‘বিশিষ্ট নেতা’-র শর্ত কি মানতে পারবে দল শুভেন্দুর সঙ্গে ফের বসবেন সৌগত
1 min read‘বিশিষ্ট নেতা’-র শর্ত কি মানতে পারবে দল শুভেন্দুর সঙ্গে ফের বসবেন সৌগত
পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরে সভা ছিল শুভেন্দু অধিকারীর। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী আমাকে তাড়াননি, আমিও দল ছাড়িনি।’ কিন্তু তার পর? তাতে কি স্পষ্ট করে বোঝা গেল শুভেন্দুর দল ছাড়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই?
পরিস্থিতি যখন এমনই তখন তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সৌগত রায় এদিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, শুভেন্দুর সঙ্গে আরও একবার আলোচনায় বসতে পারেন তিনি। সৌগতবাবুর কথায়, ‘মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন বলেই গত সপ্তাহে শুভেন্দুর সঙ্গে একবার বসেছিলাম। অনেক কথা হয়েছে। তবে শুভেন্দু দল ছাড়া নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেনি। ওঁর কোনও দাবিও নেই। তবে হ্যাঁ শুভেন্দুর কিছু বক্তব্য আছে। তা আমি শুনেছি’। শুভেন্দুর সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রথমে প্রশান্ত কিশোরকে উদ্যোগ নিতে দেখা যায়। সে চেষ্টা ব্যর্থ হয় বলেই খবর। পরে দলের দুই প্রবীণ সাংসদকে এই দায়িত্ব দিয়েছিলেন দিদি।
সৌগত রায় ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে কদিন আগে সৌগত রায়ই একা কথা বলেন শুভেন্দুর সঙ্গে। দলের একাংশের মতে, শুভেন্দুর এই পদক্ষেপে স্পষ্ট একটা বার্তা রয়েছে। তা হল- প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে বসব না কিন্তু সৌগত রায়ের মতো দলের প্রবীণ নেতার সঙ্গে আলোচনায় রাজি। অর্থাত্ দলের কথা দলের লোকের সঙ্গেই হবে। বহিরাগতর সঙ্গে নয়। সৌগতবাবু অবশ্য এদিন সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘শুভেন্দুর কি বক্তব্য আছে সেটা আমি সংবাদ মাধ্যমে বলব না। সেটা বলা উচিতও নয়’। তবে তিনি জানান, শুভেন্দুর বক্তব্য তিনি দিদিকে জানিয়েছেন। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কেও তা জানাবেন। আগামী সপ্তাহে ফের শুভেন্দুর সঙ্গে তাঁর বসার কথা আছে। অনেকের মতে, দিদির সঙ্গে শুভেন্দুর যে এখন সরাসরি কথা নেই তার ইঙ্গিত সৌগতবাবুর বক্তব্যেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এও বোঝা যাচ্ছে, শুভেন্দুর বক্তব্য নিয়ে নিশ্চয়ই দিদি কোনও মত জানিয়েছেন। সেই কথাটাই শুভেন্দুকে হয়তো জানাবেন সৌগতবাবু। এখন কৌতূহলের বিষয় হল, শুভেন্দুর কি বক্তব্য? সৌগত রায়কে তিনি কী বলেছেন? সে কথা প্রকাশ্যে দু’জনের কেউই বলতে চাননি। সাংবাদিকরা একশ বার প্রশ্ন করলেও না। কিন্তু রাজনীতির কথা ফাঁকফোকর গলে বেরিয়েই পড়ে। তাতে জল্পনা ও কল্পনার রঙও লাগে কিছুটা। তবে একটি সূত্রের দাবি, শুভেন্দুর দুটো স্পষ্ট শর্ত রয়েছে। এক, প্রশান্ত কিশোর সংগঠনের বিষয়আশয় ও ভোটের ব্যাপারে নাক গলাবেন কেন। তাঁকে সরাতে হবে। দুই, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে দল চলবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই আগের মতো সরাসরি নির্দেশ দিতে হবে। পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, শুভেন্দু যদি এই শর্ত দিয়ে থাকে তা হলে তা পুরোপুরি মেনে নেওয়া দলের পক্ষে কঠিন। তবে হ্যাঁ, নিশ্চয়ই কোনও মধ্যপথ বা রফাসূত্র বের করার প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। সেটা শুভেন্দু মেনে নেবেন কিনা সেটাই দেখার। তাত্পর্যপূর্ণ হল, সৌগতবাবুর সঙ্গে ফের বসার আগে শুভেন্দুও আজ ‘শিষ্টাচার’ রক্ষার চেষ্টা করেছেন বলে তাঁর অনুগামীদের মত। দল ও সরকারের বিরুদ্ধে তিনি কোনও কথা বলেননি। অবশ্য সম্ভাবনার দরজা খুলে রাখার বার্তা দিয়ে বলেছেন, ‘দল করতে বিভিন্ন কারণে গেলে বিভেদ আসে। বিভেদ থেকে বিচ্ছেদও আসে। কিন্তু যতক্ষণ মন্ত্রিসভায় আছি বা দলে আছি, ততক্ষণ কোনও রাজনৈতিক কথা বলা যায় না। আমি সেটা বলতে পারি না’। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, আরও একটা ব্যাপার এখানে গুরুত্বপূর্ণ। এটা ঠিক রাজনীতিতে কোনওকিছুই নিত্য নয়। বহু সময়েই মান অভিমান অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে। কিন্তু যে মনকষাকষি বা টানাপোড়েন এখন দিদি ও শুভেন্দুর মধ্যে চলছে তার পর কি আস্থার ও ভরসার সম্পর্ক থাকা সম্ভব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী দুজনেই মজবুত নেতা। কিন্তু দুজনেই অনেকাংশে আবেগপ্রবণ। ফলে সবকিছুর পরে একটা কিন্তু থেকে যাচ্ছে না কি! এসবের মধ্যে দলীয় তরফে আজও তৃণমূলের মুখপাত্ররা বলেছেন, ‘শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলের বিশিষ্ট নেতা। দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটির সদস্য এবং মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী।’