October 27, 2024

সপ্তাহ ব্যাপী নিরামিষ আহার গ্রহণ করেন গ্রামের বধূরা কালিয়াগঞ্জের লক্ষীপুজা উপলক্ষে

1 min read

সপ্তাহ ব্যাপী নিরামিষ আহার গ্রহণ করেন গ্রামের বধূরা কালিয়াগঞ্জের লক্ষীপুজা উপলক্ষে

তনময় চক্রবর্তী বাংলার বারো মাসে তেরো পার্বন। আর তেরো পার্বনের মধ্যে একটি পার্বন কোজাগরি লক্ষ্মী পূজা। আর পাঁচজন বাঙালীরা যখন লক্ষ্মী পূজায় দিনে বাড়িতে বাড়িতে লক্ষ্মী পূজা করে ঠিক তখন এক মাত্র ব্যাতিক্রম উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জের ৭নম্বর ভাণ্ডার গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব ভাণ্ডার গ্রামে। এখানে লক্ষ্মী পূজা হয় সার্বজনীন ভাবে। কারণ এই গ্রামের আরাধ্যা দেবী লক্ষী নারায়ণ।

এখনে দশমীর পরের দিন থেকে গ্রামের কোন বাড়িতে আমিশ রান্না হয় না। গ্রামের সকলে এই লক্ষ্মী পূজা করতে ব্যস্ত থাকে।গ্রামবাসিরা জানান, আজ থেকে ২০ বছর আগে লক্ষ্মী পূজাকে কেন্দ্র করে গ্রামে বাউল উৎসব চলছিল সেই সময় গ্রামের কৃষক নরেশ চন্দ্র বর্মন, স্থানীয় গোকুল চন্দ্র বর্মণের জমিতে চাষ করার সময় নরেশ বাবুর লাঙ্গলের ফলায় আটকে যায় একটি পাথর। সঙ্গে সঙ্গে সে কোদাল দিয়ে পাথরটিকে তোলে।

পাথরটি জল দিয়ে পরিস্কার করলে দেখা যায় কালো পাথরে খোঁদায় করা লক্ষ্মী নারায়নের মূর্তি। মূর্তি পাওয়ার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়তেই সেই গ্রাম থেকে এমনকি দূরদূরান্ত থেকে কয়েক হাজার লোক হাজির হয়ে যায় ঐ মাঠে। এরপর পূর্ব ভাণ্ডার গ্রামের বাসিন্দারা ঐ কালো পাথরের মূর্তিটিকে তাঁদের গ্রামে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে নিয়ে আসে। খবর পেয়ে কালিয়াগঞ্জ থানা, জেলা প্রশাসন ও প্রত্নতাত্ত্বিকরাও ছুটে আসে।

মূর্তিটির পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানা যায় সেটি কষ্টি পাথরের মূর্তি। মূর্তিটি লম্বায় প্রায় দের ফিট, চওড়ায় এক ফিট। প্রশাসনের তরফ থেকে মূর্তিটিকে নিয়ে যাবার চেষ্টা করা হলে গ্রামবাসীদের বাঁধার মুখে পরে শেষ পর্যন্ত প্রশাসনকে খালি হাতে ফিরে যেতে হয়। এরপর পূর্ব ভাণ্ডার গ্রামের বাসিন্দারা একটি মন্দির বানিয়ে মূর্তিটির পূজো শুরু করেন সেই সময় থেকে। সারা বছর নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে দুবেলা করে পূজো হয় এই দেবীর উদ্দ্যেশে সেই মন্দিরে। কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার দিনটিতে মহাসমরহে পূজার আয়োজন করা হয় এখানে। প্রতিবছর লক্ষ্মী পুজার দিন গ্রামের মহিলারা এই বিশেষ লক্ষ্মী পূজা পরিচালনা করেন।মন্দিরে পূজা না দিলে ওই এলাকার গৃহস্থরা স্বস্তি পান না। এই পূজাকে কেন্দ্র করে গ্রামের সমস্ত মহিলারা উপোষ থাকেন। বছরের প্রতিদিন নিয়ম করে সকাল ও সন্ধ্যের সময় পূজা করা হয় এখানে। এই লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির খুব জাগ্রত বলে কথিত রয়েছে। এখানে কেউ কোন কিছু মানত করলে মা লক্ষ্মী তাঁদের খালি হাতে ফেরান না বলেও মনে করে ভক্তের দল। তাই গ্রামে বিয়ে বা অন্নপ্রাশন হলে লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দিরে এসে গ্রামবাসীরা প্রথমে পূজা দিয়ে যান। ঐতিহ্য পরম্পরা মেনে এবছরও আয়োজন হয়েছে এই পূজার।প্রতিবছর এই লক্ষ্মী পূজা কে কেন্দ্র করে গ্রামে কয়েকদিন ধরে চলে বাউল উৎসব তবে এ বছর করোনা আবহ থাকায় সেই উৎসব এবার হচ্ছে না বলে জানা যায়।চূড়ান্ত সতর্কতার সাথে এবার পুজো অনুষ্ঠিত হচ্ছে লক্ষ্মী পূজার দিন এই গ্রামে। তাই এখন সাজে সাজো রব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *