October 28, 2024

পৌষ সংক্রান্তিতে ভোজনরসিক বাঙালির পাতে নলেন গুড় সরবরাহ করতে কুনোরের গৌড়হরি এখন ব্যস্ত গুড় তৈরি করতে

1 min read

পৌষ সংক্রান্তিতে ভোজনরসিক বাঙালির পাতে নলেন গুড় সরবরাহ করতে কুনোরের গৌড়হরি এখন ব্যস্ত গুড় তৈরি করতে

তনময় চক্রবর্তী ও পিয়া গুপ্তা চক্রবর্তী :- সামনেই পৌষ সংক্রান্তি। এখন বিয়ে থেকে চড়ুইভাতির আমেজে মজেছেন উত্তর দিনাজপুর জেলার গ্রাম বাংলার মানুষেরা। ভোজনরসিক বাঙালির পাতে এখন নানান রকমের পিঠেপুলি সঙ্গে অপরিহার্য খেজুরের গুড়ের পাটালি নলেন গুড়। আর এবার যেহেতু শীত অনেক দেরিতে এসেছে, তাই বাজারে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এতদিন আগের বছরের মজুদ করা গুড়ই বিক্রি করা হচ্ছিল।

কিন্তু জাঁকিয়ে শীত পড়তেই খেজুরের রসের জোগান পাওয়া যাচ্ছে। তাই এবার সেই রসের থেকে তৈরি হচ্ছে তাজা পাটালি গুড়।শীত মানে শুধু কেক-পেস্ট্রি নয়। তার সঙ্গে রয়েছে খেজুর গুড়ও। আজও গ্রামবাংলায় শীতের সকাল মানেই খেজুরের রস। গাছে বাঁধা কলসিতে টুপটাপ ঝরে পড়ছে রস। নামিয়ে আনার পর চেটেপুটে খাওয়া। এছাড়াও রয়েছে গুড়ের পিঠে-পুলি। এমন রসের ভান্ডার পাওয়া গেল উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ ব্লক এর কুনোরে।

দেখা গেল কুনোরের আশ্রমপাড়ার বাসিন্দা গৌড় চন্দ্র সরকার ,রাধেশ্যাম সরকার কে ভোরবেলা উঠে খেজুরের গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে নিয়ে বাড়ির উঠোনের মধ্যেই খেজুর গুড় বানাতে। এক সাক্ষাৎকারে গৌড় বাবু বলেন তিনি যে কাজের সাথে যুক্ত সেই কাজ তার বাবা ঠাকুরদারা করত। তাই তাদের কাছ থেকে শেখা এই কাজটা তিনি আঁকড়ে ধরে রেখেছেন রুটি রুজির তাগিদে। তিনি বলেন অন্য ব্যবসার তুলনায় এই ব্যবসাতে লাভ বেশি তবে পরিশ্রমও অনেক বেশি।গৌড় বাবূ  বলেন তার ৩০  টি গাছ লাগানো আছে। যে গাছ গুলো থেকে প্রতিদিন তিনি খেজুরের রস সংগ্রহ করে নিয়ে এসে খেজুরের গুড়  তৈরি করেন নিজে হাতেই।

তিনি বলেন এখন অব্দি এ কাজে  কোন সরকারিভাবে সাহায্য পাননি । তার পুঁজি থেকেই এ কাজে অর্থ বিনিয়োগ করে এ কাজ করছেন। তিনি বলেন যে খেজুরের গুড় গুলো তিনি তৈরি করেন সেগুলো তিনি বাজারে বিক্রি করেন কখনো ১০০ টাকা কখনো ১২০ টাকা কখনোবা আবার ১৩০ টাকা করে। বর্তমানে তাদের গুড়ের চাহিদা বহুগুণ বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হয় অনেক সময়।

তার হাতের গুড় রায়গঞ্জ ,কালিয়াগঞ্জ সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায়। অন্যদিকে গৌড় বাবুর স্ত্রী সবিতা সরকার জানান, তিনিও স্বামীকে যথা যোগ্য ভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন সকাল বেলা থেকেই। তিনি বলেন তাদের হাতের তৈরি গুড দিয়েই প্রতিবছরই পৌষ সংক্রান্তিতে বাড়িতেই পিঠা পুলি তৈরি করেন। গৌড় বাবুর পুত্র হর্ষ জিৎ সরকার জানান , তার বাবা যে কাজে যুক্ত সেটা খুবই রিক্সি কাজ। অনিশ্চয়তায় ভরা।

কারণ শীতকালে এই গুড়ের ব্যবসা হলেও অন্যান্য সময় এটা হয় না। তাই সেই সময় খুবই অসুবিধা হয়। তিনি বলেন তিনি পড়াশোনা করছেন। আগামী দিনে একটা ভালো চাকরি করে বাবার পাশে দাঁড়িয়ে বাবাকে এই কাজ থেকে বিরত করবেন। এটাই তার স্বপ্ন।

হর্ষ জিৎ বলেন তিনি এই পেশাতে আসতে ইচ্ছুক নন।এদিকে ডিসেম্বরের শেষ লগ্নে চড়ুইভাতির আমেজ উপভোগ করছেন মানুষ। আর এই সময় ভোজনরসিক বাঙালির পাতে হরেক রকমের শাকসব্জি, পিঠেপুলির সঙ্গে অপরিহার্য খেজুড় গুড়ের পাটালি বা নলেন গুড়। কয়েক বছর আগেও কলকাতার পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে খেজুর গুড়ের চাহিদা গত এক সপ্তাহে হয়েছে দ্বিগুণ।

কারণ শীতের আমেজে স্বাদে-গন্ধে খেজুর গুড় অতুলনীয়। দাম এবং মানের সামঞ্জস্য রাখার টানাপোড়েনের জেরে পরিস্থিতির কিছুটা বদল এসেছে। তবে এখনও শহরে পাটালির গুড়ের চাহিদা যথেষ্ট।এ বছর ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহেই শীতের দেখা মিলেছে। আর তাই বাজারে এসে গিয়েছে খেজুর গুড়। শীতের তারতম্যের উপরেই খেজুর গাছ থেকে ভালো রস পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে। শীত পড়লে গাছ থেকে ভালো রস মেলে।

এ বছর ডিসেম্বরের গোড়ায় শীত না-পড়ায় চিন্তায় ছিলেন গুড় প্রস্তুতকারী এবং ব্যবসায়ীরা। তবে কিছুটা দেরিতে হলেও জাঁকিয়ে শীত পড়ায় গাছ থেকে মিলছে বেশি পরিমাণ রস।রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে মূলত কৃষক পরিবারের সদস্যরা খেজুর গাছ কেটে রস বার করে তা নিয়ে এসে জ্বালিয়ে গুড় তৈরির কাজ করে থাকেন। কালিয়াগঞ্জ ব্লকের কুনোড় এর আশ্রমপাড়া তে গিয়ে দেখা গেল গৌড় বাবুর মত আরো অনেকেই এই খেজুরের গুড় তৈরি তে ব্যস্ত। খেজুরের পাটালি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *