October 27, 2024

এ কেমন ভেজাল যাদু এ কেমন ভেজাল।

1 min read

এ কেমন ভেজাল যাদু এ কেমন ভেজাল।

জয়ন্ত বোস, কালিয়াগঞ্জ।

মনে পরে ভূপেন হাজারিকার কন্ঠে এই গানের কলি
“এ কেমন রঙ্গ যাদু, এ কেমন রঙ্গ
ভালবাসা পোড়ায় যে মন
পোড়ে না তো অঙ্গ।” শারদ উৎসবের প্রাক্কালে করোনা আবহের মধ্যে আবারও কালিয়াগঞ্জ খবরের শিরোনামে। একই বিষয়ে পিছু কিছুতেই ছাড়ছে না কালিয়াগঞ্জ কে। কেন ছাড়বে সেটাও বড় কথা। আরে দাদা মুনাফা, মুনাফা বলে সংবাদ প্রতিবেদককে বললেন একজন কালিয়াগঞ্জ বাসী। বিলাসবহুল বাড়ি, দামী গাড়ি যদি তাড়াতাড়ি করতে হয় তাহলে কালিয়াগঞ্জ কে ফলো করুন, বিষয় হলো 

এ কেমন ভেজাল যাদু, এ কেমন ভেজাল।হ্যাঁ বাস্তব সত্য। সর্ষের মধ্যে ভুত থাকে ? কথা প্রসঙ্গে অনেককেই একথা বলতে শোনা যায় কিন্তু ভুত নয় সর্ষে কে ভাঙ্গিয়ে তেল উৎপন্ন হয়। আর হয় বলেই একটা সময় কালিয়াগঞ্জ কে দ্বিতীয় কানপুরের তকমা দেওয়া হয়েছিল। সেই তকমাটা এখন ভেজালে পরিপূর্ণ। এই করোনা আতঙ্কের পরিস্থিতিতে শারদ উৎসবে যখন পঞ্চমী তিথিতে মা দূর্গার পূজার আয়োজনে সকলে ব্রতী হয়েছেন , বিভিন্ন ক্লাব ও বারোয়ারি কমিটি গুলো পূজা উদ্বোধনে ব্যাস্ত ঠিক এমন সময় গতকাল ২১ অক্টোবর বুধবার রাত্রি ৯টার দিকে আচমকাই নিঃশব্দে পুলিশের হানা।

কালিয়াগঞ্জ থানার অন্তর্গত কালিয়াগঞ্জ পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ড সংলগ্ন ২ নং ধনকৈল গ্রাম পঞ্চায়েত অধীন পুরিয়া মহেশপুর গামী রাস্তার ধারে হরিহরপুরে যতন সরকারের মিলে। এ কি অবস্থা এত রাত্রে পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। ভেজাল অভিযান চলছে। ধনকোলের যতন সরকারের মিল কালিয়াগঞ্জ শহরের ৩ জন যৌথভাবে লিজ নিয়েছিল ব্যবসার জন্য। কিসের ব্যবসা? যতন সরকার জানেন কিনা তিনিই বলতে পারবেন তবে পুলিশি তৎপরতায় এক গোপন রিপোর্টে অভিযান চালিয়ে পুলিশ খুঁজে পেল ভেজাল কালিয়াগঞ্জ কে।

এই শহর বলে উন্নয়নের শহর, এই শহর নাকি শান্তিপূর্ণ শহর, এই শহর নাকি সংস্কৃতি মনোভাবাপন্ন শহর কিন্তু এই শহরের সাথে বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ দিনের পর দিন পঙ্গুত্বের শিকার হচ্ছেন এক ধরনের অসাধু অর্থলোভী, অর্থপিচাশ ব্যবসায়ীদের জন্য সেই উন্নয়নের কথা ইতিমধ্যেই বিশ্ব বাংলার ইতিহাসের পাতায় রচিত। সরিষা ভাঙ্গানোর মেশিন ছাড়াই তেল উৎপাদন হয় বিভিন্ন ব্রান্ডের এমন যাদু ভূপৃষ্ঠের কোথাও আছে? আছে কালিয়াগঞ্জ শহরে এবং আশেপাশের এলাকায়। এক ধরনের বিষাক্ত অতি ঝাঁঝ বিশিষ্ট রাসায়নিক দ্রব্যের কয়েক ফোঁটা মিশ্রন সহযোগ ঘটিয়ে এডিবেবল তেলকে সরষা তেলে পরিনত করা হচ্ছে।

রাসায়নিক বিক্রিয়া। নাসা জানতে পারলে কালিয়াগঞ্জ শহরের এই সকল তথাকথিত মানুষ মারা ভেজাল তেল উৎপাদনকারী ব্যবসায়ী বৈজ্ঞানিক দের হয়তো আমেরিকায় নিয়ে যেতে তৎপর হয়ে উঠতেন। গতকাল রাত্রে উক্ত স্থানের যতন সরকারের লিজ নেওয়া মিলের ভেজাল সরষা তেল উৎপাদনকারী ব্যবসায়ী শেঠকলোনীর সুশান্ত দাস, হাসপাতাল পাড়ার বিমান মোদক এবং গুদরীবাজার এলাকার সঞ্জয় ভগত কে মিল চত্ত্বর থেকে কালিয়াগঞ্জ থানার পুলিশ ভেজাল তেলের টিনসহ গ্রেফতার করে। সমস্ত মিল চত্ত্বর টি পুলিশি প্রহরায় রেখে পরেরদিন অর্থাৎ আজকে বৃহস্পতিবার মিলের যাবতীয় তেলের টিন, বিভিন্ন ব্রান্ডের স্টিকার, ঝাঁঝালো রাসায়নিক দ্রব্য উদ্ধার করে এবং মিলটি তালা মেরে বন্ধ করে দেয়। আশ্চর্যের বিষয় মিলটির নামকরণ শিবম র রাইস মিল কিন্তু চাল উৎপাদন হয় না , হয় এক যাদুর মেশিনে ভেজাল সরষা তেল।

মিলটি অবস্থিত হরিহরপুর এলাকায় অথচ মিলের ঠিকানা ধনকৈল। কত প্রকারের ভেজালের সংমিশ্রণ ঘটেছে এই মিলে তার আসল রহস্যের কুল কিনারা প্রস্ফুটিত হওয়া প্রয়োজন। আর সেটা সম্ভব পুলিশের আসল ইনভেস্টিগেশনে। কালিয়াগঞ্জ শহরে যে উন্নয়নের জোয়ার বইছে এই ভেজাল সংমিশ্রণের কারবার তা বলে দিচ্ছে, আসলে কিসের উন্নয়ন যেখানে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের প্রয়োজন সেই খাদ্যের ভেজাল। প্রতিনিয়ত কালিয়াগঞ্জ শহরের আনাচে কানাচে মিল গুলিতে অনবরত প্রয়োজন খাদ্য ভেজালের বিরুদ্ধে সকল প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের যৌথ অভিযান। মানুষ মারার এবং মানুষকে পঙ্গু করার এই সকল অসামাজিক ভেজাল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কালিয়াগঞ্জে রাজনৈতিক প্রতিবাদ নেই।নেই কারণ এরা নিজেদের বাঁচাতে রাজনৈতিক ছাতার তলায় বাসা বেঁধেছে। কালিয়াগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির এই ভেজাল তেল উৎপাদনকারী ব্যবসায়ী দের বিরুদ্ধে কখনোই সরব হয়েছেন কিনা কালিয়াগঞ্জের জনগন জানেন না বলেই মত প্রকাশ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশীরভাগ মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা দ্বিতীয় কানপুর আখ্যায়িত কালিয়াগঞ্জ শহরের বিভিন্ন আর্থিক পরিমন্ডলের মানুষ চিকিৎসার পিছনে লাখ লাখ টাকা খরচ করে ফেলছেন এই ভেজাল তেল দৈনন্দিন খেয়ে তবুও এদের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন না কেন এই নিয়েও অনেক প্রশ্ন থেকেই যায়। এই ভেজাল তেল উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক থেকে একাধিক স্তরের বিভিন্ন চ্যানেল যুক্ত আছে কিনা সেই বিষয়েও গভীর তদন্তের আশা প্রকাশ করেছেন একাধিক নাগরিকরা। কালিয়াগঞ্জ থানার পুলিশের এহেন পদক্ষেপ কে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকেই। সেই সাথে অনেকের বক্তব্য পুলিশ যদি স্বাধীন ভাবে এই ভেজাল তেল উৎপাদনকারী দের বিরুদ্ধে সরব হয় যেখানে কোনো রাজনৈতিক চাপ থাকবে না সেখানেই গড়ে উঠতে পারে ভেজাল বিহীন কালিয়াগঞ্জ শহর, আর তাতেই কালিয়াগঞ্জের উন্নয়নের আক্ষরিক প্রতিচ্ছবি প্রস্ফুটিত হতে পারবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *