October 26, 2024

নিরালার ঠিকানা সিলারি গাঁও

1 min read
দেবাঞ্জলী চক্রবর্তী, কলকাতা 

:গরমের ছুটি চলছে , পড়াশোনার চাপও বাচ্চাদের এখন কম তাই সবারই মোটামুটি এখন মন উড়ু উড়ু করে কোথাও একটা  ঘুরতে যাই আর সেটাতে যদি অফিসের ছুটি বাঁধ সাধে বা বস্ এর  ব্যাজার মুখে দিন দুই – তিন ছুটি মঞ্জুর হয় তাহলে কাছাকাছি  এমন পর্যটন কেন্দ্র মন্দ কি যেখানে পাহাড়ি সৌন্দর্য,  সূর্যোদয়,  পাহাড়ি নদী দেখতে পাবো । বাড়ির ছাদ বা বাড়ির  সাজানো গোছানো ব্যালকনি থেকে দূষণযুক্ত  আকাশে মাঝে মাঝে সূর্যোদয় দেখা গেলেও সেই মজা নেই যা পাহাড়ের কোলে আছে।

যেমন ভাবা তেমন কাজ — ” আমাদের ছুটি ছুটি/  চল্ নেব লুটি/  এই আনন্দ ধরে না ” গাইতে গাইতে আমরা পৌছে গেলাম কালিংপঙ থেকে 15 কি.মি দূরে ইচ্ছে গাঁও । পথে যেতে যেতে বেশ অনুধাবন করতে পারছিলাম যে  কাঞ্চনজঙ্ঘার কোলে শান্ত সাজানো গোছানো একটি পাহাড়ি গ্রাম যেখানে আকাশ নদী আর পাহাড় মিলেমিশে একাকার হয়েছে । ইচ্ছে ডানায় ভর করে ইচছেগাঁও পৌছে আপ্লুত হলাম এখানকার মানুষের উষ্ণ অভ্যর্থনায় । এখানে স্থানীয় লোকেদের তৈরী হোম স্টে আছে যেখানে তাদের জমির টাটকা সব্জির রান্না তৈরী করে দেন। আর গরম গরম মোমো খেতে খেতে পাইন গাছের বনের সবুজ উপত্যকা চাক্ষুষ করা যেন এক অনাবিল আনন্দ । তবে হ্যাঁ,  প্রখর রোদের তেজ এখানে নেই সারাদিনই প্রায় রোদ আর মেঘের মান অভিমান খেলা চলতেই থাকে। ইচছেগাঁও থেকে আরও দুই কিলোমিটার দূরে আরও একটি রূপকথার গল্পের মত সুন্দর পাহাড়ী গ্রাম সিলারি গাঁও ।
সিলারি গাঁও
 এতদিন লোকমুখে গল্প  শুনে  বুঝে উঠতে পারেনি যা এখানে এসে বুঝলাম সিলারি গাঁও ” গল্প হলেও সত্যি”। স্থানীয় মানুষদের  কাছে শুনলাম উত্তরবঙ্গের হিমালয়ের দুই সেরা আকর্ষণ কাঞ্চনজঙ্ঘা ও তিস্তা এই যুগল কে নজরবন্দী করা যায় সিলারি গাঁও থেকে আর এখানকার সূর্যোদয় নাকি সারা জীবন মনে রাখার মত । সারারাত এইসব কল্পনা করতে করতে আমার একটুও ঘুম পায়নি তাই কাকভোরে  গ্রিন টী খেয়ে চাঙ্গা হয়েই আমার  কল্পনার জগৎ  কে বাস্তবায়িত করতে  রওনা হলাম।বনপথে পায়ে হেটে দুই কিমি দূরে Ramitey View Point  পৌছে দেখি কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়ায় সূর্যি মামা যেন সোনার পরত ঢালতে শুরু করেছে ।  ভোররাতে  এক নান্দনিক সূর্যোদয় নিয়ে যেন অভ্যর্থনা জানাচ্ছে কাঞ্চনকন্যা সকলকে। দূর পাহাড়ের মাথায়  সোনার মুকুট পরিহিতা কাঞ্চনজঙ্ঘা দু’চোখ ভরে দেখছিলাম আমি ৷ ঠিক যেন ঢিলছোঁড়া দূরত্বে সদর্পে দাঁড়িয়ে রজতাভ রোদ্দুর  মাখছে৷

পেডং থেকে

 এ এক বৈচিত্র্য ভরা সকাল। একটু একটু করে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সূর্য এবং পাহাড় দুই তাদের রং বদলাচ্ছে ঠিক পি.সি সরকারের ম্যাজিকের মতো। দিগন্ত প্রসারিত মায়াবী সবুজ উপত্যকা আর মাথার উপর ঘন নীলাকাশ আর পাহাড়ের কোল বেয়ে তিস্তার বয়েযাওয়া এক অনাবিল  অপরূপ দৃশ্য, ঠিক যেমন  ক্যানভাসে সিনারির মতো।  সূর্যোদয়ের সময় সেই রশ্মি তিস্তার নদীর জলে পড়ে হীরের দ্যুতির মত চিক্ চিক্ করছে । সূর্য , কুসুম রঙা  থেকে একটু প্রখর হতেই কাঞ্চনজঙ্ঘা যেন সোনালী থেকে রূপোলী কন্যায় পরিণত হল। এছাড়াও কিছু দর্শনীয় স্থান আছে যেমন ঋষি ব্রিজ,  পেডং, আরতি লেক ইত্যাদি তবে যারা সেলস্ টার্গেট লিস্টির ফর্দ মিলিয়ে ঘুরতে ভালোবাসেন তাদের জন্য সিলারি গাঁও নয় । যাতায়াত:  যেকোন শহর থেকেই প্রথমে শিলিগুড়ি পৌছন তারপর ওখান থেকে কালিংপঙ হয়ে মাত্র 15 কিমি রাস্তা। থাকার জন্য কিছু কিছু ছোট ছোট হোম স্টের ব্যাবস্থা আছে ।

0 thoughts on “নিরালার ঠিকানা সিলারি গাঁও

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *