কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের দরজা খুলে শেষ হাসি হাসলেন সীতারাম ইয়েচুরিই৷
1 min read
পিছু হঠতে হল
প্রবল পরাক্রান্ত প্রকাশ কারাটকে হায়দরাবাদশেষ পর্যন্ত পার্টি কংগ্রেসের সর্বোচ্চ মঞ্চে ৷ শেষ হাসি হাসলেন সীতারাম ইয়েচুরিই কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের দরজা খুলে ৷ ঠিক তিন মাস আগে কলকাতায় কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে ভোটাভুটিতে কারাটের নেতৃত্বাধীন কট্টরপন্থী শিবিরের কাছে পরাজিত হয়েছিল জোটপন্থীরা৷ কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও সমঝোতা করা যাবে না বলে পার্টি কংগ্রেসে খসড়া রাজনৈতিক প্রস্তাবে খোলাখুলি ঘোষণা করা হয়েছিল৷ মাত্র তিন মাসের মধ্যে পাশার দান বদলে গেল৷ খসড়া রাজনৈতিক প্রস্তাব নিয়ে একের পর এক রাজ্যের তীব্র বিরোধিতা , গোপন ব্যালটে ভোটাভুটির দাবি , এমনকী দল ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাবের মুখে প্রকাশকে পিছু হঠতেই হল৷ খসড়া রাজনৈতিক প্রস্তাব থেকে ‘কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সমঝোতা করা যাবে না ’–এই অংশ সংশোধন করতে বাধ্য হল কট্টরপন্থী শিবির৷ এই পিছু হঠাকে কারাটের পরাজয় বলেই মনে করছেন সিপিএমের একাংশ৷
কংগ্রেসের
সঙ্গে জোটের দরজা খুলতে পারলেও কংগ্রেসের সঙ্গে অবশ্য কোনও ফ্রন্ট তৈরি করবে না সিপিএম৷ সীতারামের নেতৃত্বে জোটপন্থীরাও অবশ্য কখনও কংগ্রেসের সঙ্গে ফ্রন্টের কথা বলেননি৷ আরএসএস -বিজেপিকে পরাস্ত করতে কংগ্রেস -সহ ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির সঙ্গে সমঝোতার কথাই শুধু বলে এসেছেন তাঁরা৷ বুধবার থেকে নাটকীয় টানাপোড়েনের পর অবশেষে সীতারামের এই লাইনই সিলমোহর পেল পার্টি কংগ্রেসে৷ মোট ৩৭টি সংশোধনী গৃহীত হল৷ যার বেশ কয়েকটি বাংলা থেকে৷ ভোটাভুটি এড়াতে বাধ্য হলেন কারাট৷ কেন এই সংশোধনী গৃহীত হল ,
দিনের শেষে কারাটকেই তা পার্টি কংগ্রেসে
ব্যাখ্যা করতেও হয়েছে৷ কারণ তিনিই খসড়া রাজনৈতিক প্রস্তাব পেশ করেছিলেন৷সংখ্যালঘু মতের অনুসারী হওয়ায় সীতারাম খসড়া প্রস্তাব পেশ না করতে পারলেও বিতর্ক যত গড়িয়েছে ততই স্পষ্ট হয়েছে তাঁর পক্ষে সমর্থন বাড়ছে৷ শুধু বাংলা নয় , সব মিলিয়ে ১৬টি রাজ্যের প্রতিনিধি কারাট -লাইনের বিরোধিতা করেন৷
কট্টরপন্থীদের উপর চাপ আরও বাড়ে গোপন ব্যালটে ভোটাভুটির
দাবি ওঠায়৷ অন্তত ১৫ জন প্রতিনিধি হাত -তুলে ভোটাভুটির বদলে গোপন ব্যালটে ভোটাভুটির দাবিতে সোচ্চার হন৷ পশ্চিমবঙ্গের দুই প্রতিনিধি –দক্ষিণ ২৪ পরগনার সিপিএম জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ী এবং উত্তর ২৪ পরগনার সোমনাথ ভট্টাচার্য লিখিত নোট দিয়ে গোপন ব্যালটের পক্ষে সওয়াল করেন৷ এই গোপন ব্যালটে ভোটাভুটির দাবি যে কট্টরপন্থীদের চাপে ফেলে দিয়েছে , এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে খোদ কারাটের বক্তব্যেই স্পষ্ট হয়ে যায়৷ চিরকাল ঠান্ডা মাথার নেতা হিসেবে পরিচিত কারাট গোপন ব্যালটে ভোটাভুটির প্রশ্নে উত্তেজিত হয়ে পড়েন৷ বলেন , ‘আমাদের দলে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে নিচুতলার যে কোনও কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে গোপন ব্যালটে ভোটাভুটির কথা গঠনতন্ত্রে রয়েছে৷ কিন্ত্ত খসড়া রাজনৈতিক প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটির ক্ষেত্রে গোপন ব্যালটের কথা বলা নেই৷রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কোনও গোপন অবস্থান গ্রহণের সুযোগ নেই আমাদের দলে৷ ’ কারাট এই ব্যাখ্যা দিলেও সিপিএমের একাংশের বক্তব্য
,
পার্টি কংগ্রেসের মঞ্চে ইয়েচুরির পক্ষে সমর্থন আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গিয়েছে দেখেই কারাটের নেতৃত্বে কট্টরপন্থী শিবির গোপন ব্যালটে ভোটের ঝুঁকি নিতে চায়নি৷ এই পরিস্থিতিতে এ দিন পার্টি কংগ্রেসের বিরতিতে স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে কারাট পিছু হঠার ইঙ্গিত দেন৷ প্রায় দু-ঘণ্টা ধরে স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে জোটপন্থীদের সংশোধনী গ্রহণ করতে বাধ্য হন কট্টরপন্থীরা৷ ফলে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পরাজিত ইয়েচুরিই শেষ হাসি হাসলেন পার্টি কংগ্রেসের মঞ্চে৷ রাজ্যে নিজেদের দুর্দিনেও দলের সর্বভারতীয় মঞ্চে জিতে গেল সেই বেঙ্গল লাইন৷ |