মালদায় তিন তালাকের মতো মধ্যযুগীর বর্বর প্রথা বহাল তবিয়তে চলছে
1 min readবিশ্বজিৎ মন্ডল, মালদা : নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত ৷ সেই রায়ে দেশ জুড়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন মুসলিম মহিলারা ৷ তিন তালাকের মতো মধ্যযুগীর বর্বর প্রথার সমাপ্তিতে হাঁফ ছেড়েছেন সমাজবিদরাও ৷
কিন্তু এখনও সেই কুপ্রথা বহাল তবিয়তে চলছে প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে ৷ তার প্রমাণ মিলল মালদায় ৷ নিকাহের মাত্র ৯ মাস পর শওহরের তালাকনামা হাতে এসেছে বিবির ৷ তবে ১৯ বছরের বিবি তাতে দমে যাননি ৷ তিনি দ্বারস্থ হচ্ছেন আইনের ৷ঘটনাটি ঘটেছে ইংরেজবাজার থানার সাটটারি গ্রামে ৷ যুবতির নাম আফসানা বিবি ৷ বাবা নুর কালাম মোমিন পেশায় শ্রমিক ৷ ভিনরাজ্যেও কাজে যান তিনি ৷ মা নাগিনা বিবি গৃহবধূ ৷ তাঁদের তিন ছেলে, দুই মেয়ের মধ্যে আফসানা বড়ো মেয়ে ৷ ২০১৭ সালের ৬ জুলাই দেখাশোনা করেই মুসলিম শরিয়ত আইন অনুযায়ী আফসানার নিকাহ্ হয়েছিল একই গ্রামের ওহেদুল মোমিনের সঙ্গে ৷ ওহেদুলও পেশায় ভিনরাজ্যের শ্রমিক ৷
আফসানার অভিযোগ, নিকাহের পর তিনি প্রথামাফিক স্বামীর ঘরে যান ৷ ওহেদুলের সঙ্গে সংসার করতে শুরু করেন ৷ কিন্তু কয়েকদিন পর থেকেই নানা আছিলায় তাঁর উপর অত্যাচার চালাতে শুরু করে ওহেদুল ও তার বাড়ির লোকজন ৷ তারা তাঁকে বাবার বাড়ি থেকে পণ আনার চাপ দিচ্ছিল ৷ তাদের দাবি না মানায় তারা তাঁকে শারীরিক অত্যাচারও করে ৷ কিন্তু তবুও তিনি শওহরের ঘর ছাড়েননি ৷ শেষ পর্যন্ত তাঁকে তিন তালাক দেয় ওহেদুল ৷ পরদিন সে তিন তালাকনামাও তাঁর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয় ৷ বাধ্য হয়ে তিনি বাবার বাড়িতে চলে আসেন ৷ তবে তিনি হাল ছাড়েননি ৷ তিনি এই তালাক মানতে রাজি নন ৷ তিনি শওহরের সঙ্গে ঘর করতে চান ৷ তাই তিনি গোটা ঘটনা নিয়ে জেলা আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন ৷
আফসানার আইনজীবী সুদীপ্ত গঙ্গ্যোপাধ্যায় এপ্রসঙ্গে বলেন, তাঁর মক্কেল আফসানা বিবির অভিযোগ, নিকাহের পর থেকেই তাঁর শওহর ও তার বাড়ির লোকজন তাঁর উপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালাত ৷ তারা তাঁকে বাবার বাড়ি থেকে পণ আনার জন্য চাপ দিত ৷ পণ দিতে না পারায় ওহেদুল তার বিবিকে তিন তালাক দেয় এবং রেজিস্ট্রি করে একটি তালাকনামাও পাঠায় ৷ এটা সম্পূর্ণ অবৈধ ৷ সুপ্রিম কোর্ট এই প্রথাকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে ৷ তালাকনামা পাওয়ার পরেও আফসানা শওহরের ঘর ছাড়তে রাজি হননি ৷ শেষ পর্যন্ত ওহেদুল ও তার বাড়ির লোকজন তাঁকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয় ৷ কিন্তু আফসানা শওহরের সঙ্গে ঘর করতে চান ৷ সেকারণেই তিনি তাঁর দ্বারস্থ হয়েছেন ৷ তিনি আফসানাকে প্রথমে গোটা ঘটনা জানিয়ে ইংরেজবাজার মহিলা থানায় ওহেদুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার পরামর্শ দিয়েছেন ৷ এদিন নুর কালাম মোমিন জানান, আইনজীবীর পরামর্শে গতকাল রাতে এই ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে মেয়েকে নিয়ে তিনি ইংরেজবাজার মহিলা থানায় যান ৷ কিন্তু সেখানকার পুলিশ তাঁদের অভিযোগপত্র গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন ৷ তাই এদিন তিনি জেলা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৷ তাঁরা এই ঘটনার শেষ দেখে ছাড়বেন ৷