মা বয়রা কালী পূজো কমিটির সম্পাদক বিদ্যুৎ বিকাশ ভদ্র জানান, মা বয়রা কালীর আকর্ষণে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই নয় ভারতবর্ষ সহ বিদেশ থেকেও ভক্তরা মা বয়রার পূজো দিতে আসেন মায়ের মন্দিরে বছরের প্রতিদিন নিয়ম করে নিষ্ঠা আচারের সঙ্গে পূজো হয় প্রতি বছর ভক্তদের নানা ধরণের মানতে মায়ের পূজো মণ্ডপ যেন তীর্থক্ষেত্রের রূপ নেয় তাই
মা বয়রা কালী মন্দির জেলার গর্ব বাড়ির বিভিন্ন পূজো বাড়িতে না করে অনেক ভক্ত প্রাণ মানুষ মায়ের মন্দিরে এসে সেই পূজো দেওয়ার চল রয়েছে এখানে ভক্তপ্রান মানুষজনের মনস্কামনা পূর্ণ হওয়ায় মায়ের মন্দিরে অলঙ্কার অর্পণ করার প্রথা আজও বর্তমান তিনি আরও  জানান পূজা কমিটির বিগত সাধারণ সভায় সিধান্ত হয়েছে মা বয়রা  মায়ের মন্দির নুতন করে নির্মাণ করা হবে।মায়ের মন্দির নির্মাণের জন্য আমরা সবার কাছেই আবেদন রেখেছি আপনারা সবাই সাধ্যমত সাহায্য করুন যাতে আমরা একটি দর্শনীয় মন্দির নির্মাণ করতে পারি।
কালীবাড়িতে পুজো দিতে প্রচুর মানুষ ভিড় ছবি শঙ্কর গুপ্তা

পুজোকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর মন্দির চত্তরে বিশাল মেলা বসে পুজো শেষে মন্দির প্রাঙ্গনে সাধারন মানুষদের পাত পেরে প্রসাদ খাওয়ানোর চল আজও বর্তমানএই কালি পুজোতে ঘিরে সারা বছর আর যে যাই যেখানেই থাকুক না কেন তারা কালিপুজোর সময় কালিয়াগঞ্জ আসতে ভলেন 
না 
শুধু তাই নয় বছরের বিভিন্ন সময় এই কালীবাড়িতে পুজো দিতে প্রচুর মানুষ ভিড় করে 
তেমনি কিছু সাধারণ মানুষরা জানালেন তাদের কিছু কথাতেমনি কালীবাড়ির
পুরহিত
সমর ভট্টাচার্য  ও শংকর ঝা  বলেন নিষ্ঠা ভুক্তি সহকারে মা বয়রা কালী পুজো হয়ে আসছে বছরের পর বছর ধরে পুজোর সময় পুজোর আয়োজনে থাকে নানান চমক পাঁচরকম মাস থেকে শুরু করে মায়ের অন্য ভোগে থাকে বিভিন্ন রকম পদ তাই এই পুজো আর পাঁচটা পুজোর চেয়ে একদমই আলাদা তারা বলেন মায়ের কাছে ভক্তি নিষ্ঠা সহকারে যদি কিছু চাওয়া যায় তাহলে মা দুহাত তুলে তাদের ভক্তবৃন্দ দের সব আশা পূরণ করে.





(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});



(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});


(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});


(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *