October 25, 2024

উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিগঞ্জের তরঙ্গপুর এর ঘোষ বাড়ির দুর্গা পুজো আজও ঐতিহ্য বহন করে চলছে

1 min read

 তন্ময় চক্রবত্তী ঃ-  সালটা উনিশশো সাতচল্লিশ । তখন পরাধীন ভারতবর্ষের
ব্রিটিশ শাসন থেকে সবে মুক্তি পেয়েছে ভারত বর্ষ ।  কিন্তু ভারতবর্ষ মুক্তির স্বাদ পেলেও সেই সময়
তৎকালীন দিনাজপুর জেলা বর্তমান উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ এর মানুষের মনে
কিন্তু সেই স্বাধীনতার মুক্তি পাবার আনন্দ ছিল না ,তার কারণ তখন ও কালিয়াগঞ্জ শহর
পূর্ব পাকিস্তানের অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশের  মধ্যে অন্তর্ভুক্তি হবে এমনই একটা আশংকা ছিল।  ঘন জঙ্গলে ঘেরা  উত্তর দিনাজপুর জেলার  কালিয়াগঞ্জে তখন  খুবই বাঘের উৎপাত ছিল।

ঘোষ বাড়ির  দূর্গা পুজা


 একদিকে বাঘের উৎপাত অপরদিকে কালিয়াগঞ্জ কে আজকে
পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তি হবার আশঙ্কায় যখন এখানকার মানুষদের মন ওষ্ঠাগত,
সেই   সময় উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ এর
তরঙ্গপুর বিশিষ্ট কিছু মানুষ তাদের কালিয়াগঞ্জ মাতৃভূমিকে ভারতে অন্তর্ভুক্তি ও
বাঘের উৎপাত থেকে রেহাই পেতে দেবী দুর্গার কাছে প্রার্থনা জানিয়ে এই পুজোর প্রচলন
শুরু করেছিলেন যা  আজ তরঙ্গপুর এর ঘোষ বাড়ির
 দূর্গা পুজা নামে খ্যাত হয়ে  গিয়েছে।


ঘোষ বাড়ির  দূর্গা পুজা
  উত্তর দিনাজপুর জেলার  মধ্যে যে সমস্ত প্রাচীন বনেদি বাড়ির  পুজো আজও বংশপরম্পরায় হয়ে আসছে  তার মধ্যে তরঙ্গপুর এর  ঘোষ বাড়ির পুজো অন্যতম ।  

ঘোষ বাড়ীর অন্যতম সদস্য তথা বিশিষ্ট সমাজসেবী অসীম ঘোষ 
নিয়ম নিষ্ঠা ও ভক্তি সহকারে এই পুজো সেই সময়
থেকেই হয়ে আসছে তরঙ্গপুরএ ।  এই ঘোষ
বাড়ীর অন্যতম সদস্য তথা বিশিষ্ট সমাজসেবী অসীম ঘোষ জানান তরঙ্গপুর একটা সময়  ঘন বন জঙ্গলে ঘেরা  ছিল  ।সেইসময়
প্রচুর এখানে  হিংস্র বাঘ  বেরত ।ফলে  তাদের অত্যাচারে মানুষ ঠিকঠাক বসবাস করতে পারত
না ।

ঘোষ বাড়ি  এক গৃহবধু ঋত্বিকা ঘোষ
 এখানে সেই সময় গভীর  জঙ্গল পরিষ্কার
করে এবং টিন  বাজিয়ে  হিংস্র পশুদের তাড়িয়ে এখানে পুজো প্রচলন  করেছিলেন ঠাকুরদা স্বর্গীয় সতীশ চন্দ্র ঘোষ ।অসীম
 বাবূ  বলেন  শুধু
তাই নয় এই পুজো প্রচলন   করার পিছনে আরও যে ইতিহাস আছে সেটা হল দেশভাগের
সময় এই কালিয়াগঞ্জ বাংলাদেশে প্রায় পড়ে গিয়েছিল। 

ঘোষ বাড়ির অপর এক সদস্য অরবিন্দ ঘোষ
 সেসময় ঠাকুরদা মা দুর্গার কাছে প্রার্থনা করে ,যাতে
কালিয়াগঞ্জ পূর্ব পাকিস্তান অধুনা বাংলাদেশ যাতে না পড়ে।  সেই সময় ঠাকুরদা নিজের স্বাধীনতা সংগ্রামী হয়ে
লড়াই করে সেই কালিয়াগঞ্জ কে ভারতে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা করে ।  আর তখন থেকেই  এখাণে এই দেবী দুর্গার   পুজোর
প্রচলন শুরু হয়েছিল ।  যখন মন্দির
প্রতিষ্ঠা হয়েছিল সেই সময় এই তরঙ্গপুর এলাকা ছিল গভীর অভয়ারণ্য ।


(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});



ঘোষ বাড়ির  এই প্রজন্মের সন্তান তথা অসীম ঘোষের পুত্র অংশুমান ঘোষ 
  গ্রামের মানুষরা তখন একত্রিত হয়ে জঙ্গল
পরিষ্কার করে ও টিন  বাজিয়ে হিংস্র পশুদের
তাড়িয়ে এই পুজোর করে  সেই থেকে আজও
রেয়াজ হয়ে আসছে ।  এবং দূর্গা পূজোর সময়
টিন  বাজিয়ে এই পুজো আরম্ভ হয় ষষ্ঠীর
দিনে । তিনি  বলেন এই পুজো কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধর্মের
মানুষরা প্রতি বছরই একত্রিত হয়ে মিলন মেলা রূপ দেয় ।আর থাকে  আদিবাসীদের নৃত্য ।

 তিনি বলেন যেমন ধর্মীয় আচার
মেনে এখানে মা দুর্গা পুজো হয়ে থাকে পুজো শেষে হাজার হাজার মানুষ অন্নভোগ   ও গ্রহণ
করেন ।  অসীম বাবু আরও  বলেন পুজোর সময় আর পাঁচটা বাড়িতে যখন মহিলারা
ভাল ভাল কাপড় পরে পুজো দেখতে বেরোবে ঠিক তখন মা দুর্গা সাধারণ  কাপড় পড়ে থাকবে এটা হতে পারে না ,তাই এবার মা
দুর্গার সাথে সাথে ঘোষ বাড়ির দূর্গা পুজায়  দুর্গা মায়ের সাথে সাথে লক্ষ্মী-সরস্বতীরাও  বেনারসি শাড়ী  পড়ে থাকবে ।তাই   পুজো
তাদের পারিবারিক হলেও এই পুজো  প্রতিবছ্রর
ই  বারোয়ারি পুজোর মতোই রূপ নেয় ।


(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});



কালিগঞ্জের তরঙ্গপুর
   অসীম 
বাবু বলেন পুজোর  দিনগুলিতে  তাদের আত্মীয়-স্বজনরা যে যেখানেই থাকুক না কেন
তারা পুজোর সময় এই বাড়ির পুজোয় অংশ নেয়।এই ঘোষ বাড়ির পুজো সম্বন্ধে ঘোষ বাড়ি
 এক গৃহবধু ঋত্বিকা ঘোষ জানালেন ,  বর্তমানে এই পূজাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে
বিভিন্ন বাজারঘাট নিয়ে  এখন তিনি ভীষণ
ব্যস্ত  । চার দিনব্যাপী এই পুজো এতটাই  তাকে ব্যস্ত থাকতে হয় যে অন্য জায়গায় গিয়ে
এই চার দিন আর পুজো দেখার ইচ্ছা হয় না।

আগে এই বাঘ এই খানে বের হত 
  সমস্ত আত্মীয় স্বজনরা একসাথে হয়ে মন্দির
প্রাঙ্গণে খূব  আনন্দ-উৎসবে মেতে উঠি   যে
কিভাবে চার দিন সময় কেটে যায় তা বলতে পারব না।  অন্যদিকে এই ঘোষ বাড়ির  এই প্রজন্মের সন্তান তথা অসীম ঘোষের পুত্র
অংশুমান ঘোষ জানান ,  সারা বছর পড়া আর
পড়া,  তার মাঝে বছরের এঈ ৪ টা দিন পড়া
ছেড়ে  একটু হৈ-হুল্লোড় করার মজা অন্যরকমই।
তাই বাড়ির পুজোয় মেতে উঠার  আনন্দই একদম
আলাদা ।  তাই পুজোর চার দিন এখান থেকে
কোথাও যাওয়া হয় না ঠাকুর দেখতে। মন্দির প্রাঙ্গণে সকাল সন্ধ্যা সকলে মিলে পুজো
আনন্দ উপভোগ করে থাকি ।


(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});


তরঙ্গপুর এর এক বাসিন্দা বাপ্পা সরকার

অপরদিকে এই ঘোষ বাড়ির অপর এক সদস্য অরবিন্দ ঘোষ জানান বছরে
আর পাঁচটার সময় যে যেখানেই কাজ করুক না কেন পুজোর চার দিন তারা সবাই চলে আসে এই
পুজোয় অংশগ্রহণ করতে তিনি বলেন এই পুজো সবটাই হয় নিষ্ঠা সহকারে
তরঙ্গপুর এর এক
বাসিন্দা বাপ্পা সরকার জানান তরঙ্গপুর এই ঘোষ বাড়ির পুজো এখন শুধু আর ঘোষ বাড়ির
পুজোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই , এই পুজো এখন সার্বজনীন পূজার মত  রূপ নিয়েছে ।  তাই এলাকার মানুষরা এই পুজোতে দারুন ভাবে মেতে
উঠে পুজোর চার দিন ।যে ঘোষ বাড়ি পুজোয় মন্দির প্রাঙ্গন একদিন ছিল অভয়ারণ্য।  চারিদিকে ছিল হিংস্র পশুদের আগমন ।  আজ সময়ের বিবর্তনে সবকিছু হারিয়ে আজ ছন্দে
ফিরেছে তরঙ্গপুর।  এখানে এখণ  বাঘের দেখা না মিললেও হাজার হাজার মানুষের দেখা
মেলে পুজোর চার দিন পুজো মণ্ডপের সামনে ।  তাই ঘোষ বাড়ির পুজো দেখতে আপনাকে হাসতেই হবে
এবার তরঙ্গপুর ।


(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});


(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});


(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *