October 25, 2024

‘শহরের নিচে শহর সভ্যতা আজ’ – বললেন তাপস পাল :

1 min read

‘শহরের নিচে শহর সভ্যতা আজ’ – বললেন তাপস পাল 

তন্ময় চক্রবর্তী আপনার ভাববেন পঞ্চভূত এর আবার DNA ! হ্যা, মানুষের মত পঞ্চভূত এরও DNA আছে | তবে এটা তার নিজেস্ব প্রাকৃতিক ডিএনএ | নিজেস্ব গঠন, কারণ, কর্ম, উন্নয়ন দিয়ে নিজের সমস্ত পরিচিত তুলে ধরতে পারে |

পঞ্চভূত তার নিজেস্ব পরিচিতই বহন করে, উপস্থাপন করে কিন্তু আজ সে অস্তিত্ত সংকটে | মানুষের শোষণ , নিপীড়ন, খনন , ভোগ , লোভ পঞ্চভূত এর নিজেস্ব পরিচিতি উপস্থাপন এর পথ নষ্ট করে দিয়েছে | নেচার আজ পরিবেশ হয়েছে | পৃথিবীকে বাচানোর সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে | জল তার নিজেস্ব পরিচয় হারিয়ে দূষিত জল, বায়ু হয়েছে কাল-কার্বন রূপী , আলো হয়েছে অসহার গ্লোবাল ওয়ার্মিং ও ওজোন অবক্ষয়ের কাছে , মাটি হয়েছে প্লাস্টিক মাটি স্তর , আকাশ হয়েছে যন্ত্র চলার রাস্তা যেখানে পাখির ডানা নেই | তাই সময় চলে এসেছে ‘lockdown for climate দিবস পালন করার |

লকডাউন ও করোনা অনেক কিছু ভাবার সময় দিল | অনেকগুলো ভালো লাগার মধ্যে বিশেষ কিছু ছিল এই লকডাউনএ | এয়ারপোর্টের আকাশগুলোতে পাখির উড়ার কোনো অধিকার ছিল না। এই সুযোগে এয়ারপোর্টের আকাশে তারা আবার ছুঁয়ে দেখতে পারল। ট্রাইবাল গ্রামগুলিও একটু শান্তিতে ছিল। এতদিন সাদা-কালো টুরিস্টরা এদের দেখতে আসতো আর না হয় গবেষণা করতে আসতো। মনে হতো যেন ওরা চিড়িয়াখানার কোন এক আজব প্রাণীকে দেখতে আসছে| নদীর বুকে যে বোল্ডার, বালি ও মাটির খোদানের কাজ হতো, তা এখন বন্ধ , ফলে নদীগুলিও একটু বিশ্রাম নিচ্ছিল | ইকোটুরিসম এর নাম করে মানুষ যে ফ্ল্যাশ লাইট ও মোবাইল নিয়ে জন্তু তাড়া করতো তাতে তারা বিরক্ত হতো, আজ তারা বিরক্ত নয় ।


World Meteorological Organization ২০১৯ সালকে পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয় উষ্ণতম বছর হিসেবে চিহ্নিত করেছিল | পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ৩ ডিগ্ৰী থেকে ৫ ডিগ্রির দিকে ছুটে যাবে | চরমভাবাপন্ন জলবায়ু থেকে উত্তরবঙ্গও বাদ ছিলো না | ভুলে যাই আমরা ‘পরিবেশ আপনার, প্রকৃতি নয়’ | COVID-19 এর জন্য লকডাউন শুরু হয়েছে তাতে সবুজ উত্তরবঙ্গ যেন প্রাণ ফিরে পেল| হাসিমারা, মালাঙ্গী, বক্সার জঙ্গল, চিলাপাতার জঙ্গল, কুলিক ফরেস্ট, জয়ন্তী ফরেস্ট সবগুলিতেই পশুপাখিরা একটু নিজের মত চলাফেরা সুযোগ পেয়েছে | ভ্রমণ পিপাসু মানুষের সাফারি ভ্রমণ ও ক্যামেরার ফ্ল্যাশ লাইটের অত্যাচার থেকে হরিণ, প্রজাপতি, বাইসন, গন্ডার সকলে একটু শান্তির জঙ্গলকে উপভোগ করছে | টোটোপাড়া ও লেপচাখা ট্রাইবাল গ্রামগুলিতে টুরিস্টদের উপজাতি দেখতে আসার ও বিব্রত করার অত্যাচারের হাত থেকে তারাও যেন একটু শান্তিতে আছে | টুরিস্টের জন্য উত্তরবঙ্গের জঙ্গলগুলিতে ও ট্রাইবাল গ্রামগুলিতে সলিড ওয়েস্ট দূষণ বন্ধ আছে | তরাই-ডুয়ার্সে পশুরা শান্তিতে একটু নদীর জল পান করতে পারছে | তিস্তা-তোর্সা-বালাসন নদীর থেকে বালু-পাথর তোলার হিড়িক এখন বন্ধ| তাই জঙ্গলের প্রাণগুলো যন্ত্রদানবের শব্দ থেকে মুক্ত | বাগডোগরা এয়ারপোর্ট-এ বিমান ওঠা-নামা বন্ধ, ফলে এয়ারপোর্টের আকাশটা পাখিরা ছুঁয়ে যেতে পারছে | মাদারিহাট টুরিস্ট লজ, হলং ফরেস্ট বাংলো, পোরো নদীর উভয় পাশে পিকনিক স্পট বন্ধ ফলে নদী দূষণ বন্ধ | উত্তরবঙ্গের শহরগুলো যে পরিমাণ সলিড ওয়েস্ট তৈরী করতো তা ৫০শতাংশ কমে হয়ে গিয়েছে | উদাহরণস্বরূপ শিলিগুড়ির ৪৭টা ওয়ার্ডে দৈনিক সলিড ওয়েস্ট তৈরি হত ৩৫০ টন, দার্জিলিং মিউনিসিপালিটি দৈনিক মাথা পিছু এই ওয়েস্ট ৪৬৫ গ্রাম, দার্জিলিঙে ট্যুরিস্ট মরসুমে দৈনিক ৫০ মেট্রিক টন সলিড ওয়েস্ট জন্ম নিত | এশিয়ান রাজপথ-২ এ নকশালবাড়ি ও ডুয়ার্স অঞ্চলের হাতিগুলো আর ট্রেনের সাথে ধাক্কা লাগছে না কারণ রেল যোগাযোগও বন্ধ |কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছি এত প্লাস্টিক ও জল এই ৪০ দিনে ব্যবহৃত হল যা বিপদ আনবে। করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিকে যত প্লাস্টিক দিয়ে মুড়িয়ে মাটিতে করব দেওয়া হচ্ছে , তা ভবিষ্যতে পৃথিবীর মাটিতে আর থাকার জায়গা থাকবে না। চারনোবেল ভূপাল গ্যাস দুর্ঘটনার মতো, ফুকোসীমা রেডিয় অ্যাকটিভ কারখানার মতো ভয়ানক দুর্যোগ যে radiation ও কেমিক্যাল তৈরী করেছিল তা আজও মাটিতে, বায়ুতে ও জলে আছে। ১ ভাগ স্থলে যদি ৭০০ মিলিয়ন মানুষ তাদের সভ্যতা নিয়ে দখল করে থাকে ও সেই সাথে একটার পর একটা মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগে Pocket Settlement In Pockets Of Land -এ বসতি ও মানুষ থাকা নিষিদ্ধ হয়ে যায় তবে মানুষ থাকবে কোথায় | ভবিষ্যতে কিভাবে পানীয় জল পাবে মানুষ | বাঁচানোর পরিকল্পনা সব মাটি হয়ে যাবে । আগে মানুষ একবার হাত, থালা, বাটি , ঘর, মেঝে, গাড়ি, চেয়ার, বাস ধুতো | এখন কতগুন যে বেশী ধুবে তার ঠিক নেই| আর্সেনিক দূষণ সম্প্রতি আসবে |পানীয় জল শেষ হবে। নিউক্লিয়ার পাওয়ার ব্যবহারে রেডিএসন দূষণে বায়ু শেষ হবে । একটার পর একটা চিরহরিত্‍ অরণ্য পুড়ছে; কখনো আমাজন, কখনো কঙ্গো , কখনো ইতালির ন্যাশনাল পার্ক, কখনো অস্ট্রেলিয়ার ফরেস্ট |‘ফার্ণগুল্যী’ সিনেমার মতো শেষ চিরহরিত্‍ অরণ্যটাও মানুষ খেতে চলে যাবে|শহর ঢেকে গিয়েছে কংক্রিটে | জন্ম নিয়েছে Urban Beneath The Urban | অর্থাত্‍ মাটির নিচে শহর , পাহাড়ের নিচে শহর, শহরের নিচে শহর তৈরি হয়েছে | মাটির নিচে জল ঢুকতে পারছে না, অন্যদিকে G+10 ও ফ্লাই ওভার -এর মতো বাড়ি হয়ে মাটির নিচে নগর সভ্যতা জন্ম নিয়েছে। যেটুকু মাটি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে সেখানে একের পর এক কারখানা ও সেই কারখানার গাফিলতিতে আশেপাশের ১০ কিমি -৩০ কিমি অঞ্চল হয় প্লাস্টিক, নয় radiation, নয় কেমিক্যাল দিয়ে মানুষ মারার হটস্পট তৈরী করে রাখছে। মানুষ সাময়িক সমাধান করছে যেকোনো দুর্যোগের। মনে রাখবেন, প্রত্যেক দুর্যোগ আবার একটি counter ও cluster দুর্যোগ ভবিষ্যত্‍ এ আনার রাস্তা তৈরি করে রাখছে | কেন বললাম ধরুন করোনায় দুই লাখ মানুষ প্লাস্টিকের ব্যাগে মাটির নিচে চাপ পড়ল | ১০০ বছর পরেও প্লাস্টিকের এই লেয়ার এখানে থাকবে| জল যে পথে ইনফিলট্রেসন করে ভৌমজলের সাথে যুক্ত হতো, তাকে প্লাস্টিকের লেয়ার এর জন্য প্রায় সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে | তাহলে ভৌমজল রিচার্জ হবে কি করে ? শ্রীমতি , চুর্ণি র মত বহু নদী মরে গিয়েছে | মানুষ শুধু ভাবে ক্লাইমেট চেঞ্জ এর আসল কারণ | সভ্যটা হল changes in Human thinking | একের পর এক পাহাড় ডিনামাইট দিয়ে ফাটাচ্ছে| ধূলো, পাথর কৃষিজমিকে শেষ করে দিচ্ছে | চাল পাথরের মতো শক্ত হয়ে যাচ্ছে| ভালো চাল চাইছেন তো চীনের প্লাস্টিক চাল নিয়ে যাচ্ছেন । আর সচেতন হয়ে হয়তো লাভ হবে না। কারণ মানুষ পৃথিবীর বুকে যত গর্ত করছে, সেগুলো কিন্তু মাটি দিয়ে ভরাট নেই, সেগুলো নিজেই একেকটা মৃত্যুপুরী। radiation ও কেমিক্যাল এ যদি তিন জেনারেশন পর্যন্ত মানুষের ডিএনএ প্রাভাবিত হয় তাহলে পঞ্চভূত এর প্রাকৃতিক ডিএনএ নিশ্চয় প্রাভাবিত হবে |শহর বাড়ছে দুই ভাবে | vertical city যদি বাড়ান urban beneath the ground বাড়বে। যার ফলে জল যে পথে চলাচল করতো তার রাস্তা বন্ধ হবে| মাটিতে সিমেন্ট, লোহা কেমিক্যাল এর আস্তরন বাড়াবে। আর যদি horizontal city বাড়ান তো কংক্রিট জমি বেড়ে জীববৈচিত্র ও Infiltration এর রাস্তা বন্ধ করবে । ‘ অবতার ‘ সিনেমার মতো যার শক্তি থাকবে তারা শোষণ করতে থাকবে। একদিন পৃথিবীকে মা বলে ডেকেও আর রক্ষে থাকবে না। কারণ সোনার ডিম পাড়া হাঁসের মতো একদিনেই মানুষ সব সম্পদ শেষ করে দিতে চাইছে।কোটি কোটি মাস্ক ব্যবহার হল এই সময় | অধিকাংশ মানুষ সেগুলো কেয়ারলেস ভাবে ফেলেছে এখানে ওখানে । এক বার ভেবেছেন কোথায় যাবে এই সব| সকল ড্রেন, নালা, ক্যানেল এর মুখ বন্ধ হয়ে যাবে । কেরালার মতো ভয়াবহ বন্যা এবার সব জায়গায় হবে | পরিবেশ বিদ্যা বিষয়টা শুধু পাস করানোর জন্য পড়াশোনা হয়। বিশ্বের সঙ্গে তাল রেখে লোক দেখানো পরিবেশ বিদ্যার সঠিক গুরুত্ব শিক্ষাসমাজে বুঝতেই চাইছে না। প্রত্যেক শিক্ষার্থিদের এই বিষয়টি অপসোনাল নয়, কমপালসারি সহ নম্বরে ও ফীল্ড ওয়ার্কের এর উপর জোর দিতেই হবে। যা নার্সারি থেকে শুরু করতে হবে| ২০০৪ এর সুনামি যাবার পর জাপানের ছোট শিশুটি বড় হয়ে রেডিএসন বিজ্ঞানী হতে চায় কারণ জাপানে ফুকোসীমা Radioactive power station যখন ধ্বংস হয় সুনামির ৩দিন পর নিজের বাড়ি ছেড়ে বহুদূরে বছরের পর বছর মানুষকে কষ্টে থাকতে হয়েছে এমন ছবি সেই শিশুটি নিজেই দেখেছে । অন্যদিকে আজকের Gen-Z বাচ্চারা প্লাস্টিক কুরকুরে না খেলে কান্না থামে না, মোবাইলে ভিডিও গেম না দেখলে খাবার খায় না। যেকোনো দুর্যোগ হলে এখনও মানুষ ‘ ‘দুর্যোগ টুরিস্ট’ হয়ে দুর্যোগের ফটো ও ভিডিও তুলতে যায় ফেসবুক এ ও চাইনার টিকটকে লাইক পেতে |আজ ভাবনাও দূষিত। কথায় বলে না- যেখানে লক্ষ্মী থাকে, সেখানে সরস্বতী থাকে না। কথাটা ঠিকই | অর্থ পকেটে ভরতে ভরতে মানুষ ভুলে যায় পকেটের সুতোটা সরস্বতীর বিদ্যার ও বুদ্ধির দান। যেকোনো সময়েই ফুটো হতে পারে। অর্থই অনর্থের মূল। প্রমোশন, চেয়ার, গদির লোভে চারনোবেল দুর্ঘটনা হয়েছিল ভুলে যাবেন না। লোকে তৃতীয়, চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধের লিস্ট বানাচ্ছেন | করোনা ভাইরাস নিয়ে শেষ ছয়মাস ধরে যা হচ্ছে এটা কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছিল না? এটি তো ভাইরাস বনাম মানুষের তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছিল । আর থাকলো জলের অভাবে বিশ্বযুদ্ধ বা পারমাণবিক বা নিউক্লিয়ার যুদ্ধ যা হবে বলে মনে করা হয়; সেগুলি আসলে যুদ্ধ হবে না, যুদ্ধের সমাপ্তি বা ইতি ঘোষণা হবে মাত্র। কারণ ‘সাইলেন্ট রানিং ‘ সিনেমার ছবিটি ‘কালমের ২০৭০ চিঠি’র সময় আসার আগেই হয়ত আসবে যখন কয়েকজন মানুষ পৃথিবীর জীববৈচিত্র নিয়ে মহাকাশে ঘুরে বেড়াবে শেষ পৃথিবী দিবসটি পালন করতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *