October 25, 2024

ফুটবল খেলার সুবাদে চাকরি পেয়ে অবসর গ্রহণের পরেও লকডাউনের মাঝে রাম ঘোষ ফুটবল কোচিংয়ের নেশায় মশগুল

1 min read

ফুটবল খেলার সুবাদে চাকরি পেয়ে অবসর গ্রহণের পরেও লকডাউনের মাঝে রাম ঘোষ ফুটবল কোচিংয়ের নেশায় মশগুল

তপন চক্রবর্তী,কালিয়াগঞ্জ(উত্তর দিনাজপুর),২৬ জুন:প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই ছোট্ট রাম ঘোষ কখন কোন সময় যে ফুটবলের প্রেমে পড়েছিলেন রাম ঘোষের কাছেও আজও তা এখনো অজানা। ছোট বেলায় তার একমাত্র ফুটবলই ছিল প্রিয় খেলার সাথী। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে হাই স্কুলে যাবার পর রামবাবুর ফুটবল খেলার ঝোঁক ক্রমশ বেড়ে যায়।

ব্লকের পরিচালনায় ইসলামপুর মাঠে বিদ্যালয়ের হয়ে খেলতে গিয়ে রাম ঘোষের খেলা দেখতে গিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষকের চক্ষুচড়কগাছ হয়ে যায়।বিদ্যালয়ের ছাত্র রাম ঘোষের কর্নার কিক থেকে একটা দর্শনীয় গোল হবার পর তখন তা দেখে বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রয়াত যতীন ঠাকুর আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়।খেলা শেষে বিদ্যালয়ের প্রয়াত শিক্ষক প্রয়াত যতীন ঠাকুর তার প্রিয় ছাত্র রামচন্দ্র ঘোষের খেলা দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকে একজোড়া বুট উপহার দিয়ে বলেন তুই ফুটবল খেলাকে কখনো অবহেলা করিস না।

তোর হবে।তুই একদিন উত্তরবঙ্গের বড় খেলোয়াড় হবি বলে আশীর্বাদ করেন।রামবাবু শিক্ষকের হাত থেকে ফুটবল উপহার ও আশিবাদ পেয়ে তার ফুটবল খেলার প্ৰতি নেশা অনেক মাত্রায় বেড়ে যায়।পরবর্তীতে রামঘোষ আরো দক্ষতার সাথে খেলতে শুরু করে।পরবর্তীতে রাম ঘোষ শিলিগুড়িতে গিয়ে “বি” ডিভিশনের ফুটবল লীগের খেলার সুযোগ পায়।সেখানে দুই বছর খেলেন।পরবর্তীতে এক বছর “এ” ডিভিশনে খেলার সুযোগ করে নেয় রাম ঘোষ।পরবর্তীতে শিলিগুড়ি স্পোর্টিং ইউনিয়নে দুই বছর বাঘা যতীন ক্লাব এবং মহানন্দা স্পোর্টিং ক্লাবের লীগ খেলার সুযোগ পায় রাম বাবু।এরপর ১৯৭৮ সালে রামচন্দ্র ঘোষ পশ্চিম দিনাজপুর জুনিয়র দলের হয়ে উত্তর ২৪ পরগনার বিরুদ্ধে দারুন খেললেও হাওড়ার কাছে ১–০গোলে তার দল হেরে যায়।পরবর্তীতে রামচন্দ্র ঘোষ পুরা ফর্মে থাকায় রাম ঘোষের দুরন্ত ফুটবল খেলা দেখার সৌভাগ্য হয় উত্তরবঙ্গ তিস্তা প্রকল্পের এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের।ভালো ফুটবল খেলার সুবাদে রাম ঘোষকে তিস্তা প্রকল্পের ইন্জিনিয়ার ডেকে চাকরিতে বহাল করেন। পরবর্তীতে এক বছরের মধ্যেই চাকরি নিয়মিত নিয়মিত হয়ে যায়।রামবাবু বলেন বাবার চায়ের দোকানের উপর খুব কষ্টে আমাদের পরিবার চলতো এক সময়।তিনি বলেন তিনটি বছর ডালখোলায় থাকার সময় আমার দুই ঘনিষ্ট বন্ধু দীপঙ্কর দে এবং রমেশ ভগৎ আমাকে নানাভাবে খেলা ধুলার ক্ষেত্রে সাহায্য করতো।দীপঙ্কর এবং রমেশ ভগৎ অত্যন্ত ভালো ফুটবলার একসময় ছিল।রাম বাবু বলেন বিধান নগর ক্লাবে১৯৭৯ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ফুটবল লীগ খেলেছে।এসব ছাড়াও রাম ঘোষ বলেন তিনি শিলিগুড়ি থেকে রেফারি পরীক্ষায় পাশ করে কিছুদিন রেফারির ভূমিকা সুনামের সাথেই পালন করেছেন।রাম ঘোষ বলেন ইসলামপুরে যে ফুটবল কোচিং ক্যাম্প করেছি তা করার পেছনে মুখ্য ভূমিকা ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন শংকর কুন্ডু,রাজ সাহানী এবং দেবাশীষ দত্ত।রামবাবু বলেন সে দুটো কোচিং ক্যাম্প চালিয়ে যাচ্ছে।মূল কোচিং ক্যাম্পটি চলে ইসলামপুরের মোহন মাঠে আদিবাসী মহিলাদের নিয়ে।সেখানে ৩০জন আদিবাসী মহিলারা কোচিং নিয়ে থাকে।অপর কোচিং ক্যাম্পটি নন্দঝাড় ছাত্র সমাজ নামে মহিলা কোচিং ক্যাম্প চালাচ্ছি।যেখানে ৪০জনের মত আদিবাসী মেয়ে আছে যাদের খেলার মান বেশ উন্নতমানের।রাম ঘোষ বলেন লকডাউনে প্রায় তিন মাস কোচিং ক্যাম্প বন্ধ থাকলেও বর্তমানে কিছুটা ছাড় পাবার সাথে সাথে আবার পূর্ন উদ্যোগ নিয়ে কোচিং ক্যাম্প শুরু করে দিয়েছি।সব ছেলে মেয়েরা এখনো ঠিক মত আসা শুরু করতে পারেনি।তবে তার মধ্যেই অনেকে আসা শুরু করে দিয়েছে।তার কাছ থেকে যারা কোচিং নিয়ে ভালো খেলছে তাদের মধ্যে নন্দদুলাল ঘোষ,রথীন ঘোষ রায় সহ বেশ কয়েকজন আদিবাসী মহিলাও আছে। রামঘোষ কোচের প্রশিক্ষণ নেন বিশিষ্ট ফুটবল কোচ বাবু দাসমুন্সির কাছ থেকে দীর্ঘ দিন ধরে।তিনি বলেন দীর্ঘদিন ফুটবল খেলেছেন কিন্তু বয়স হবার পর সিধান্ত নেন এবার এদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ভালো ফুটবলার আমাকে তৈরি করতে হবে।এটাই আমার জীবলের স্বপ্ন।এক প্রশ্নের উত্তরে রাম ঘোষ বলেন তাকে ২০১৮ সালে রায়গঞ্জ টাউন ক্লাবের পক্ষ থেকে বড়সড় একটি সম্বর্ধনা দেওয়ায় রায়গঞ্জ টাউন ক্লাবের সম্পাদক অরিজিৎ ঘোষ সহ ক্লাব কর্তৃপক্ষকে তিনি অভিনন্দন জানান।রায়গঞ্জ টাউন ক্লাবের সম্পাদক তথা উত্তরবঙ্গের বিশিষ্ট ফুটবল খেলোয়াড় অরিজিৎ ঘোষ বলেন ইসলামপুরের ফুটবল খেলোয়াড় রাম ঘোষ একজন দক্ষ ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন।উত্তরবঙ্গের ফুটবল খেলার জগতে রাম ঘোষ না থাকলেও ফুটবল খেলোয়াড় তৈরি করতে আজও অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *