রায়গঞ্জে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের কবি সাহিত্যিকদের জমজমাট আসর-
1 min read
তপন চক্রবর্তী-উত্তর দিনাজপুর ঃ– আনন্দময়ীর আগমনের আনন্দবার্তা বাঙালির অন্যতম অঙ্গ বাংলার ছোট পত্রিকার শারদসংকলন। আর সেই ক্ষুদ্র পত্র পত্রিকার আতুর ঘর রায়গঞ্জ শহর একথা নিশ্চিতভাবেই আমরা জেনে আসছি। আনন্দময়ীর আগমনে শরৎ চলে এসেছে।
অথচ কবির শহর রায়গঞ্জ থেকে শারদ সাহিত্যসম্ভার আত্মপ্রকাশ করবে না, এমনটা হতেই পারে না। তাইতো শনিবার সন্ধ্যায় একই মঞ্চে উন্মোচিত হল দুটি পত্রিকার শারদ সংখ্যা। এই দিনের অনুষ্ঠানটি রায়গঞ্জ শহরের সাহিত্য রসিকদের কাছে একটা স্মরণীয় দিন হিসাবেই নয় সাহিত্য রসিকদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা।এদিনের অনুষ্ঠানে একটি কোলকাতার সাহিত্য সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক “নব সাহিত্য কমল”।
অন্যটি রায়গঞ্জের সাহিত্য সংস্কৃতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক “চয়ন”। এই পত্রিকা প্রকাশ উপলক্ষ্যে আয়োজিত হয় উত্তর ও দক্ষিণ বাংলার সাহিত্য আসর। কোলকাতা, শিলিগুড়ি, রায়গঞ্জ, টুঙ্গিদিঘী, করণদিঘী ইত্যাদি স্থান থেকে এসেছিলেন বহু কবি- সাহিত্যিক। এ যেন শারদীয়ার প্রাক্কালে বাংলার কবি- সাহিত্যিকদের মিলন মেলার স্বার্থক রূপ পেয়েছিল রায়গঞ্জ শহরকে কেন্দ্র করে।পশ্চিম দিনাজপুর চেম্বার অফ কমার্সের আলোচনাকক্ষে আয়োজিত এই আনন্দঘন অনুষ্ঠানে সভাপতি ও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে মানবতাবাদী কবি কমল দে শিকদার ও পশ্চিমবঙ্গের আকাশে বাতাসে বীরভূম বাঁকুড়ার লাল মাটির বিখ্যাত লোকসঙ্গী “হাই দ্যাখো গ’ তুই ইখানে কেনে, লাল পাহাড়ির দ্যাশে যারাঙা মাটির দ্যাশে যাহেথাকে তুকে মানাইছে নাই গ’, ইক্কেবারেই মানাইছে নাই গ’”এই গানটির রচয়িতা স্বনামধন্য কবি অরুন কুমার চক্রবর্তী।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি শুভেন্দু মুখার্জী, বিশিষ্ঠ কবি গৌর মিত্র, নব সাহিত্য কমল পত্রিকার প্রধান সম্পাদক তাপস সাহা এবং কবি সুনীল চন্দ। কোলকাতার বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী মুকুল মুখার্জীর উদ্বোধনী সংগীত “বাজলো তোমার আলোর বেণু, মাতলো যে ভুবন-” এর মধ্য দিয়ে মায়ের আগমনী বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হল সুরের মুর্ছনায়। “নব সাহিত্য কমল পত্রিকা” র ৬ষ্ঠ বর্ষ শারদীয়া সংখ্যা,১৪২৫ উন্মোচন করেন কবি অরুন কুমার চক্রবর্তী সহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ। পত্রিকাটিতে প্রায় ১১০ টি কবিতা , ১টি অনুবাদ কবিতা,১০টি ছড়া,২টি অনুগল্প, ৯টি গল্প, ২টি প্রবন্ধ, ১টি ভ্রমণ কাহিনী এবং ১টি স্মৃতিচারণ স্থান পেয়েছে। পত্রিকার প্রধান সম্পাদক তাপস সাহা। শিল্পী অসীম কুমার বসু নিপুণ হাতে এঁকেছেন প্রচ্ছদ।
কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলার বিশেষ করে রায়গঞ্জের কবি সাহিত্যিকদের লেখায় সমৃদ্ধ হয়েছে এই সংখ্যা। একই মঞ্চে “ চয়ন” পত্রিকার ৪১ বর্ষ শারদ সংখ্যা ১৪২৫ প্রকাশ করেন বিশিষ্ট কবি কমল দে শিকদার ও অন্যান্য অতিথিবৃন্দ।চয়ন পত্রিকার এই সংখ্যায় স্থান পেয়েছে ২ টি প্রবন্ধ, ১ টি ধারাবাহিক, ৩টি গল্প , ৩৪টি কবিতা ও ১টি পুস্তক আলোচনা। স্বপন মল্লিকের প্রচ্ছদ ও সৌরেন চৌধুরী, অরুণ চক্রবর্তী এবং তপন রায়ের সম্পাদনায় পত্রিকাটিতে বাংলার বিভিন্ন স্থানের কবি- সাহিত্যিকের লেখা স্থান পেয়েছে।অনুষ্ঠানে অতিথিদের বক্তব্যে উঠে এল সাম্প্রতিক সময়ের সাহিত্যের হাল হকিকত।
ছোট পত্রিকার গুরুত্ব বিষয়ে তাঁরা আলোকপাত করেন। কবি কমল দে শিকদার জেলা, গ্রাম ও রাজধানীর সর্বস্তরের কবি সাহিত্যিকদের বেঁধে বেঁধে থাকার কথা বলেন।কবি,সাহিত্যিক ও বিখ্যাত লোক সঙ্গীতের গীতিকার অরুন কুমার চক্রবর্তী বলেন সাহিত্যিক ও কবিদের মাটির সাথে যোগাযোগ রাখা অত্যন্ত জরুরী।
কবি ও সাহিত্য রসিক সুকুমার বাড়ুই এক সাক্ষাৎকারে বলেন সাহিত্য নিয়ে লিখালিখি আমরা যারা করে থাকি আমরা আমাদের চারদেয়ালের মধ্যে থেকেই তা করে থাকি।কিন্তূ চার দেয়ালের বেষ্টনী ভেঙে আমার মনে হয় আমাদের কবিতা ও সাহিত্য কে আরো সমৃদ্ধ করার কারনে আমাদের বিভিন্ন জেলার সংস্কৃতির সাথে আরো বেশি বেশি করে মেলবন্ধন গড়ে তোলার প্রয়োজন রয়েছে।
এর ফলে আমরা আমরা বিভিন্ন জেলার সংস্কৃতির সাথে আমাদের পরিচয় ঘটবে তেমনি বিভিন্ন জেলার আর্থ সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে অবহিত হতে পারি বলে আমার মনে হয়। প্রায় ৫৫ জন কবি সাহিত্যিকদের স্বরচিত পরিবেশনা দেখলেন- শুনলেন দর্শকবৃন্দ। প্রবীণ ও নবীণ কবিদের এই মিলন মেলা আক্ষরিক অর্থেই হয়ে উঠেছিল তাৎপর্যপুর্ণ।
তাঁদের লেখনীতে ধরা দেয় প্রকৃতি,জীবন, সময় এবং সাম্প্রতিক সময়ের নানা ঘাত- প্রতিঘাত। এই অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন তপন রায় ও পিনাকি বোস। এই ধরনের যৌথ উদ্যোগের সাহিত্য অনুষ্ঠানের কথা দীর্ঘদিন মনে থাকবে বলে জানালেন এদিনের সাহিত্য আসরে উপস্থিত সাহিত্য রসিকগন।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});