October 26, 2024

রাম নয় রামমোহন হয়ে উঠুক দেশের আদর্শ, নারীদের অহংকার।

1 min read

রাম নয় রামমোহন হয়ে উঠুক দেশের আদর্শ, নারীদের অহংকার।

জয়ন্ত বোস,কালিয়াগঞ্জ।ভারতে ধর্মের পটভূমিতে দীর্ঘ দিনের মতবিরোধ শেষ পর্যন্ত মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার পরে রাম মন্দির শিলান্যাস পর্ব ঘটা করে উদযাপিত হলো উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় রাম জন্মভুমিতে। সমগ্র দেশসহ পৃথিবীর মানুষ সাক্ষী হয়ে রইলেন ৫ আগষ্ট ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী রুপোর ইট দিয়ে পূজা পার্বনে আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে শিলান্যাস করলেন রাম মন্দিরের।

আইনী বিচার ব্যবস্থার তত্ত্বাবধানের পূর্বে রাম মন্দির ও বাবরি মসজিদ এই দুই ধর্মিয় সত্ত্বার পারস্পরিক কলহে ভারতের ধর্মিয় করণ থেকে শুরু করে সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট দীর্ঘদিন ধরে উতপ্ত হয়ে উঠেছিল। সেই উত্তাপের রেশ মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষনায় যে জবনীকা এবং যে পরিষ্কার চিত্র ফুটে উঠলো রাম জন্ম ভুমিতেই রামের তথাকথিত মন্দিরের উপরেই বাবরের স্মৃতিসৌধ হিসেবে বাবরি মসজিদ গড়ে উঠেছিল।

সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষনায় প্রমানিত হয়েছে আদতে সেখানে রাম মন্দির ছিল এবং পরবর্তীতে বাবর সেখানে বাবরি মসজিদ গড়ে তুলেছিলেন। সমস্যা শেষ। প্রস্তুতি তুঙ্গে দেশ জুড়ে ঘটা করে রাম মন্দির শিলান্যাস এবং রাম জন্মভুমি তে বিশালাকৃতির রাম মন্দির স্থাপনের তোড়জোড়। চারিদিকে ” জয় শ্রীরাম ” ধ্বনিতে মুখরিত আকাশ বাতাস, ঘড়ে ঘড়ে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি মেয়েদের মায়েদের এমনকি রাজনৈতিক আদর্শে মন্ত্রমুগ্ধ বিজেপি দলের অফিসেও ধুমধাম মহাসমারোহ।

বিশ্বের সকল দেশের সাথে দেশের জনগন দেখলো ৫ আগষ্ট টেলিভিশনের পর্দায় রাম বলতে ভগবান রাম কিভাবে সমাদৃত হচ্ছেন বিশেষ করে রাজনৈতিক প্লাটফর্ম এ। বর্তমানের যুগে এই মুহূর্তে ধর্ম কে নিয়ে বেশী মাখামাখি দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক প্লাটফর্মে। ধর্মের অদৃশ্য সুরসুরি তুলে রাজনৈতিক প্লাটফর্ম গুলো তাদের ভোট ব্যাঙ্ক কে নিজেদের বাক্সবন্দী করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। এমনি এক দৃশ্য বর্তমানে রাম মন্দির শিলান্যাস পর্ব কে ঘিরে। ধর্ম থাক না ধর্মের ধ্বজায় কিন্তু এ কোন ধর্ম যেখানে ভগবান রাম কে নিয়ে উদ্বেলিত সরকার থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ এবং রাজনৈতিক প্লাটফর্ম। এই ধর্মই কি মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে? আজ যেখানে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ছোবল এবং আতঙ্ক সাধারণ মানুষের রুটি রোজগার অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে সেখানে রাম, জয়শ্রী রাম নিয়ে দেশ জুড়ে মাতোয়ারা কিসের স্বার্থে ? রাম কে সামনে রেখে লক্ষণ কে সাথে নিয়েই হনুমান বানর প্রজাতি লঙ্কায় প্রবেশ করে সীতাকে উদ্ধার এবং রাবন কে মেরে ফেলা হয়েছিল ঠিক কিন্তু এখানে রাম কে সামনে রেখে কিসের অভিযান তার সদুত্তর মেলা ভার। তবে উত্তর আছে ভগবান রাম , এই ভগবানের জন্যই তো এত কিছু করা। তাহলে ভগবান রাম কি দেশের, জাতির আদর্শ। পূরানে পড়া এই ভগবান রাম যে কিনা নিজের স্ত্রী সীতার সতীত্ব প্রমানের জন্য আগুনে ঝাঁপ দিতে বলেছিল, লব-কুশ এর পিতা হয়েও সীতার মাতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। আজকের সমাজে আইনী ব্যবস্থায় হয়তো এই ভগবান রামের মতো এমন কার্যকলাপ বিশিষ্ট সাধারণ নাগরিক কে আই,পি,সি ধারায় হত্যার ষড়যন্ত্রে জেল খাটতে হতো। যে নিজের স্ত্রীর উপর বিশ্বাস রাখতে না পেরে দুই দুই বার যাচাই করতে আগুনে ঝাঁপ দিতে বলেন তার নিজের স্ত্রী কে সেই রাম ভগবান হয়ে পূজিত হোন ভারতের নারীদের কাছে, জনগনের কাছে, রাজনৈতিক প্লাটফর্মে । আর অগনিত নারীদের যিনি আগুনের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন এমনকি এক কুপ্রথাকে সমাজ থেকে উৎখাত করে বর্তমানে নারীদের বাঁচবার রাস্তা করে দিয়েছেন সেই রাম মানে রাজা রামমোহন রায় সকল নারীদের কাছে, সর্বস্তরে, দেশের এমনকি সরকারের আদর্শ হতে পারে না ? অবশ্যই রামমোহন কে আদর্শ মনে করে ভগবানের স্থানে বসানো উচিত ভারতের নারীদের, সমাজের, সরকারের। ধর্মের বাতাবরণে যদি এই সভ্যতার ইতিহাসে ইতিহাস রচিত হয় তবে একটি উন্নয়নশীল দেশের তকমা কিসের উপর ভিত্তি করে এগোতে থাকে এই প্রশ্ন হাজারো মানুষের, খেটে খাওয়া জনগনের, করোনা সংক্রমণের আতঙ্কে রোজগার বিহীন গৃহবন্দী সাধারণ মানুষের। আজকের এই প্রতিবেদনের কথা কোনো বিদ্বেষ প্রকাশনার জন্য নয়, একমাত্র আলোচ্য বিষয়ে তুলে ধরা হলো রাম নয়, রামমোহন হয়ে উঠুক দেশের আদর্শ, নারীদের অহংকার। জয়শ্রী রামমোহন যিনি অগনিত স্ত্রী দের আগুনের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন তিনিই তো পরিবারের, দেশের, সমাজের, সরকারের এমনকি রাজনৈতিক প্লাটফর্মের আদর্শ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *