October 26, 2024

উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জের কুলিক পক্ষীনিবাসের মুকুটে নতুন পালক

1 min read

তন্ময়  চক্রবত্তী ঃ-  দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জের কুলিক পক্ষীনিবাসের মুকুটে নতুন পালক। এশিয়ার বৃহত্তম ওপেন বিল স্টর্ক কলোনির স্বীকৃতি পেয়েছে কুলিক।  শামুকখোল (ওপেন বিলস্টর্ক) পাখির সংখ্যার হিসাবে পৃথিবীর এক নম্বর স্থান দখল করল রায়গঞ্জের এই পক্ষীনিবাস। এই মুহূর্তে কুলিকে পাখির সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। যার মধ্যে ওপেনবিল স্টকের সংখ্যাই ৪৭ হাজার। সেই তথ্যের ভিত্তিতে এশিয়ার বৃহত্তম ওপেন বিল স্টর্ক কলোনি হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে লিমকা বুক অফ রেকর্ডসে। এর আগে কাম্বোডিয়া ছিল প্রথম স্থানে। তাকে পিছনে ফেলে কুলিক পক্ষীনিবাস উঠে এল প্রথম স্থানে। কিছুদিন আগেও এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম পক্ষীনিবাস ছিল কুলিক। রায়গঞ্জের কুলিক পক্ষী নিবাসে পরিযায়ী পাখির দল এবার আগেই আসতে শুরু করেছে । এখানে রেকর্ড সংখ্যক পরিযায়ী পাখি আসছে গত দু’বছর ধরে 


(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

। এরা এখানে আসতে শুরু করে সাধারণত জুন মাসের শুরু থেকে । তবে এবার মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই পরিযায়ী পাখিরা আসতে শুরু করেছে। বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সমস্ত প্রজাতির পাখি এখানে আসে তার মধ্যে এখন শুধু ইগ্রেট আসতে শুরু করেছে।গত বছর এখানে প্রায় ৯৭ হাজার পরিযায়ী পাখি এসেছিল।রায়গঞ্জ শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে সোহারই, ভট্টদিঘি ও আবদুলঘাটা এই তিন মৌজার প্রায় ৩৭০ একর জায়গা জুড়ে কুলিক পক্ষীনিবাস গড়ে উঠেছে। পক্ষীনিবাসের একদিকে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক আর অন্যদিকে তিরতির করে বয়ে চলা কুলিক নদী। উত্তর-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে এপ্রিল-মে নাগাদ পরিযায়ীরা (ওপেন বিল স্টর্ক, কর্মোন্যান্টাল ইগ্রেট, নাইট হেরন) এই পক্ষীনিবাসে আসে। বাসা তৈরি করে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে বাচ্চা বেরিয়ে উড়তে শেখার পর নভেম্বর নাগাদ পাখিগুলি পুরনো ঠিকানায় ফিরে যায়। ২০১১ সালে এই পক্ষীনিবাসে পাখির সংখ্য এক ধাক্কায় কমে অর্ধেক হয়ে গিয়েছিল। সমস্যার সমাধানে তৎকালীন ডিএফও অপূর্ব সেনের উদ্যোগে জুলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া থেকে পক্ষীবিশেষজ্ঞ গোপীনাথন মহেশ্বরণ কুলিকে এসে গবেষণা চালিয়ে পরিযায়ী পাখি কমে যাওয়ার কতগুলি কারণ উল্লেখ করে যান। তাঁর পরামর্শ মেনেই বন দফতর স্বল্প গভীরতার কয়েকটি নতুন জলাশয় খনন করে পাখিদের খাবারের সমস্যা মেটানোর ব্যবস্থা করে। পাশাপাশি পক্ষীনিবাস সংলগ্ন জাতীয় সড়কের অংশটুকুকে সাইলেন্স জোন ঘোষণা ও পাখিদের প্রজণনের মরশুমে পর্যটকদের আনাগোনাও নিষিদ্ধ করে দেয় এই পক্ষীনিবাস। পরিযায়ী পাখিদের নিরাপত্তা সুরক্ষিত করতে গোটা পক্ষীনিবাস লোহার জাল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। মহেশ্বরণের প্রেসক্রিপশন মেনে হাতনাতে ফল পেয়েছে বনদফতর। ২০১২ সাল থেকে কুলিকে পাখির সংখ্যা বাড়তে থাকে, বিশেষ করে শামুকখোল। ২০১২ সালে যে সংখ্যাছিল ৩৯,৮৩৬টি, ২০১৫য় এসে সেই সংখ্যা দাঁড়াল ৪৭,১৮০তে।গত বছর এখানে প্রায় ৯৭ হাজার পরিযায়ী পাখি এসেছিল। এছারা পক্ষীনিবাসএরভিতরেএকটি পাখিরালয়ের কাজ শেষ হয়েছে। সেখানে ককটেল, বদ্রি, টার্কি সহ আরও অন্যন্য প্রজাতির পাখি রাখা হয়েছে। বনদপ্তরের আশা, এবারেও এখানে প্রচুর পরিযায়ী পাখি আসবে। সেই সঙ্গে পর্যটকদের সমাগমও ভালোই হবে। পাশাপাশি কুলিক পক্ষী নিবাসের ভিতরে বেশ কিছু এলাকা জুড়ে গাছ লাগানো হয়েছে। এই সব পাখিরা বড় বড় গাছের উপরে বাসা বেঁধে থাকে। এগুলি দেখার জন্য ওয়াচ টাওয়ারগুলিকে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে ।



(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

রায়গঞ্জ বন বিভাগের ডিএফও দ্বিপর্ণ দত্ত বলেন, কুলিক পক্ষী নিবাসে পরিযায়ী পাখি আসতে শুরু করেছে। আমরা তাদের জন্য আগে থেকেই গাছ লাগানো, পক্ষী নিবাসের ভিতরের জলাশয়ে মাছ, শামুক ছাড়ার কাজ শুরু করেছি।এবারে পর্যটকরা এখানে এলে পাখি দেখার পাশাপাশি কুলিক পক্ষী নিবাসের ভিতরে পাখিরালয়, কচ্ছপ উদ্ধার কেন্দ্র সহ আরও অন্যান্য জিনিস দেখতে পাবেন। রায়গঞ্জ শহর লাগোয়া কুলিক নদীর ধারে ১৩০ হেক্টর এলাকাজুড়ে কুলিক পক্ষী নিবাস পড়ে উঠেছে। এখানে প্রতি বছর জুন মাসের শুরুতেই ইগ্রেট, নাইট হেরন, ওপেন বিল স্টর্ক, কর্মোরেন্ট প্রভৃতি প্রজাতির পাখি আসে। দক্ষিণ ভারত, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম প্রভৃতি জায়গা থেকেও এখানে পাখিরা আসে। তারা এখানে এসে বাসা বাঁধে, ডিম পাড়ে, বাচ্চা বড় করে তারপর সেপ্টেম্বরঅক্টোবর মাস নাগাদ উড়ে যায়। মূলত ওপেন বিল স্টর্ক প্রজাতির বিশাল আবাসের জন্যেই কুলিক পক্ষী নিবাস বিখ্যাত।

 


(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

মূলত অনুকূল জলবায়ু এবং প্রজননের উপযুক্ত স্থান বলে বহু পরিযায়ী পাখিও আসে রায়গঞ্জের এই কুলিক বনাঞ্চলে৷ তাছাড়া কুলিক নদী, এবং আশপাশের ঝিল, বিল, খালে পাখিদের আহারের জন্য রয়েছে প্রচুর জলজ প্রাণী৷ নিরিবিলি, নিরাপদ আশ্রয়ের টানে ফি-বছর উড়ে আসা পরিযায়ীদের খাবারের জন্য ঝিল, বিল, নদী-খাল রয়েছে৷ জল শুকিয়ে গেলে বনাঞ্চলের জলাশয়ে পাম্পের সাহায্যে জল সরবরাহ করা হয়৷ অল্প জলে ভেজা মাটির উপর ছোট ঘাসজঙ্গলে ও ধান খেতে ধীরে ধীরে হেঁটে খাবার সন্ধান করে এসব পাখি৷ তাই ঝিল, বিল, খালে মাছ ছাড়া হয় প্রতি বছর৷এই পক্ষীনিবাস শুধু উত্তর দিনাজপুর নয়, সমগ্র উত্তরবঙ্গের গর্ব। এর ফলে কুলিক পক্ষীনিবাসকে ঘিরে পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটবে এখানে’।


(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *