December 26, 2024

‘মানুষকে যারা ভালবাসেনা, তাদের ছুড়ে ফেলতে আমার এক সেকেন্ডও লাগবে না’, বিস্ফোরক মমতা

1 min read

‘মানুষকে যারা ভালবাসেনা, তাদের ছুড়ে ফেলতে আমার এক সেকেন্ডও লাগবে না’, বিস্ফোরক মমতা

পুরসভার কাজে তীব্র অসন্তোষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। স্থানীয় স্তরে যে সব অভিযোগ বিরোধীদের মুখে শোনা যায়, আজ সেগুলোই শোনা গেল খোদ মুখ্যমন্ত্রীর মুখে। কাউন্সিলর, পুরমন্ত্রীকে সামনে বসিয়ে একের পর এক তোপ দাগলেন মমতা। একেবারে রণংদোহী মেজাজে দেখা গেল মমতাকে। জমি দখল, বেআইনি নির্মাণ, টেন্ডারের নামে টাকা খাওয়া, পার্কিং-এর নামে তোলাবাজির মতো অভিযোগ শোনা গেল তাঁর মুখে।সোমবার রাজ্যের প্রায় সব পুরসভার পুরপিতাদের নিয়ে নবান্নে বৈঠকে বসেন মমতা। উপস্থিত ছিলেন একাধিক মন্ত্রী।

 

মমতা কী কী বললেন একনজরে

  1. ‘পুরসভা রাখার দরকার কী’-বৈঠকের শুরুতেই মমতা বলেন, “আমার কথা কিছুটা তিক্ত হলেও মনে রাখবেন পুরসভা কিন্তু মানুষকে পরিষেবা দেয়। আমি বেশ কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করছি, কোথাও যখন দখলদারি চলছে, তখনও কোনও অ্য়াকশন নেওয়া হচ্ছে না। কেউ টাকা খাওয়াচ্ছে, কেউ টাকা খাচ্ছে। কিন্তু তারা ভুলে গিয়েছে রাজ্যের আইডেন্টিটিটা এটাতে নষ্ট হচ্ছে। মানুষ যদি উন্নয়নের কাজ না পায় তাহলে সেই পুরসভা বা পঞ্চায়েত রাখার দরকার কী!”
  2. ‘বাংলার আইডেন্টিটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, আপনাদের টাকা নেওয়ার জন্য’– বেআইনি নির্মাণের জেরে হাওড়ায় অ্যাম্বুল্যান্স ঢোকার জায়গা হয় না। এমনটাই বললেন মমতা। তিনি বলেন, “হাওড়ায় প্রচুর বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে। রথীন যখন চেয়ারম্যান ছিল, হাওড়াটাকে ১২টা বাজিয়ে দিয়ে গিয়েছে। অ্যাম্বুল্যান্স যাওয়ার জায়গা নেই। নো অ্যাকশন। কারণ প্ল্যান পাশ করার জন্য মানুষকে অনেক হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। অনলাইনে ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল। তাতেও কাজ হয়নি। আমি চাইনা কাউকে হেনস্থা হতে হোক। কিন্তু একটা গ্রুপ তৈরি হয়েছে। খালি জায়গা দেখলেই লোক বসিয়ে দিচ্ছে। বাংলার আইডেন্টিটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, আপনাদের টাকা নেওয়ার জন্য, কেন বুঝতে পারছেন না? জমি পাচ্ছেন বেচে দিচ্ছেন। খুব খারাপ পারফরম্যান্স, কেন তৈরি করা হয়েছিল আমি জানি না।”
  3. ‘কে খাচ্ছেন না জানি না, নিশ্চয় দিয়েই খাচ্ছেন’- টেন্ডার নিয়েও চলছে দুর্নীতি! খোদ মমতার মুখেই এমন অভিযোগ। বললেন, “বালির এসডিও অমৃতা কী করছেন, কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। নিজেরা টেন্ডার দিচ্ছেন, কার থেকে কতটা খাচ্ছেন জানি না। কে খাচ্ছেন, কে খাচ্ছেন না জানি না। নিশ্চয় দিয়েই খাচ্ছেন। আমি এই কথাগুলো বলার জন্য মোটেই খুশি নেই, আমি দুঃখিত।”
  4. ‘একটা ঢাকনা করলেও খুলে বিক্রি করে দিচ্ছেন’ – পুরসভাগুলির পরিষেবা নিয়ে প্রবল ক্ষোভ মমতার। তিনি উল্লেখ করেন, কোথাও কোথায়ও আলো জ্বলতেই থাকে, কোথাও জল বন্ধ করা হয় না। রাস্তা সারানো হয় না। তিনি বলেন, ‘একটা ঢাকনা করলেও কেউ খুলে বিক্রি করে দিচ্ছেন।’
  5. ‘আমার বাড়ি থেকে শুরু করুন’– বেআইনি নির্মাণ নিয়ে সরব মমতা। বলেন, “হাতিবাগান, গড়িয়াহাটের অবস্থা খারাপ। ওয়েবেলের কাছে দেখলাম কত দোকান বসেছে, সবাই আউটসাইডার। নোংরা করে রেখে দিয়েছে। কেন নতুন একটা জোন করা হচ্ছে না? বেআইনিভাবে চারতলা-পাঁচ তলা তোলা হচ্ছে, কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না। দুএকজনকে গ্রেফতার করুন, দু-একটা নির্মাণ ভাঙুন। আমার বাড়ি থেকে শুরু করুন। কেন বেআইনি কোনও জিনিস আমরা মানব।”
  6. ‘আইসি হলে ইনকাম করে নেবেন, এসব আর করবেন না’– প্রশাসনিক কর্তাদের কড়া বার্তা মমতার। মুখ্য়মন্ত্রী বলেন, ‘কারও কারও অভ্যাস হয়ে গিয়েছে, আইসি হলে যতটা পারি ইনকাম করে নিই, এসডিও হলে একটা সঞ্চয় করে নিই, ডিএ হলে সঞ্চয় করে নেব- এগুলো অনেক হয়েছে, আর করবেন না প্লিজ, এবার বড্ড চোখে লাগছে।’
  7. ‘সুজিত বসু লোক বসাচ্ছেন কম্পিটিশন করে-হোয়াই হোয়াই…’- সল্টলেক-রাজার হাট চত্বর নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ মমতার। নাম নিলেন মন্ত্রী সুজিত বসুর। বললেন, “সল্টলেক দেখে আমার লজ্জা লাগছে। বেআইনি দখল বাড়ছে। ইচ্ছামতো সুজিত বসু লোক বসাচ্ছেন কম্পিটিশন করে। কেন বাইরের লোক বসাবেন। ছবি দেখালে নিজেরা লজ্জা পাবেন। সবাই ত্রিপল লাগিয়ে বসে পড়ছেন, কেন কেন কেন… আমি জানতে চাই। কত টাকার বিনিময়ে এসব হচ্ছে, কারা নিয়েছে টাকা। সল্টলেকের কাউন্সিলররা কেন কাজ করে না? রাস্তা ঝাঁট দেয় না। এবার কি আমাকে রাস্তা ঝাঁট দিতে হবে?”
  8. টেন্ডার নিয়ে কড়া মমতা- মমতা স্পষ্ট বলেন, ‘আজ থেকে লোকালি কোনও টেন্ডার করতে দেব না, সব কেন্দ্রীয়ভাবে হবে। এর জন্য আমি কমিটি তৈরি করে দিচ্ছে। কমিটিতে থাকবেন- মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, অর্থ সচিব, সেচ দফতরের সচিব, সিপি, ডিজি, এডিজি আইন-শৃঙ্খলা।’
  9. উন্নয়ন পর্ষদগুলিতে কী কাজ হয় প্রশ্ন মমতার। “আর্বান ডিপার্টমেন্টের সেক্রেটারি… কী কাজ তাঁর! কতকগুলো বোর্ড রেখে দিয়েছে। দফতরটা রাখার দরকার কী। ৪০০-৫০০ লোক রেখেছে। দিঘা উন্নয়ন অথরিটির আর কোনও প্রয়োজন আছে কি? বিরাট বাড়িতে ৪০০-৫০০ লোক, কারও গা টিপছে, কারও পা টিপছে। আরাম করছে। তাঁদের যেখানে সরকারি কর্মী নেই, সেখানে কাজে লাগিয়ে দাও। হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদও তাই। পুরসভা আছে তো কাজ করার জন্য।”
  10. অফিসারদের স্বচ্ছতা নিয়ে কড়া নজরদারি– মমতা বলেন, “অফিসাররা ভাবছে, আমি ২ বছর থাকব কোনও রকমে কাটিয়ে দেব। তা হয় না। আপনার পিরিয়ডটা রিভিউ করা হবে। এবার থেকে রিভিউ কমিটি তৈরি করা হবে। স্বচ্ছতা রেখেছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।”
  11. ‘কাঁচা রাস্তা-নিকাশির হাল খারাপ’- কলকাতা পুরনিগমকে বার্তা দিয়ে মমতা বলেন, “অ্যাডেড এরিয়ায় কোনও প্ল্যানিং নেই। পুরসভার মধ্যে তাই কাঁচা রাস্তা রয়ে গিয়েছে। তর্ক করার আগে ভাল করে দেখে নিন। নিকাশি নালা পরিষ্কারের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে কোটি কোটি টাকা দেওয়া হলেও কোনও কাজ হচ্ছে না।”
  12. পার্কিং থেকে তোলাবাজির অভিযোগ খোদ মমতার- মুখ্যমন্ত্রী বলেন ‘শালিমার স্টেশনে মারামারি হয় সম্প্রতি। পার্কিং-এর নামে অনেক জায়গায় অবৈধভাবে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখে তোলাবাজি করে। সরকার কেন এর বদনাম নেবে? এর থেকে কি সরকার কোনও টাকা পায়? নাকি দল পায়? যে ব্যক্তি পায়, তার পকেটে যায়। আমি কাউকে পুষতে আসিনি। এরকম হলে পুলিশ অ্যাকশন নেবে।’
  13. ‘নেতার কথা না শুনে কাজ করবেন’- ‘পুলিশ দুর্বল হলে অনেকে সুবিধা পেয়ে যায়। কোন পার্টির কোন এমএলএ, কী বলছে শুনবে না। নিজের কাজ দায়িত্বের সঙ্গে করবে। স্পষ্ট বলে দিচ্ছি।’
  14. আর্বান ডিপার্টমেন্ট নিয়ে কড়া মমতা– মমতা বলেন, “আমি কোনও অবহেলা শুনব না। আমি অনেক ভদ্রতা দেখিয়েছি। কিন্তু ভদ্রতা দেখানো মানে এই নয়, কেউ কাজ করবে না, গায়ের জোরে জমি দখল হবে। ৫১,৫০০ কোটি টাকা দিয়েছি। যা চাওয়া হয়েছে তাই দিয়েছি। অথচ দায় হবে সরকারের, মানুষ পরিষেবা পাবে না, এটা আমি মেনে নিতে পাচ্ছি না। “
  15. মমতা বলেন, ‘ভাগাভাগি ছাড়া লোভ করবেন না। যারা লোভ করবেন, তাদের মুখে ললিপপ দিয়ে অথবা লিউকোপ্লাস্ট দিয়ে বন্ধ করে দিন। কত লাগবে জীবনে বাঁচতে গেলে। কত চাই। আপনারা করছে জমি বিক্রি, ওরা (কেন্দ্রীয় সরকার) বাংলাকে বিক্রি করছে।’
  16. পুকুর ভরাট হলে সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে দিতে হবে। সে যত বড় নেতারই হোক আর যে পুলিশই এর মধ্যে জড়িত থাকুক। বেআইনি নির্মাণ উঠছে। বাড়ি ভেঙে পড়লে দোষ হচ্ছে আমাদের। একটা অ্যাকশন থাকা দরকার: মমতা।
  17. ‘আমি টাকা তোলার মাস্টার চাই না’– মমতা বলেন, “গরুর টাকা, কয়লার টাকা সবথেকে বেশি খায় বিজেপি। বালি পাথরের টাকাও খায়। টাকা যায় পুলিশের মাধ্যমে। ওভারলোডিং ট্রাক থেকে মোটা টাকা যায় পুলিশের মাধ্যমে। আমাদেরও কিছু লোক আছে। ইডি-সিবিআই কে ভয় পায়। সব টাকা তোলার মাস্টার হয়ে গিয়েছে। আমি টাকা তোলার মাস্টার চাই না। জনসেবক চাই। যারা পারবেন, তারা টিকিট পাবেন, না পারলে বের করে দেব। কারও কথা শুনব না, সে যত বড় নেতা-নেত্রী হোক।”
  18. মমতা বলেন, “বিকেল সাড়ে ৫টার জন্য যদি আলো জ্বলে, সেই দফতরকে টাকাই দেব না। ৭ কোটি লোককে ৭৫ ইউনিট বিদ্যুৎ দিই। এতে অনেক খরচ হয়। অনেকেই জানেন না।”
  19. অরূপ বিশ্বাসকে মমতা বলেন, ‘শর্ট সার্কিট হচ্ছে বেশি। কারণ কেউ দেখে না। অবহেলা। অরূপ সিনসিয়ারলি দেখতে হবে। পুরসভাকে দেবে না। তোমরা দেখবে। পুরসভা, যারা ময়লা তোলে না, তারা বিদ্য়ুৎ দেখবে! তারা তো টাকা খেতে ব্যস্ত।’
  20. মমতা বলেন, “আমার যা বলার বলেছি। আমি এর জন্য কোনও ব্যাখ্যা কারও কাছে চাইব না। আমি যা বললাম সেটা মানুষের কথা। আমাকে কেউ ভয় দেখাবেন না। আমি মানুষকে ভালবাসি। যারা মানুষকে ভালবাসে না, তাদের ছুড়ে ফেলতে এক মিনিটও সময় লাগবে না। বাংলার আইডেন্টিটি বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। বিধায়কদের বলব এই সব কাজে নাক না গলাতে। আমার কাছে সব রিপোর্ট আছে।”
  21. সব শেষে মমতা বলেন, ‘মানুষের কাছ থেকে যে অভিযোগ শুনেছি, সেগুলো নিয়ে সার্ভে করে যা জেনেছি সেটাই বললাম। এটা বকাবকি হিসেবে নেবেন না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *