এইমসের সুপ্ত বাসনার দ্বীপ কি পুনরায় জ্বলে উঠবে দীপার হাত ধরে।
1 min read
জয়ন্ত বোস, বর্তমানের কথা।শৈবালের মা অসহ্য পেটের ব্যাথায় কষ্ট পাচ্ছে। বাড়িতে একমাত্র ছেলে শৈবাল গতবছর পিতৃহারা হয়ে মাকে নিয়েই সংসারের সবে হাল ধরেছে। মা পেনসন পাচ্ছেন কারণ শৈবালের বাবা প্রাথমিক শিক্ষক ছিলেন। শৈবাল নিজে একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে সামান্য বেতনে চাকরি করে। মায়ের পেটের ব্যাথার জন্য সেই নার্সিং হোমের পরিচিত চিকিৎসককে দেখালে চিকিৎসক লিভারের জটীল রোগের কথা বলে শৈবাল কে জানিয়ে দেন তার মাকে বাহিরে কোথাও নিয়ে গিয়ে ভালো চিকিৎসা করাতে। শৈবালের বাড়ি রায়গঞ্জের দেবীনগর এলাকায়।
আর এই কথা শুনেই শৈবাল কে আক্ষেপ করতে দেখা গেল এবং আক্ষেপের সুরে বলেই ফেললো আজ যদি রায়গঞ্জে এইমস থাকতো তাহলে হয়তো মাকে নিয়ে বাহিরে যেতে হতো না চিকিৎসার জন্য। সত্যিই আজ শৈবালের মতো রায়গঞ্জ কেন উত্তরবঙ্গের আপামর জনসাধারণ সুচিকিৎসায় পরিষেবা পেতে চেয়েছিল কিন্তু পেলেন না কেউই। রায়গঞ্জে এইইমস গড়ে উঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন রায়গঞ্জ লোকসভার প্রাক্তন সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী , কালিয়াগঞ্জের ভূমিপুত্র এবং ভারতের রাজনৈতিক মঞ্চে কংগ্রেসের তথাকথিত নেতা প্রয়াত প্রিয় রঞ্জন দাসমুন্সী।
উত্তরবঙ্গের মানুষজনকে উন্নততর চিকিত্সা দেওয়ার জন্য রায়গঞ্জে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস তৈরির দাবি প্রথম তুলেছিলেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি৷ তাঁর সেই দাবিকে মর্যাদা দিয়ে ২০০৯ সালে ইউপিএ সরকার রায়গঞ্জে এইমস তৈরির কথা ঘোষণা করে৷ কিন্তু ২০১১ সালে রাজ্যের মসনদে বসেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিদ্ধান্ত নেন, রায়গঞ্জে নয়, এইমস হবে কলকাতা থেকে ৪৫০ কিমি দূরে কল্যাণীতে৷ এইমস সরানোর পিছনে রায়গঞ্জের তত্কালীন সাংসদ দীপা দাশমুন্সির সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তিক্ত সম্পর্কের ব্যাখ্যাই উঠে এসেছে বিভিন্ন মহল থেকে৷ এইমস রায়গঞ্জেই তৈরির দাবি নিয়ে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে অনশনেও বসেন দীপা৷
যদিও তাতে রাজ্যের মত বদল হয়নি৷ প্রথম দিকে কংগ্রেস হাইকমান্ড দীপাদেবীর পক্ষে থাকলেও ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের কিছু আগে রাজ্যে পরিদর্শনে এসে তত্কালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদও রাজ্যের পছন্দের জায়গাতেই এইমস গড়ার ব্যাপারে গ্রিন সিগন্যাল দিয়ে যান৷ কেন্দ্রে পালাবদলের পর বিজেপি সরকারও জানিয়ে দেয়, রাজ্যের পছন্দমাফিক জায়গাতেই তৈরি হবে এইমস৷ রায়গঞ্জ লোকসভা নির্বাচন কিংবা অন্য কোনো নির্বাচন ছাড়াও এখনো অবধি এতদ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে এইমসের সুপ্ত বাসনা ধিক ধিক করে জ্বলছে ,আর এই বাসনার দ্বীপ পুনরায় জ্বলে উঠবে কিনা সেই আশায় বুক বেঁধেছে রায়গঞ্জ লোকসভা নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে।
আর ঐ দ্বীপ জ্বালানোর মানুষ টি এবারেও প্রার্থী হয়েছেন তিনি কংগ্রেসের দীপা দাসমুন্সী। বিভিন্ন ইস্যুগুলোর মধ্যে প্রয়াত প্রিয় নেতা প্রিয় রঞ্জন দাসমুন্সী নামের যে সেন্টিমেন্ট রায়গঞ্জ লোকসভা আসনে নির্বাচনী ক্ষেত্রে এখনও অবধি জড়িয়ে আছে তাকেই অবলম্বন করে দীপা দাসমুন্সী এবারের ভোট ময়দানে ঝাঁপিয়ে পরেছেন। কালিয়াগঞ্জ, হেমতাবাদ, রায়গঞ্জ, করনদীঘি , ডালখোলা , গোয়ালপুকুর, ইসলামপুর এলাকার কংগ্রেস তথা প্রিয় রঞ্জন দাসমুন্সীর ঘনিষ্ঠ সৈনিকদের ৬০-৭০ শতাংশ সৈনিকরা দলবদল করে অন্য রাজনৈতিক দলে সৈনিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও কংগ্রেস প্রার্থী দীপা দাসমুন্সীর প্রচারে মানুষের ঢল চোখে পরার মতো।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
৩০-৪০ শতাংশ সৈনিকদের উপর ভরসা করে এবং প্রয়াত নেতা প্রিয় রঞ্জন দাসমুন্সীর নামের সেন্টিমেন্ট কে হাতিয়ার করে ও এলাকার মানুষের ঐ সুপ্ত বাসনার দ্বীপশিখা কে পাথেয় করে দীপা দাসমুন্সীর প্রচার ইতিমধ্যে আলাদা মাত্রা পেয়েছে। এই নির্বাচনী এলাকায় জনজোয়ার এখনও যে কংগ্রেসের পক্ষে একথা বললেন রায়গঞ্জ ও কালিয়াগঞ্জ পৌর তথা পঞ্চায়েত এলাকার ভোটাররা। নির্বাচনী প্রচারে এক সমীক্ষায় এইমস নিয়ে কথা প্রসঙ্গে অধিকাংশ মানুষদের বলতে শোনা গেল রায়গঞ্জে এইমস যাতে গড়ে উঠতে পারে এই বিষয়ে বিজেপি, সিপিআইএম এবং তৃণমূল কংগ্রেস রাজনৈতিক দলগুলো উদাসীন ছিলেন , তারা কেউ এতদ অঞ্চলের মানুষের সুচিকিৎসার পরিষেবার কথা ভাবেন নি , শুধুমাত্র মানুষের স্বপ্ন কে নিয়ে রাজনীতি করে গেছেন। সেখানে কংগ্রেস প্রার্থী দীপা দাসমুন্সীর লড়াই আজো সকলের জানা এই ভাষাতেই ব্যাক্ত করলেন বিভিন্ন এলাকার সাধারণ ভোটাররা। তবে দ্বীপ জ্বলে উঠবে কি উঠবে না এই সংশয়ের মাঝে কংগ্রেস প্রার্থী দীপা দাসমুন্সী যে ইতিমধ্যে প্রচারের আঙ্গিনায় জ্বলে উঠেছেন সেই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। নির্বাচনী একজিট পোলে কংগ্রেস প্রার্থী দীপা দাসমুন্সীর অগ্রগতির আভাসে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীদের কপালে ভাঁজ ফেলে দিয়েছে। তবে সুচিকিৎসার পরিষেবার সাথে এতদ অঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন হতো এবং ভারতের মানচিত্রে রায়গঞ্জের ভৌগলিক অবস্থানের কি আমুল পরিবর্তন ঘটতো সেটা এইমস না হওয়ায় সর্বস্তরেই এক গভীর আক্ষেপের সুর।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});