October 26, 2024

'কারোর সর্বনাশ তো আবার কারোর পৌষ মাস

1 min read
বিশ্বজিৎ মন্ডল, মালদা : ‘কারোর সর্বনাশ তো আবার কারোর পৌষ মাস’চলতি ভাষার এই প্রবাদের হুবহু মিলেছে মালদায়।বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ চাষীদের আর্থিক অনুদানের কোটি কোটি টাকা লুঠের অভিযোগ । ক্ষতিগ্রস্থ চাষীদের সরকারি আর্থিক সাহায্য না দিয়ে অনুদান হাতিয়ে নিয়েছে সরকারি আমলা থেকে জমিহীন তৃণমূলীরা বলে অভিযোগ।জমি নেই,তাতে কি হয়েছে,মাথায় রয়েছে তৃণমূলের ছাতা আর সরকারি কর্মচারীর স্নেহধন্যতা।দরকার পড়বেই না কোনো নথিপত্র।বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য রাজ্য সরকারের আর্থিক সাহায্য পেয়েছেন জমিহীন তৃণমূল নেতা সহ তার আত্মীয়স্বজনেরা । আর এমন দুর্নীতিতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছেন সরকারী আধিকারিকেরাও ।
 সরকারি সাহায্যে এমন দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছে মালদা জেলার বামনগোলা ব্লক জুড়ে । পঞ্চায়েত   নির্বাচনের আগে সরকারি অনুদানের এই লুঠের ঘটনায় বিরোধীরা কটাক্ষের সুরে বলছে  সারদা , নারদা থেকেইতো শিক্ষা নিচ্ছে নিচুতলার তৃণমূল নেতারা । তবে ইতিমধ্যে ঘটনায় ব্লক প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে ক্ষতিগ্রস্থ চাষীরা ।এবছরের বন্যার করুন চিত্র দেখেছে মালদাবাসী।উত্তরবঙ্গের অন্যান্য জেলার সাথে মালদার গঙ্গা-ফুলাহার-মহানন্দার প্রকোপে থৈ থৈ ছিলো জেলার প্রতিটি ব্লক।ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো জেলার বিঘার পর বিঘা চাষের জমি।কেউ হারিয়েছিল ভিটে মাটি আবার কেউ আপনজন।এই অবস্থায় জেলা সফরে ছুটে এসেছিলেন রাজ্য প্রশাসনের প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।জাতীয় সড়ক হোক বা রাজ্য সড়ক সেই জল অতিক্রম করে পৌঁছে গেছিলেন বন্যার্তদের ত্রান শিবিরে।এমনকি নিজে মুখ্যমন্ত্রী বন্যার জলে নেমে ঘুরে দেখেছিলেন পরিস্থিতি।আশ্বাস দিয়েছিলেন পাশে থাকার ।
সেই মতোই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য ঘোষণা করেন সরকারি সাহায্যের।অন্যান্য জেলার সাথে মালদা জেলার প্রায় ২ লক্ষ ৩৭ হাজার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের আর্থিক সহায়তার জন্য প্রায় ১১১ কোটি টাকা বরাদ্দ করে রাজ্য সরকার।কৃষিমন্ত্রী মালদা শহরের কলেজ ময়দানে প্রতীকী সহায়তার চেক তুলে দেন।তারপর প্রতিটি ব্লক প্রশাসনের তরফ থেকে ব্লক অফিস প্রাঙ্গনে চলে চেক বিলির কর্মসূচি।জেলার একপ্রান্তে অবস্থিত আদিবাসী অধ্যুষিত বামনগোলা ব্লক।এই ব্লকের বন্যা দুর্গত কৃষকের জন্য প্রায় ৯ কোটি টাকা সরকারি অনুদান পাওয়ার কথা।আর এখানেই শুরু ঘাপলাবাজির খেলা।বন্যা দুর্গত কৃষকদের যে আর্থিক সাহায্য পাওয়ার কথা,সেই সাহায্য  পেয়েছে এলাকার তৃণমূল নেতা নেত্রী সহ তার আত্মীয়স্বজনেরা বলে অভিযোগ ।ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বদলে প্রচুর জমিহীন তৃণমূলীদের সরকারি সাহায্যের চেক পাইয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।সাথে কোনো কোনো ক্ষতিগ্রস্ত চাষী সাহায্য পেলেও তা অনেকটা সামান্য।এই সমস্তটার অভিযোগের কাঠগড়ায় বামনগোলা ব্লকের আসিস্টেন ডিরেক্টর অফ এগ্রিকালচার(ADA) সনাতন দাস। আর এমন দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় শোরগোল পড়েছে গোটা বামনগোলা ব্লক এলাকা জুড়ে।
এমন অভিযোগের সত্যতা জানতে ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের সাহায্য প্রাপকের তালিকা হাতে আসতেই বেরিয়ে পড়ে আসল সত্যতা । সরকারি নথিতে যাদের অনুদান পাওয়ার কথা উল্লেখ আছে আসলে ওই ব্যক্তিদের  নিজস্ব কোনো জমিই নেই ।তবুও সরকারি সাহায্যের তালিকায় নাম এবং হাজার হাজার টাকা সরকারি সাহায্যের অনুদান হাতিয়ে নিয়েছেন।স্থানীয় বাসিন্দা সহ বন্যা দুর্গত কৃষকদের অভিযোগ,”আসল ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা নয়,তৃণমূল নেতা নেত্রী সহ তাদের আত্মীয়স্বজনেরাই জমি না থাকা সত্তেও সাহায্য পেয়েছে।এই অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা সহ আমরা চাই দোষীদের শাস্থি হোক এবং নিজেদের প্রাপ্য সহায়তা সকল কৃষক পাক”।বামনগোলা ব্লকের চাঁদপুর , আদাডাঙ্গা , কাশিমপুর , বিস্তীর্ন গ্রামপঞ্চায়ত এলাকা জুড়ে এমন দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছে।চাঁদপুর অঞ্চল এলাকার শোনঘাট এলাকার বাসিন্দা পরিমল মন্ডল তিনি বামনগোলা পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী তৃণমূল সদস্য।তার দুই ছেলে জ্যোতিষ মন্ডল,মনোজ মন্ডল ও এক মেয়ে লিপিকা মন্ডল।পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী তৃণমূল সদস্য পরিমল মন্ডলের একই পরিবারে ছেলে মেয়ে মিলে পেয়েছেন চারটি আর্থিক সাহায্যের চেক।কিন্তু ছেলে মনোজ মন্ডলের নিজস্ব কোনো জমি নেই,তাই বন্যায় ক্ষতি হওয়ার কোনো আশঙ্কায় নেই।তাহলে কি করে সরকারি সাহায্যের চেক পেলো মনোজ মন্ডল ? এই প্রশ্নের উত্তরে দাদা জ্যোতিষ মন্ডল জানান,”ভাই মনোজের নামে কোনো জমি নেই।কিন্তু ADA অফিসে কাজ করে ছিলো ভাই প্রায় দুই মাস।তাই ADA সাহেব তাকে একটি ২২১০০ টাকার চেক তুলে দিয়েছেন”।এমনই চক্ষুচরক গাছ দুর্নীতি। সাথে মেয়ে লিপিকা মন্ডলের দীর্ঘ ৭ বৎসর পূর্বে বিবাহ হয়েছে।তার নামেও কোনো জমি নেই তাসত্বেও চেক দেওয়া হয়েছে তৃণমূল নেতার মেয়ে লিপিকাকে ।।একই মতো  নাম জড়িয়েছে এলাকার আরেক তৃণমূল নেতা বলে পরিচিত সুনীল বিশ্বাস এর।তার বাবা নিরঞ্জন বিশ্বাস ও ভাই অনিল বিশ্বাস, শিবশঙ্কর বিশ্বাস।এখানেও একই পরিবারের চার সদস্যই চেক পেয়েছেন।তার মধ্যে অনিল বিশ্বাসের নিজস্ব কোনো জমি নেই।যা জমি রয়েছে তা বাবা নিরঞ্জন বিশ্বাসের নামে রয়েছে।পসাপাসি নকুল বিশ্বাস,বিকাশ কাপালি এই সমস্ত ব্যক্তির নিজস্ব কোনো জমি নেই তবু হাজার হাজার টাকার চেক পেয়েছে বলে অভিযোগ। শুধু চাঁদপুরের শোনঘাট একলাই নয় গোটা বামনগোলা ব্লক জুড়েই হয়েছে এই দুর্নীতি । লুঠ হয়েছে বন্যাদুর্গতদের কোটি কোটি টাকা ।এমন দুর্নীতে অভিযুক্ত বামনগোলা ব্লকের আসিস্টেন ডিরেক্টর অফ এগ্রিকালচার(ADA) সনাতন দাস জানান, নিয়মনীতি মেনেই সমস্ত চেক বন্টন করা হয়েছে।সামান্য  কিছু ভুলভ্রান্তি হতে পারে”।বাকি অন্যান্য প্রশ্নের জবাবে শুধুই না না বলেই এড়িয়ে যান তিনি।এই প্রসঙ্গে বামনগোলা ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক জানান,”চেক বিলির সমস্তটাই হয়েছে ADA অফিস থেকে।প্রচুর মানুষ আমাদের কাছে এসেছেন এমন অভিযোগ নিয়ে ।সেই অভিযোগের পত্র জেলাস্তর আধিকারিকের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন সদর মহিকুমা শাসক(SDO)।তদন্ত শেষে বিষয়টি পরিষ্কার বলা সম্ভব হবে”। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ চাষীদের কাছে আদও কি পৌঁছাচ্ছে সরকারি অনুদান ? নাকি অনুদানের টাকা আত্মসাৎ করছে নিচুতলার বেশ কিছু তৃণমূল নেতা কর্মীরা ? পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এমনই অভিযোগকে ঘিরে রীতি মত চাঞ্চল্য ছড়িয়ে মালদার রাজনৈতিক মহলে  ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *