October 28, 2024

কলকাতার আকাশে দেখা গেল মহাজাগতিক মহাসংযোগ, ৩৯৭ বছর পর

1 min read

কলকাতার আকাশে দেখা গেল মহাজাগতিক মহাসংযোগ, ৩৯৭ বছর পর

মহাকাশে বিরলতম ঘটনা ঘটে গিয়েছে সোমবার সন্ধ্যায়। গায়ে গায়ে দুই গ্রহের মহা-সংযোগ ঘটল দীর্ঘ ৩৯৭ বছর পরে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘গ্রেট কংজাংশন’ । বিরল থেকে অতি বিরলতম ঘটনা ঘটল পৃথিবীর সৌর-পরিবারে। আর তা চাক্ষুষ করল কলকাতা। কাছাকাছি এল বৃহস্পতি আর শনি। কলকাতার ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সের ডিরেক্টর, বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী সন্দীপ চক্রবর্তী দ্য ওয়ালকে বলেন, দুই গ্রহের সাক্ষাত্‍কার বলা যাবে না এই ঘটনাকে। বরং বলা যেতে পারে সৌর-পরিবারের দুই সদস্যের নিজেদের মধ্যে লুকোচুরি খেলা। কখনও গায়ে গায়ে, কখনও একটু দূরে। খালি চোখে দেখে মনে হয়েছে সৌর-পরিবারের কর্তা গুরু গ্রহ বৃহস্পতি আর শনি মিলেমিশে এক হয়ে গেছে। তবে টেলিস্কোপে সামান্য ফারাক চোখে পড়বে। মহা-সংযোগ আসলে কী? সৌরমণ্ডলের দুই জাঁদরেল গ্রহকে একই সঙ্গে প্রায় একই সরলরেখায় দেখা চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানী সন্দীপবাবু বললেন, খুব সহজে ব্যাপারটা বোঝানো যায়। ধরা যাক, বড় মাঠ। ক্রিকেট খেলার মাঠের মতো সমান নয় কিন্তু। এবড়ো খেবড়ো, অসমান, উঁচু নিচু মাঠ। এই মাঠের দুই দিক দিয়ে দু’জন খেলোয়াড় ছুটছে। গোল গোল ঘুরে আসছে।একজনের সময় লাগছে ১২ মিনিট, অন্যজনের ২৯ মিনিট। এবার ধরা যাক ক্যামেরায় একটা ফিল্ম রয়েছে। দুজনের ছবি তুলতে হবে। কিন্তু দুজনকে কিছুতেই এক ফ্রেমে ধরা যাচ্ছে না। কারণ দুজনের ছোটার বেগ আলাদা। কখনও একজন উত্তরে, তো অন্যজন দক্ষিণে।

 

একজনে পূর্বে তো অন্যজন পশ্চিমে। পর পর একই ফ্রেমে পেতে গেলে অন্তত ১২-১৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করতেই হবে। এমন একটা সময় আসবে যখন দুজনকে একই ফ্রেমে ক্যামেরাতে ধরা যাবে। এবার এই মিনিটের হিসেবকে যদি বছরে পরিবর্তিত করা যায় তাহলেই ব্যাপারাটা সহজ করে বোঝা যাবে। বৃহস্পতি সূর্যের চারদিকে পাক খেয়ে আসে ১২ বছরে। সূর্যের থেকে গুরু গ্রহের দূরত্ব প্রায় ৭৭ কোটি কিলোমিটারের মতো। সূর্যের থেকে শনির দূরত্ব অনেক বেশি, প্রায় ১.৪৯ বিলিয়ন কিলোমিটার। সূর্যের চারদিকে পাক খেতেও তাই শনির অনেক বেশি সময় লাগে। তার কক্ষপথের পরিধিও বৃহস্পতির থেকে বেশি। একবার প্রদক্ষিণে সময় লেগে যায় প্রায় ২৯ বছর। বৃহস্পতির সময়ের প্রায় দ্বিগুণ। শুধু তাই নয়, এই দুই গ্রহ কিন্তু একই লাইন ধরে ঘুরছে না। তাদের কক্ষপথের অবস্থান আলাদা। দুজনকে তাই একসঙ্গে পাওয়া কার্যত অসম্ভব ব্যাপার। এই মহা-সংযোগকে তাই বিরলতম মহাজাগতিক ঘটনা বলা হচ্ছে। ৩৯৭ বছর আগের সংযোগ এত ভাল বোঝা যায়নি সন্দীপবাবু বলছেন, দুই গ্রহকে একই সরলরেখায় দেখা সত্যিই অসম্ভব ব্যাপার। আজ, ২১ ডিসেম্বর দুই গ্রহ পরস্পরের থেকে মাত্র ১ ডিগ্রি কৌণিক দূরত্বে ছিল। ৬ মিনিটের মধ্যে একে অপরের কাছাকাছি এসেছে। সূর্যাস্তের ২০ মিনিটের মাথায় সেই মহা-সন্ধিক্ষণ ঘটে। শীতের সময় যেহেতু দিন ছোট ও রাত বড়, তাই স্পষ্টভাবে এই সংযোগ খালি চোখেই দেখা প্র্ত্যক্ষ করা গিয়েছে। কিন্তু আজ থেকে ৩৯৭ বছর আগে গ্যালিলিও যে মহা-সংযোগ দেখেছিলেন তা অতটা স্পষ্ট ছিল না। টেলিস্কোপ আবিষ্কারের ১৩ বছর পরে বৃহস্পতি-শনির এই মহা-সংযোগ ধরা পড়েছিল দূরবীক্ষণে।সন্দীপবাবু বলছেন, এই মহাজাগতিক ঘটনায় বিজ্ঞানের থেকেও বেশি রয়েছে জ্যামিতিক সংযোগ। দশদিন আগেও বৃহস্পতি ছিল আকাশের পশ্চিমদিকে, তার একটু পূর্বে ছিল শনি। আজকের ঘটনায় দুই গ্রহ পরস্পর থেকে ৬-৮ মিনিট পিছনে ছিল। শনি ছিল ওপরে, বৃহস্পতি নিচে। আগামীকাল আবার এই অবস্থান বদলে যাবে। বিজ্ঞানীর কথায়, শনি আর বৃহস্পতির ক্রসিং চলছে। তাদের অবস্থান বদলাতে থাকবে। তাই এই মহাজাগতির ঘটনাকে দুই গ্রহের সাক্ষাত্‍কার না হলে লুকোচুরি খেলা বলা যেতে পারে। সেটা ছিল ১৬২৩ সালের ১৬ জুলাই। দুই গ্রহ পরস্পরের থেকে ৫ মিনিট ১০ সেকেন্ডের ব্যবধানে ছিল। যেহেতু জুলাই মাস ছিল, দিন বড়, তাই স্পষ্টত সেই সংযোগ বোঝা যায়নি। তারও ৮০০ বছর আগে ১২২৬ সালে এই মহা-সংযোগ ঘটেছিল। তবে তখন টেলিস্কোপ না থাকায় মানুষের চোখে ধরা পড়েনি। কিন্তু সেবারও ১ ডিগ্রি কৌণিক দূরত্বে দুই গ্রহ পরস্পরের কাছে এসেছিল। সেই সংযোগও ছিল এবারের মতোই দুর্লভ। আজকের মহামিলনের ৬০ বছর পরে ২০৮০ সালে ফের এই মহা-সংযোগ ঘটবে। তবে তখন বৃহস্পতি আর শনি এত কাছাকাছি আসবে না। আজ শুধু বৃহস্পতি আর শনি নয়, বৃহস্পতির চার চাঁদ অর্থাত্‍ চারটি উপগ্রহ এবং শনির চাঁদ অর্থাত্‍ টাইটান উপগ্রহকেও আকাশে দেখা গিয়েছে। যার মানে হল, বৃহস্পতি, বৃহস্পতির উপগ্রহ, শনি ও তার বলয় এবং শনির উপগ্রহ—সব মিলেমিশে গ্রহ-উপগ্রহ পুঞ্জ দেখা গিয়েছে আকাশে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *