October 28, 2024

ক্রিং ক্রিং বেল বাজানো সবুজ সাথী বাংলার ঘড়ে ঘড়ে কন্যাশ্রী থেকে রুপশ্রী।

1 min read

ক্রিং ক্রিং বেল বাজানো সবুজ সাথী বাংলার ঘড়ে ঘড়ে কন্যাশ্রী থেকে রুপশ্রী।

৭ ডিসেম্বর সোমবার। জয়ন্ত বোস, কালিয়াগঞ্জ, উঃ দিনাজপুর।আজকের প্রতিবেদন আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে লেখা বিশেষ একটি রাজনৈতিক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে। লিখতে বাধ্য হলাম এই বাংলার অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের একজন বাঙালি সন্তান সাংবাদিকতার পরিচয়ে। এই প্রতিবেদন টি শেষ পর্যন্ত পড়বার আবেদন রেখেই শুরু করলাম আজকের প্রতিবেদন ” ক্রিং ক্রিং বেল বাজানো সবুজ সাথী বাংলার ঘড়ে ঘড়ে কন্যাশ্রী থেকে রুপশ্রী”।

রাজনৈতিক আঙ্গিনায় রাজনৈতিক বিভিন্ন দল ও তাদের কর্মসূচি, তাদের বক্তব্য এবং সরকারে আসিন রাজনৈতিক দলের বিরোধীতায় বিরোধী রাজনৈতিক দলের হাজারো বক্তব্য থাকবে এবং থাকতেই পারে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারে আসীন বিজেপি দলের তথাকথিত নেতৃত্ব বিশেষ করে এই বাংলার কৃতি বাঙালি বিজেপি নেতৃত্ব বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি বাংলার মসনদে বসলে এই পশ্চিমবঙ্গ কে নাকি দ্বিতীয় গুজরাট তৈরী করবেন অর্থাৎ গুজরাট মডেলে বাংলা কে গড়ে তুলবেন। এই ভাষ্যের বিরোধীতায় আজকের এই প্রতিবেদন প্রকাশ।

দেশ স্বাধীনতার প্রাক্কালে ইংরেজরা এক কুটনৈতিক চালে বাংলাকে দুইভাগে বিভক্ত করে আপামর বাঙালির মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়েছিল। তেমনি বাংলার মসনদে বসার রাজনৈতিক স্বার্থে বাংলাকে দ্বিতীয় গুজরাট বানানোর ছক কৌশল আরো একবার বাংলার দফারফা করবার সূদুর প্রসারিত চক্রান্ত এই বাংলার সর্বস্তরের মানুষের কাছে আশীর্বাদ নয় , অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে এই শঙ্কায় শঙ্কিত আপামর বাংলার মানুষ। আর আশীর্বাদের চিন্তায় ইংরেজদের মতো বাংলার রাজনৈতিক আঙ্গিনায় যে আস্ফালনে ইতিমধ্যেই বাজার গরম করে ভোটের হাওয়া নিজেদের পালে নেওয়ার চেষ্টায় দিনরাত এক করে চলেছেন তাদের কাছে একটাই অনুরোধ গুজরাট মডেল টি কি তার বিস্তারিত বিবরণ বাংলার জনতার হাতে প্রকাশিত আকারে পৌঁছে দিন ।

তবে গুজরাট মডেল বলতে নিশ্চিত ” জয় শ্রীরাম ” ধ্বনি দিয়ে ধর্মের জিগির নয়। ২০১১ সালে এই বাংলার রাজনৈতিক মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মা মাটি মানুষ নামে সরকারের সূচনা। দেখতে দেখতে ৯ বছর অতিক্রান্ত হয়ে দশ বছরে পদার্পনের পথে। অনেক চড়াই উৎরাই এর পথ ধরে এই বাংলার বাঙালি, অবাঙালি বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে বর্তমান সরকার একাধিক সরকারি প্রকল্প চালু করে পরিষেবা প্রতিটি ঘড়ে ঘড়ে পৌঁছে দিয়েছে এবং প্রতিটি পরিবার সেই সুযোগ গুলো পেয়ে উপকৃত হয়েছেন এই কথা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বাংলার মাটিতে বিশ্ববাংলার তকমায় ভূষিত করেছেন। এতো নতুন কথা নয়। পশ্চিমবঙ্গের তথা ভারতের বীর সন্তান স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৯৩ সালে বিশ্বের দরবারে এই বাংলা তথা ভারতের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ করেছিলেন শিকাগো সম্মেলনে যা বিশ্বব্যাপী মানুষ জানে। সেই সম্মেলনে ভারতবাসীর হয়ে এই বাংলার কৃষ্টি কালচার ও সংস্কৃতির ধারায় শিক্ষা ও দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে রিপ্রেজেন্ট করেছিলেন স্বামীজি। সেইদিন থেকেইতো বিশ্ববাংলার নামাঙ্কের সূচনা। আর আজ সেইদিনের বিশ্ববাংলার নামাঙ্কের পরিধি আরো বেশি করে তার পরিধি বিস্তৃত হলো এই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় ও উদ্দ্যোগে তার মস্তিষ্ক প্রসূত গ্রাম থেকে শহরের অলিগলি থেকে স্কুল যাওয়ার পথে ক্রিং ক্রিং বেল বাজানো সবুজ সাথী তে বাংলার ঘড়ে ঘড়ে কন্যাশ্রী রুপশ্রীরা। স্বামী বিবেকানন্দ কতৃক সেইদিনের অঘোষিত বিশ্ববাংলা আরো বেশি করে নামাঙ্কিত হয়ে বিশ্বের দরবারে কোটি কোটি মানুষের কাছে সমাদৃত হলো এই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় ও উদ্দ্যোগে তাঁর মস্তিষ্ক প্রসূত কন্যাশ্রী ও সবুজ সাথী। অল্প বয়সে মেয়েদের অর্থাৎ ১৮ বছরের নীচে মেয়েদের বিবাহ দেওয়া বন্ধ করা অর্থাৎ বাল্যবিবাহ রোধের সাথে মেয়েদের শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে এই বাংলায় চালু হলো সকল ধর্মাবলম্বী পরিবারের স্কুল পড়ুয়া মেয়েদের জন্য কন্যাশ্রী প্রকল্প যা বিশ্বের ৬৩ দেশের ৫৫২ টি প্রকল্পের মধ্যে ২০১৭ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘের জনপরিষেবা মঞ্চে প্রথম স্থান শিরোপা অর্জন করে। সেই কন্যাশ্রীরা রাস্তা দিয়ে বাড়ি থেকে স্কুল যেতে শুরু করলো ক্রিং ক্রিং বেল বাজিয়ে সাইকেল নিয়ে এক অনাবিল আনন্দের মাঝে দলবেঁধে। সেটাইতো এই বাংলার সবুজ সাথী যা রাষ্ট্রসঙ্ঘ কতৃক স্বীকৃত ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি বিশ্বের ১৬০ টি দেশের ৮০০ টি প্রকল্পের মধ্যে সেরা শিরোপার স্বীকৃতি দিয়েছিল এই বাংলার সবুজ সাথী কে। হ্যাঁ, বিশ্বের দরবারে বাংলার মডেল। ১৮ বছর পূর্ণ হয়ে গেলে পরিবার থেকে সেই কন্যাশ্রী কে যখন বিয়ে দেওয়ার জন্য এই বাংলার আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে স্বল্প আয় করা অভিভাবকরা