মন্ত্রীকে সরাতে আদালতের সুপারিশ বাংলায় নজিরবিহীন, কী করবেন মমতা
1 min readমন্ত্রীকে সরাতে আদালতের সুপারিশ বাংলায় নজিরবিহীন, কী করবেন মমতা
মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটল। এই প্রথম রাজ্যের কোনও মন্ত্রীকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দিতে আদালত সুপারিশ করল (Paresh Adhikari-Mamata Banerjee )। শিক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় আজ সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।রাত আটটার মধ্যে তাঁকে সিবিআইয়ের মুখোমুখি হতে বলেছেন বিচারপতি। একইসঙ্গে বিচারপতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের উদ্দেশে সুপারিশ করেছেন, পরেশকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দিতে (Paresh Adhikari-Mamata Banerjee)। মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তাঁর মেয়ের স্কুলের চাকরি নিশ্চিত করতে প্যানেল ওলট-পালট করেছিলেন।
যোগ্য প্রার্থীকে বঞ্চিত করে পরেশের মেয়েকে চাকরি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। যদিও ঘটনাটি ২০১৮ সালের। সেই সময়ে পরেশ মন্ত্রী ছিলেন না। পরেশ অধিকারীকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন কী পদক্ষেপ করেন তা নিয়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে তুমুল কৌতুহল তৈরি হয়েছে। বামফ্রন্টের ৩৪ বছরে জমানায় নানা ধরনের দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগ সামনে এসেছে। কিন্তু কোনও মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ বাম জমানায় ওঠেনি। স্বভাবতই আদালত কোনও মন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করছে, এমন ঘটনা ঘটেনি। তবে মন্ত্রিসভা থেকে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে সরিয়ে দেওয়ার নজির বেশ কয়েকটি আছে বাম জমানার আগের কংগ্রেস সরকারের সময়ে। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৭—এই পাঁচ বছর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সিদ্ধার্থশংকর রায়। তাঁর মন্ত্রিসভার তিনজন মন্ত্রীকে সিদ্ধার্থবাবু সরিয়ে দিয়েছিলেন। এই তিন মন্ত্রী হলেন, কাশীকান্ত মৈত্র, সন্তোষ রায় এবং সুনীতি চট্টরাজ। তবে এঁদের কারও বিরুদ্ধেই মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণে আদালতের কোনও সুপারিশ ছিল না। সিদ্ধার্থবাবু নৈতিক কারণে ওই তিন মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বলেছিলেন। ঘটনাচক্রে পরেশের মতো সন্তোষ রায়ও ছিলেন কোচবিহারের মানুষ। মিল আছে আরও একটি বিষয়ে। তা হল, সন্তোষও সুনীতির বিরুদ্ধে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। উঠেছিল স্বজনপোষণের অভিযোগও। অন্যদিকে, খাদ্যমন্ত্রী কাশীকান্ত মৈত্রর বিরুদ্ধে ভূষি কেলেঙ্কারিতে যুক্ত থাকার অভিযোগে ওঠে। কাশীকান্ত মৈত্র ছিলেন খাদ্য ও সরবরাহ এবং ডেয়ারি দফতরের মন্ত্রী। বিদ্যুত্ দফতরের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন সুনীতি চট্টরাজ। ত্রাণ ও মত্স্য দফতরের মন্ত্রী ছিলেন সন্তোষ রায়। সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় অভিযোগ তদন্তের জন্য বিচারপতি কৈলাশনাথ ওয়াংচুর নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করেছিলেন।
১৯৬৯ সালে দ্বিতীয় যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সিভিল ডিফেন্স ও পাসপোর্ট বিভাগের মন্ত্রী ছিলেন রায়গঞ্জের গোলাম ইয়াজদানি। তাঁর বিরুদ্ধে বিদেশি শক্তির হয়ে চরবৃত্তির অভিযোগ উঠেছিল। তাঁর পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল হয় বাংলা। তবে তিনি পদত্যাগের আগেই দ্বিতীয় যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার পতন হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম মেয়াদে পরিবহণমন্ত্রী ছিলেন মদন মিত্র। সেই সময়ে সারদা কেলেঙ্কারিতে মদনকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। জেলে থাকলেও মন্ত্রিত্ব যায়নি মদনের। ২০১৬ সালের ভোটে জেল থেকেই কামারহাটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন মদন। কিন্তু সেবার তিনি সিপিএমের মানস মুখোপাধ্যায়ের কাছে হেরে গিয়েছিলেন। মন্ত্রিসভা থেকে পরেশকে সরানোর আদালতের সুপারিশ নিয়ে এদিন আইনজীবী তথা সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘বামফ্রন্ট জমানায় কোনও মন্ত্রীর ব্যাপারে আদালতকে এমন দুর্ভাগ্যজনক সুপারিশ করতে হয়নি।’ সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের উদাহরণ টেনে কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘নৈতিকতার প্রশ্নে তো রাজ্য সরকার উচিত মন্ত্রিসভা থেকে আগে পরেশকে সরিয়ে দেওয়া। পরে কী প্রমাণ হল না হল দেখা যাবে।’