December 27, 2024

নারী দিবসে মধ্যযুগীয় নিদান

1 min read
বিশ্বজিৎ মন্ডল , মালদা, নারী দিবসে মধ্যযুগীয় নিদান, ডাইনি অপবাদে গ্রামের আদিবাসী মহিলাদের ধর্মীয় স্থানে ঢুকে পূজা অর্চনায় বাধা। মালদার গাজোল ব্লকের পাণ্ডুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বগলাটুলি গ্রাম এলাকার ঘটনা রীতিমতো উত্তেজনা। প্রশাসনের শান্তি বৈঠকের পরও স্বাভাবিক হয়নি চিত্র। কার্যত মালদা সদর শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারেই আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম বগলাটুলি। এই গ্রামেই দীর্ঘ দিনের ধর্মীয় স্থান জাহের থানকে ঘিরেই বিবাদ।
গ্রামের প্রায় ৬০ টি আদিবাসী পরিবার দীর্ঘদিন ধরেই এই ধর্মীয় স্থানে তাদের পূজা অর্চনা এবং প্রার্থনার কাজ করে আসছেন। আর এই কাজ করতেন মুলত গ্রামের পুরুষরাই। মহিলারা ছিলেন ব্রাত্য। তাই পূর্বপুরুষদের প্রথা মেনেই এখনও এই স্থানে পূজা করতে যেতে দেওয়া হচ্ছে না মহিলাদের। আর এই মধ্যযুগীয় নিদান ঘিরেই ছড়িয়েছে উত্তেজনা। গ্রামের মোড়ল ও অন্যান্য সদস্যদের মুখের বক্তব্য ‘মহিলারা এই ধর্মীয় স্থানে পূজা করতে দেওয়া যাবে না’।এই ধর্মীয় স্থানে গ্রামের মহিলাদের যে কেবল মাত্র ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না তাই নয়, এক্ষেত্রে পূজা করতে গিয়ে কোনো মহিলা গেলে তাকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে গ্রামে একঘরে করে রাখার চেষ্টাও চলছে। গ্রামের মোড়লদের বক্তব্য মহিলারা এই ধর্মীয় স্থানে যাওয়ার কারণেই গ্রামের ক্ষতি হচ্ছে। মরক লাগছে, মারা যাচ্ছে পশু-পাখি, ক্ষতি হচ্ছে মানুষ জনেরও। তাই পূর্বপুরুষের পরম্পরায় মহিলারা পূজা করতে পারবেন বলে সাফ বক্তব্য তাদের।দীর্ঘদিন ধরেই অশিক্ষা আর কুসংস্কারের অন্ধকারে থাকা এই গ্রামের শিক্ষিত মানুষ এবং মহিলারা এই মধ্যযুগীয় নিদানের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছেন। মহিলা দিবসে এদের দাবি ‘সমান অধিকারের। পুরুষদের পাশাপাশি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মহিলারাও সমানভাবে চলার অধিকারের’।নারী দিবসে এ ধরনের মধ্যযুগীয় নিদান নিয়ে রীতিমত অস্বস্তিতে পরেছে জেলা প্রশাসন। দফায় দফায় পুলিশ এবং প্রশাসনের উদ্যোগে চলছে গ্রামে শান্তি বৈঠকও। কিন্তু এখনও বেড়িয়ে আসেনি কোন সমাধান সূত্র। আর এখানেই উঠতে শুরু হয়েছে প্রশ্ন। “স্বাধীনতার এত বছর পরও যদি মহিলাদের কেবল মাত্র মন্দিরে গিয়ে নিজেদের পূজা অর্চনা আর প্রার্থনার দাবিতে লড়াই করতে হয় তাহলে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে, এত আড়ম্বর আর আয়োজনের মাধ্যমে ঘটা করে নারী দিবস পালনের যৌক্তিকতা থাকে কি? এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছেন মালদার এই প্রত্যন্ত গ্রামের আদিবাসী মহিলারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও খবর..