প্রস্তুতি নিচ্ছে ঠিক সেই সময় বিয়ের জন্য পরিবারের হাতে আর্থিক সাহায্য তুলে দিতে এই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর মমতাময়ী উদ্দ্যোগে চালু করলেন রুপশ্রী প্রকল্প। এইতো বাংলার মডেল। বিশ্ববাংলা তো স্নো, পাউডার, ক্রিম লাগিয়ে তার নামের উৎকর্ষতা পায় নি, পেয়েছে অসাধারণ পরিষেবার নিরিখে, সেখানে আজোও ভারতবাসীর হৃদয়ে পেসমেকার যন্ত্রের মতো ইনস্টল হয়ে আছে গুজরাট মডেল ” দাঙ্গার মডেল ” হিসেবে। তবুও একটি ২০১৯ আর্থিক বছরে এই বাংলার GSDP ৫.৪ শতাংশ ছুঁয়েছে যা গুজরাতের (৫.৩ শতাংশ) তুলনায় সামান্য বেশি। বেকারত্ব নির্ভর করে অর্থনীতির প্রকৃতির উপর। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৮-১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে প্রাথমিক ক্ষেত্রে (কৃষি ও এর সঙ্গে যুক্ত পরিষেবা) অংশীদারিত্ব ছিল ২১ শতাংশ, গুজরাতে সেখানে অংশীদারিত্বের পরিমাণ ছিল ১৫ শতাংশ। তবে গুজরাতের অর্থনীতির ৪০ শতাংশই সেকেন্ডারি সেক্টর ( শিল্প উৎপাদন) থেকে এসেছে। সেখানে বাংলায় এই ক্ষেত্রের অংশীদ্বারিত্বের পিরামণ মাত্র ২৫ শতাংশ। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হল, পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয় ক্ষেত্রে (ব্যাঙ্কিং এর মত পরিষেবা) জিএসডিপির পরিমাণ ৫১ শতাংশে, সেখানে গুজরাতে এটি কেবল ৩১ শতাংশ। দুটি রাজ্যের ভৌগলিক অবস্থান নিশ্চিত জেনেই বলা হচ্ছে বাংলায় গুজরাট মডেল তৈরী করা হবে। গুজরাট রাজ্যে যেখানে বেশীরভাগ শহর কেন্দ্রিক সেখানে পশ্চিমবঙ্গে বেশিরভাগ গ্রামাঞ্চল কেন্দ্রিক। শহরাঞ্চল শিল্প কারখানা সমৃদ্ধ এবং গ্রামাঞ্চল কৃষি নির্ভর প্রধান। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এই বাংলায় বাংলার মডেল গড়ে তুলে বাংলার কৃষ্টি কালচার ও সংস্কৃতির ধারার সাথে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমুখী করে তুলবার ভাষা প্রয়োগে হয়তো গ্রহনযোগ্যতা বাড়বে কিন্তু দাঙ্গার গুজরাট মডেল না বানানোই সমীচীন। দেশের আর্থিক পরিস্থিতির কাঠামো নাকি ছোট্ট একটি দেশ বাংলাদেশের চেয়েও পিছিয়ে গেছে। তাই বিজেপি শাষিত কেন্দ্র সরকার কতৃক দেশের আর্থিক মডেল সর্বস্তরের দেশবাসীর স্বার্থে প্রয়োগ করবার সচেষ্ট হতে হবে গুজরাট মডেলের কিংবদন্তি রাজনৈতিক খেলোয়াড় দের তারপরে না হয় বাংলার মডেল কে নিয়ে চিন্তা ভাবনা, তাই নয় কি। এমন কৃষিবিল আধয়ন হয়েছে যেখানে দেশের কৃষক সমাজ দিল্লির রাজপথে বিদ্রোহ ঘোষণা করছে। দৈনন্দিন জিনিসপত্রের ক্রমবর্ধমান মূল্য বৃদ্ধি, পেট্রল ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি , দেশের মানুষ কে পাগল করে তুলেছে, সেখানে গোঁফ পাকিয়ে , চোখ রাঙিয়ে, ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরনে জয় শ্রীরাম ধ্বনি উচ্চারন করে কি শুধু উন্নয়নের মডেল তৈরী করা যায় ? বিশ্ব গুজরাট তৈরী করা যায় ? তবে বাস্তব বিশ্ববাংলা তৈরী হয়েছে বলেই বিশ্বের দরবারে ক্রিং ক্রিং আওয়াজ পৌঁছে গিয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *