ফতেপুর সিডি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের উদ্দ্যোগে সপ্তাহে একদিন বিদ্যালয়ের গ্রামের ছেলেমেয়েদের নিয়ে শুরু হল দুয়ারে বিদ্যালয় অভিযান
1 min readফতেপুর সিডি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের উদ্দ্যোগে সপ্তাহে একদিন বিদ্যালয়ের গ্রামের ছেলেমেয়েদের নিয়ে শুরু হল দুয়ারে বিদ্যালয় অভিযান
তপন চক্রবর্তী, কালিয়াগঞ্জ,৯ডিসেম্বর শুধু সরকারের প্রকল্প দুয়ারে সরকারই যথেষ্ট নয়।উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ ব্লকের ফতেপুর সিডি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রসূন দাস সম্ভবত এই রাজ্যে নিজের উদ্দ্যোগে এই প্রথম বিদ্যালয়ের অপর শিক্ষকদের নিয়ে দুয়ারে বিদ্যালয় অভিযান মত অভিনব উদ্যোগ দুয়ারে বিদ্যালয় অভিযান শুরু করলো বুধবার থেকে।বুধবার ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তার বিদ্যালয়ের ১০ জন সহ শিক্ষকদের নিযে চান্দলের আসে পাশের গ্রামের চারশোর অধিক ছেলেমেয়েদের নিয়ে ক্লাস শুরু করে দেন।এই ঘটনায় এলাকার মানুষজন প্রধান শিক্ষক প্রসূন দাশের এই ধরনের অভিনব উদ্যোগের জন্য সাধু বাদ জানায়।চান্দলের দিলালপুর গ্রামের গণেশ রবিদাস এক সাক্ষাৎকারে বলেন বিগত ৯ মাস ধরে করোনা আবহের কারনে আমাদের ছেলেমেয়েরা বিদ্যালয়ে যাবার কথা ভুলে গিয়েছে।পড়াশোনা একদম ছিকায় উঠেগেছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক গন যখন বাড়িতে বসে বসে মাসের পর মাস বিনা শ্রমে বেতন নিচ্ছেন তখন ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও তার বিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষক আজ থেকে যে ভাবে বাড়িতে বসে বসে বেতন নেবার পরিবর্তে বিদ্যালয় থেকে পাঁচ কিমি দূরে একটি গ্রামে গিয়ে বিদ্যালয়ের ছেলে মেয়েদের নিয়ে একটি ধান শুকানোর চাতালে বসে চার ঘণ্টা ধরে শিক্ষা দান করলেন তা অন্যান্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও অনুপ্রাণিত করবে বলে গণেশ বাবু মনে করেন।ফতেপুর সিডি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রসূন দাস এক সাক্ষাতকারে বলেন শহরের ছেলেমেয়েরা অন লাইনে পড়াশুনার সুযোগ পেলেও গ্রামের বিদ্যালয়ের ছেলেমেযেদের অন লাইনে পড়াশুনা করবার মত সুযোগ নেই।সেই কারণে আমার মনে হয়েছে শিক্ষক হিসাবে আমাদের কিছু দায় দায়িত্ব থেকেই যায়। তাই আমরা স্থির করেছি আজ থেকে যতদিন পর্যন্ত বিদ্যালয় করোনা আবহের বন্ধ থাকবে ততদিন পর্যন্ত প্ৰতি সপ্তাহে এক একটি গ্রামে গিয়ে আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের পাঠদানের ব্যবস্থ্যা করবো।
ফতেপুর সিডি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহ-কারি প্রধান শিক্ষক প্রসেনজিৎ রায় বলেন বিগত নয় মাস ধরে বিদ্যালয়ে ছাত্র ছাত্রীরা ক্লাস না করতে পারায় তারা প্রচন্ড অসুবিধার মধ্যে পড়েছে।আজকে ক্লাস নিতে গিয়ে গ্রামের ছেলেমেয়েদের মধ্যে যে উৎসাহ ও উছাস দেখা গেছে তা দেখে আমরা অভিভূত।আজকে প্রধান শিক্ষক যেমন ইংরেজী ক্লাস নিয়েছেন,তেমনি আমি প্রসেনজিৎ রায় নিয়েছি বিজ্ঞানের ক্লাস,তেমনি প্রভাষ সরকার অঙ্কের ক্লাস,পলাশ বর্মন নিয়েছেন অঙ্কের ক্লাস,কার্তিক রায় নিয়েছেন বাংলার ক্লাস,জয়ন্ত প্রামানিক নিয়েছেন দর্শনের ক্লাস,বিশ্বম্ভর রায় নিয়েছেন বিজ্ঞানের ক্লাস,খেলারাম সরকার নিয়েছেন বাংলার ক্লাস,নারোদ সরকার নিয়েছেন সংস্কৃতের ক্লাস।বুধবারের গ্রামের ক্লাসে পঞ্চম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রীদের ক্লাস নেওয়া হয়।
ফতেপুর সিডি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী লক্ষী সরকার এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন আমরা বিদ্যালয়ে করোনার জন্য না যেতে পাড়ায় আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে।আরো কতদিন এভাবে চলবে বলা যাচ্ছেনা।সেক্ষেত্রে আমাদের বিদ্যালয় আমাদের গ্রামে এসে যে ভাবে আমাদের পড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে তা আমাদের ভীষণ উপকারে লাগবে বলে জানায়।দশম শ্রেণীর ছাত্রী নবনীতা বর্মন বলেন আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আমাদের পড়াশোনার জন্য চিন্তা করেছেন তার জন্য আমরা গর্বিত।
বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র সনাতন সরকার বলেন আমাদের বিদ্যালয় যে ভাবে গ্রামে গ্রামে গিয়ে ক্লাস নিচ্ছে এই ভাবে সমস্ত বিদ্যালয়কে এগিয়ে আসা উচিত বলে সে মনে করে।আজকের ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দুয়ারে বিদ্যালয়ের ঘটনা দেখে কালিয়াগঞ্জের বিধায়ক তপন দেব সিংহ ফতেপুর বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এই অভিনব নেবার জন্য তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন।উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের কো-মেন্টর অসীম ঘোষকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে অসীম বাবু বলেন ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহ যে সমস্ত শিক্ষকরা বিদ্যালয় থেকে চার মাইল দূরে গিয়ে আনুমানিক চারশো ছেলে মেয়েদের পাঠ দানের ব্যবস্থা করেছেন তা শুধু অভিনন্দন যোগ্যই নয় অন্য শিক্ষকদের কাছেও অনুসরণ যোগ্য হওয়া উচিৎ বলে তিনি মনে করেন।শিক্ষার কারিগরদের এই রকম ভূমিকা সকলকে মুগ্ধ করেছে।আমি ব্যক্তিগত ভাবে এই সমস্ত শিক্ষকদের অভিনন্দন জানাই।