পন্ডিত ঈশ্বররচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১৯৮ তম জন্মজয়ন্তী পালন করা হল কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে
1 min read
ফারুক আহমেদ–কল্যাণী--বুধবার কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীর বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও প্রাক্তন ডিন ডঃ গৌতম পালের উদ্যোগে পন্ডিত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের১৯৮তম জন্ম জয়ন্তী মহাসমারোহে পালন করা হল।উপস্থিত ছিলেন ছাত্র-ছাত্রী, অধ্যাপক, অধ্যাপিকা ও শিক্ষাকর্মীবৃন্দের মধ্যে অনেকেই।ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (২৬সেপ্টেম্বর ১৮২০ তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান ২৯ জুলাই ১৮৯১) উনবিংশ শতকের একজন বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার। তাঁর প্রকৃত নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। সংস্কৃতভাষা ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য প্রথম জীবনেই তিনি বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন।সংস্কৃতছাড়াও বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বিশেষ বুৎপত্তি ছিল তাঁর। তিনিই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ করে তোলেন ও অপরবোধ্য করে তোলেন।
বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার তিনিই। তাঁকে বাংলা গদ্যের প্রথম শিল্পি বলে অভিহিত করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি রচনা করেছেন জনপ্রিয়শিশুপাঠ্য বর্ণপরিচয় সহ, একাধিক পাঠ্যপুস্তক, সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থ। সংস্কৃত, হিন্দি ও ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন সাহিত্য ও জ্ঞানবিজ্ঞান সংক্রান্ত বহু রচনা।কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালের অধ্যাপক ড. গৌতম পালকে ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেস সম্মানিত করল সম্প্রতি। ইম্ফলে মণিপুর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৫ তম বিজ্ঞান অধিবেশনে ১৬ মার্চ, ২০১৮ “রাজকৃষ্টো দত্ত মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড ২০১৭-২০১৮” দিয়ে সম্মানিত করা হয়। অধ্যাপক গৌতম পাল যে সম্মাননা পেয়েছিলেন তা কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে একটি বিরল সম্মান এনে দিয়েছিল। আমাদের রাজ্যেরও সম্মান এনে দিয়েছিলেন তিনি।
অধ্যাপক ড. গৌতম পাল বর্তমানে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীরবিদ্যা বিভাগের বরিষ্ঠ শিক্ষক এবং বিজ্ঞান অনুষদের প্রাক্তন ডিন। তিনি একজন অসাধারণ শিক্ষক এবং বিজ্ঞানী।শিক্ষক, বিজ্ঞানী ও লেখক হিসেবে তাঁর খ্যাতি রয়েছে গোটা বিশ্বব্যাপী। দীর্ঘ ২৯ বছর তিনি কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষণ এবং গবেষণার সঙ্গে যুক্ত। তাঁর অধীনে বহু স্নাতকোত্তর এবং পি. এইচ. ডি. স্তরের ছাত্র-ছাত্রীরা গবেষণা করে ভারতবর্ষ এবং বিদেশের কলেজে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মানজনক পদে আসীন হয়েছেন। সেই সঙ্গে সমান্তরালভাবে সাফল্যের সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর গবেষণার কাজ ও লেখালিখি।তাঁর স্নেহধন্য অনেক ছাত্র এবং গবেষক সারা ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় আজ সাফল্যের সঙ্গে কৃতিত্বের ছাপ রাখেছেন প্রতিনিয়ত। তাঁর প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধের সংখ্যা প্রায় ১১৬ টি এবং তিনি বিজ্ঞানের উপর বই লিখেছেন ৯ টি।
পরিবেশ বিজ্ঞানের পাঠক্রম তৈরি এবং পরিবেশ বিজ্ঞানের গবেষণায় সমগ্র ভারতবর্ষের নিরিখে তাঁর অবদান চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবে। তিনি বিজ্ঞান চর্চায় গ্রন্থ রচনা করে ভারতের পাশাপাশি গোটা ভুবনের বিভিন্ন প্রান্তে সুখ্যাতিপ্রাপ্ত ও জনপ্রিয় হয়েছেন। পরিবেশবিদ্যার উপর বাংলা ভাষায় রচিত তাঁর এক হাজার পৃষ্ঠার উপরের বইটি দীর্ঘ কুড়ি বছর যাবৎ বহু পাঠক, ছাত্র-ছাত্রী গবেষকদের সুখপাঠ্য হিসাবে বিবেচিত রয়েছে। আর্সেনিকের উপর তিনি গভীর অধ্যায়ন ও গবেষণা করেছেন। আর্সেনিক দূষণ নিয়ে তিনি যুগন্তকারী গবেষণা করেছেন। আর্সেনিক দূষণ উপর গবেষণা করে তিনি ডিএসসি উপাধি লাভ করেন। সারা ভারতে তিনিই একমাত্র কর্মরত ফিজিওলজির অধ্যাপক যার পিএইচডি ও ডিএসসি রয়েছে। এছাড়াও বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণে বিভিন্ন প্রাদেশিক দৈনিক খবরের কাগজ, ম্যাগাজিন এবং পত্র-পত্রিকায় তাঁর প্রকাশিত নিয়মিত বিজ্ঞানের বিষয়ে উপর লেখা প্রবন্ধাবলী ভীষণভাবে জনপ্রিয় এবং গবেষণালব্ধ প্রবন্ধগুলি বিশেষ সাড়াও ফেলেছে পাঠক দরবারে।বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ড. পালের বিশেষ অবদানের জন্য ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেস অধ্যাপক পালকে বিশেষ সম্মানে সম্মানিত করেছিল। এই অসাধারণ কৃতিত্ব আমাদের প্রাণিত করেছিল। বলছিলেন “উদার আকাশ” রিসার্চ জার্নাল এর সম্পাদক এবং কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়েরর দূরশিক্ষার সহ অধিকর্তা ফারুক আহমেদ। তিনি জানান, পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি ভারতের বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাসে বাংলার মুখ উজ্জল করেছেন ড. পাল। তাঁকে এই বিশেষ সম্মানে সসম্মানিত করার জন্য আমরা গর্বিত।
ড. গৌতম পাল আগেও দেশে ও বিদেশে বহু সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।তিনি তাঁর মূল্যবান কাজের জন্য সম্মানিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। আমাদের পক্ষ থেকে তঁকে অফুরন্ত কুর্নিশ। তিনি কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে কাজে যুক্ত আছেন সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উজ্জ্বল করছেন এবং কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ছড়িয়ে দিচ্ছেন গোটা বিশ্বে। আমরা সত্যি আজ খুবই আনন্দিত তাঁকে সম্মানিত করায়।