October 24, 2024

পরলোকে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ইতিহাসের অধ্যাপক ও প্রথিতযশা পুরাতত্ত্ববিদ প্রণব কুমার ভট্টাচার্য

1 min read
সুতীর্থ দেব  ;- উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় যার স্নেহ ছায়ায় হাজারো ছাত্র – ছাত্রী প্রাণ জুড়িয়েছে।  যার ক্লাস থেকে শুধু শেখা আর শেখা।  বারাবার যার পরামর্শে  সকলে পেয়েছে এগিয়ে যাওয়ার রসদ। মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়ে যাকে ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি কংগ্রেসে প্রাচীন ভারত বিভাগে সভাপতি দেখে গর্ব করে অনেকেই বললেন, প্রণব কুমার ভট্টাচার্য আমার স্যার। সেই সর্বজন শ্রদ্ধেয়  উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের  প্রথম অধ্যাপক প্রনব কুমার ভট্টাচার্য  গতকাল ৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার  বিকেল ৪.৩০ টায় কোলকাতায় ইহজাগতিক মায়া ছেড়ে পরলোক গমন করেছেন। তাঁর প্রয়াণে  উত্তরবঙ্গ তথা পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাস জগতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও ইতিহাস বিভাগ শুরু হয় ১৯৬৫ সালে।

 ঐ বছর কোলকাতা থেকে  প্রণব কুমার ভট্টাচার্য উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে প্রথম অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেছিলেন। তিনি স্যার যদুনাথ সরকার চেয়ার প্রফেসর পদে  আসীন ছিলেন। ঐ পদে থেকেই অবসর গ্রহণ করেন। কলা বিভাগের ডিন ও অন্যান্য পদ তিনি যোগ্যতার সাথে সামলেছেন। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন প্রণব বাবু। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ দীনেশচন্দ্র সরকারের তত্ত্বাবধানে  গবেষণা সম্পন্ন করেন তিনি।অসাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এই অধ্যাপক জীবনভর খুঁজেছেন পুরাতত্ব। উত্তরবঙ্গে জন্ম না হলেও কর্মসূত্রে উত্তরবঙ্গে এসে এখানকার  সবকিছুকে ভালোবেসে গেছিলেন আজীবন।মূলতঃ মূদ্রা নিয়ে বিস্তর গবেষণা  করেছেন। তাঁর লেখা বেশ কয়েকটি গ্রন্থ বৌদ্ধিক সমাজে সমাদৃত। “কয়েনেজ অফ সিকিম”, “হিস্টোরিকাল জিওগ্রাফি অফ মধ্যপ্রদেশ”, “আইকোনোগ্রাফী অফ স্কাল্পচার”,”ক্যাটালগ অফ কোয়েন্স ইন এ কে এম মিউজিয়াম”  এই রকম বেশ কয়েকটি  গ্রন্থ লিখেছেন তিনি।

 পঞ্চাশের বেশি গবেষণামূলক প্রবন্ধ  জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্র- পত্রিকাতে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ৬ মাস বিলেতে থেকে পুরাতত্ব নিয়ে কাজ করেছেন। সেখানে নিউমিস্ম্যাটিক্স কনফারেন্সে সভাপতিত্ব করেন। কোলকাতা এশিয়াটিক সোসাইটির সাথে তিনি আন্তরিক ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। উত্তরবঙ্গের স্থানীয় ইতিহাস চর্চাকারীদের সাথে ছিল তাঁর নিবিড় যোগাযোগ ও  সম্পর্ক। কোচবিহার থেকে মালদা যে কোন জায়গায় পুরাতত্ব অন্বেষণ করতে ছুটে চলতেন তিনি। ছাত্র -ছাত্রীদের কাছে অত্যন্ত প্রীয় এই শিক্ষকের চেষ্টায় ইতিহাস বিভাগে এসেছিলেন  এ এল বাশাম, রোমিলা থাপারের মত আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান  ইতিহাসবিদ। শুধু শিক্ষক হিসেবেই তিনি সুনাম অর্জন করেননি গবেষকদের গাইড হিসেবেও তিনি ছিলেন অনন্য। উত্তরবঙ্গের পুরাকীর্তির উপর ১৮ জন গবেষককে পি এইচ ডি করিয়েছিলেন তিনি।  বহু ইতিহাসগত সংস্থার তিনি সদস্য ও পদাধিকারী ছিলেন। ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি কংগ্রেসের মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়   সম্মেলনে তিনি প্রাচীন ভারত বিভাগে সভাপতির আসন অলংকৃত করেছিলেন। বাংলার বহু স্কুল,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর অসখ্য ছাত্র – ছাত্রী শিক্ষকতা করছেন। 


(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক, সাহিত্য সংস্কৃতিপ্রেমী  ড. আনন্দ গোপাল ঘোষ বিষাদ হৃদয়ে বলেন, “প্রণব কুমার ভট্টাচার্যের প্রয়াণে প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে চর্চার ছাদ ভেঙে পড়ল। তাঁর সহকর্মী হয়ে অনেক শিখেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে অক্ষয় কুমার মৈত্র মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান ভোলার নয়।চিরকাল তাঁকে স্মরণ করব।” বর্তমান উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক বিজয় কুমার সরকার বলেন, প্রণব কুমার ভট্টাচার্য স্যারের ছাত্র হওয়ায় আমি গর্বিত। তাঁর তত্ত্বাবধানে আমার গবেষণা। তিনি না থাকলে আমার জীবনে আজ আমি এখানে পৌঁছাতে পারতাম না। আমি দ্বিতীয়বার পিতৃহারা হলাম।  কল্যানী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অনিল সরকার, আলিপুরদুয়ার কলেজের অধ্যাপক শৈলেন দেবনাথ, কোলকাতার মৌলনা আজাদ কলেজের অধ্যাপক ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য,কোচবিহার পঞ্চানন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাধব অধিকারী, শিলিগুড়ি মহিলা কলেজের  অধ্যাপিকা তমালি মুস্তাফি,মালদা কলেজের অধ্যাপক সোহরাব আলি, রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বাবুলাল বালাসহ আরও অনেকে তাঁদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।স্ত্রীবিয়োগ আগেই হয়েছে।  মৃত্যুকালে প্রণব বাবুর  বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। এক ছেলে ও এক মেয়ে সহ তিনি রেখে গেলেন অগণিত ছাত্র- ছাত্রী সমাজ।


(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *