বাংলায় বাঙালির সংস্কৃতির মাঝে বহিরাগত শব্দ রাজনৈতিক আঙ্গিনায় সশব্দে সরগরম, আপনার মত?
1 min readবাংলায় বাঙালির সংস্কৃতির মাঝে বহিরাগত শব্দ রাজনৈতিক আঙ্গিনায় সশব্দে সরগরম, আপনার মত?
১৩ জানুয়ারি বুধবার। জয়ন্ত বোস,কালিয়াগঞ্জ,উঃ দিনাজপুর।২৯ পৌষ বৃহস্পতিবার পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি বাংলার বাঙালি সংস্কৃতিতে একটি বিশেষ উৎসবের দিন। বাংলা পৌষ মাসের শেষের দিন এই উৎসব পালন করা হয়। এই দিন বাঙালিরা বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। তার মধ্যে পিঠা খাওয়া, ঘুড়ি উড়ানো অন্যতম। মূলত জ্যোতিষশাস্ত্রের একটি ক্ষণ। ‘মকরসংক্রান্তি’ শব্দটি দিয়ে নিজ কক্ষপথ থেকে সূর্যের মকর রাশিতে প্রবেশকে বোঝানো হয়ে থাকে। ভারতীয় জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী ‘সংক্রান্তি’ একটি সংস্কৃত শব্দ, এর দ্বারা সূর্যের এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে প্রবেশ করাকে বোঝানো হয়ে থাকে। যাক এই পৌষ মাসের একদম অন্তিম লগ্নে এসে আজকের প্রতিবেদন টি লিখতে গিয়ে বাংলায় বাঙালির সংস্কৃতির মাঝে বহিরাগত শব্দ টি গরম গরম পিঠেপূলির মতো মুখরোচকের মতো রাজনৈতিক আঙ্গিনায় সশব্দে সরগরম। হচ্ছে প্রতিদিন এই নিয়ে গর্জন কিন্তু আপনাদের মত ?
একুশের নির্বাচনের প্রাক্কালে বাঙালি ও বাঙালির সংস্কৃতি নিয়ে রাজনৈতিক মঞ্চে জনসমক্ষে একটু আদিখ্যেতার হাওয়া বইছে। তবে এই পৌষ মাসে বাংলায় বাঙালির সংস্কৃতি বলতে মনে পরে একটি বিখ্যাত গানের কলি ” শীতের ভোরে বেওরা পুকুর টুসু গান এর সারিনতুন চাল এর ভাপা পিঠে সুরু ছাঁকলি আহামরি,বাংলা ভুলি কি করে, বাংলা বুকের ভিতরে।। ” এই বাংলায় জন্মগ্রহণ করে বাংলার সংস্কৃতি ও শিক্ষায় নিজেকে গড়ে তুলে বাংলাভাষী একজন বাঙালি বলে নিজেকে মনে করলেও বাঙালি শব্দ টির আক্ষরিক অর্থ কি তাই বলে? না, একজন অন্য ভাষা জানা মানুষ দীর্ঘদিন ধরে এই বাংলার মাটিতে বাস করতে করতে বাংলার সংস্কৃতির ধারায় নিজেদের মেলে ধরেও যে কোনো ধর্মের মানুষ আক্ষরিক অর্থে বাঙালি। প্রসঙ্গে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির কেন্দ্রিয় নেতৃত্ব দের বহিরাগত শব্দে বিঁধলেন আর এই শব্দটি নিয়েই রাজনৈতিক আঙ্গিনায় সরগরম বাংলার মাটিতে। শব্দটির যথার্থ প্রয়োগের ইতিবাচক দিকটির সমর্থনে আজকের এই প্রতিবেদন। ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জানুয়ারি স্বদেশ ও পরিবার-পরিজন ত্যাগ করে মার্গারেট চলে আসেন ভারতে। এই সময় বিবেকানন্দের কাছে ভারতের ইতিহাস, দর্শন, সাহিত্য, জনজীবন, সমাজতত্ত্ব, প্রাচীন ও আধুনিক মহাপুরুষদের জীবনকথা শুনে মার্গারেট ভারতকে চিনে নেন। ভারতে আসার কয়েক দিন পর রামকৃষ্ণ পরমহংসের স্ত্রী সারদা দেবীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। এরপর ২৫ মার্চ স্বামী বিবেকানন্দ তাকে ব্রহ্মচর্য ব্রতে দীক্ষা দেন। তিনিই মার্গারেটের নতুন নাম রাখেন ‘নিবেদিতা’ এবং পরবর্তীতে সকলের কাছে ভগিনী নিবেদিতা বলে পরিচিতা। ভারতে এসে এই বাংলায় নিজস্ব বাসভূমি তৈরী করেন। কলকাতার বাগবাজার অঞ্চলে ১৬ নং বোসপাড়া লেনে নিজ বাসভবন গড়ে তোলেন এবং মেয়েদের কে লেখাপড়ায় শিক্ষিত করে তুলতে নিজ বাসভবনে একটি মেয়েদের স্কুল খোলেন এমনকি ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের কলকাতায় মহামারী দেখা দিলে তিনি স্থানীয় যুবকদের সহায়তায় রোগীদের সেবাশুশ্রূষা (সেবা করেন) ও পল্লী-পরিষ্কারের কাজ করেন। বাংলায় থেকে মানব পরিষেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন বলে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভগিনী নিবেদিতা কে ” লোকমাতা” বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। কৈ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো ভগিনী নিবেদিতা কে বহিরাগত বলেন নি? বরং মেয়েদের কে শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবার ভগিনী নিবেদিতার মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে এই বাংলার মেয়েদের কে পড়াশোনা চালিয়ে উচ্চ শিক্ষিত করে তুলতে” কন্যাশ্রী ” প্রকল্প চালু করেছেন। আবার অপরদিকে মাদার টেরেজা আলবেনীয়-বংশোদ্ভুত ভারতীয় ক্যাথলিক সন্ন্যাসিনী ও ধর্মপ্রচারক যিনি এই বাংলার মাটিতে থেকেই ভারতব্যাপী তাঁর মানব পরিষেবায় নিযুক্ত ছিলেন। এই বাংলার মাটিতে, বাংলার সংস্কৃতির ধারায় নিজেদের অবস্থান থেকে একজন ভগিনী অপরজন মা এই দুই বিদেশিনী কখনোই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক বহিরাগত শব্দে আখ্যায়িত হন নি। এই দুই বিদেশিনী দীর্ঘদিন ধরে বাংলায় থেকে তাদের জনসেবার কাজ অব্যাহত রেখেছিলেন। কিন্তু একুশের নির্বাচন কে সামনে রেখে ভোটের রাজনীতির স্বার্থে যারা এতদিন সোনার বাংলা গড়ার, মানুষের পাশে থাকার, জনগনেকে পরিষেবা প্রদান করার কথা ভুলেই ছিলেন কিন্তু আসন্ন নির্বাচনে বাংলার চিন্তায় মগ্ন এই সকল উঃ প্রদেশ, দিল্লি, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ ইত্যাদি রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বদের বহিরাগত শব্দে বিঁধেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিযায়ি পাখিদের রায়গঞ্জ কুলিক ফরেস্টেও দেখা মেলে কিন্তু সারা বছর দেখা মেলে না বলেই এরা বহিরাগত। আজ সত্যি কি বাংলায় বাঙালির সংস্কৃতি কে নবরূপে সজ্জিত করে তুলতে ভিন রাজ্যের অবাঙালীদের হাত ধরতে হবে বাংলার মানুষদের ? সেই সময়ের প্রয়োজন আছে বলে বাঙালি মনে করে? কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা বলতে বলতে যারা রবীন্দ্রনাথের ব্যবহৃত চেয়ারে বসে পরা ভিন্ন রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বদের কাছ থেকে বাংলার সংস্কৃতি কে তুলে ধরতে পরিযায়ি পাখিদের মতো শুধু নির্বাচনের সময় বাংলার মাটিতে এসে জ্ঞান বিতরণ করতে বাংলার মানুষ কি সহযোগিতা করবে? প্রতিবেদনের এই কলমেই আরো একটি সশব্দে সরগরম ধ্বনি নিয়ে আলোচনা না করে থাকা অসম্পূর্ণতার বিষয়। তা হলো ” জয় শ্রীরাম “। ভগবান শ্রীরাম কে তার নাম উচ্চারনে ধ্বনিত হতেই পারে। হ্যাঁ, ভগবান কে ডাকা তো অন্তর দিয়ে ভালোবাসার তাগিদে ভক্তিভরে। কিন্তু যে সশব্দে হুঙ্কার দিয়ে আস্ফালনে ” জয় শ্রীরাম ” ধ্বনি বর্তমানে বাংলার মাটিতে সর্বত্র সরগরম সেটাও কতখানি বাংলার মানুষ হৃদয়ের অন্তঃস্থলে জায়গা দেবে , বাংলার সংস্কৃতি কে প্রভাবিত করবে বাংলার বাঙালি কি বলে? বাঙালি ভাবছে রাজনীতির আঙ্গিনায় মানুষের সেবা করাকেই কি পরম সেবা বলে ভাবছেন বর্তমানে একুশে নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা ? যদি মুখোশের আড়ালে প্রতিষ্ঠিত করবার চেষ্টা করেন তবে কেন অহেতুক বাংলার গর্ব, ভারতের গর্ব বাংলার মহাপুরুষ মুনিষিদের নাম ভাঙ্গিয়ে নিয়ে রাজনীতির খেলায় মত্ত হয়েছেন। বাংলা তথা বাঙালির কাছে , বাংলার সংস্কৃতির কাছে এ এক লজ্জা।