একি সত্যিই সেই বিজেপি?
1 min readপ্রীতম সাঁতরা : “শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী সাহেব পাকিস্তানকে ভাগ করে বাংলায় নিয়ে এসেছেন”। সত্যই, পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের ইতিহাসে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি উদ্যোগী না হলে, ভারতের ইতিহাসে বাংলার বর্তমান অবস্থা কি হত বলা মুশকিল। তেমনই তিনি না থাকলে হয়তো ভারতীয় জনতা পার্টির জন্মও হত না। এবার প্রশ্ন উঠতেই পারে বিজেপির জন্ম লগ্নের কথা, বর্তমান সময়ের নিরিখে ফের উত্থাপন করার কি প্রয়োজন আছে। সম্প্রতি ত্রিপুরায় বাম দুর্গ ধুলিস্যাৎ করার পর খবরের শিরোনামে ফের পদ্ম শিবির।
একি সত্যিই সেই বিজেপি? |
তবে তার থেকেও তড়িৎয়ের বেগে যে ঘটনা দেশের আনাচেনাচে ছড়িয়ে পড়েছে তা হল লেনিনের মুর্তি ভাঙার ঘটনা। এই ঘটনার পরপরই কালি মাখানো থেকে ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে অন্যান্য মনিষীদের মুর্তির সাথেও। বাদ যাননি নেতাজী থেকে ডঃ বি আর আম্বেদকর কেউই। ত্রিপুরায় লেনিন মুর্তি ভাঙার প্রতিবাদেই যে এই ঘটনাগুলি ঘটছে, এক কথায় তা বলাই চলে। যারা লেনিনের মুর্তি ভাঙার সময় উপস্থিত ছিলেন তাদের মুখে ধ্বনিত হচ্ছিল ‘জয় শ্রী রাম’ শ্লোগান। এই ঘটনাকে আবার সমর্থন জানিয়েছিলেন রাম মাধব, তথাগত রায়রা। বিজেপি সহ দেশের অগ্রজ রাজনৈতিক দলগুলির জন্ম লগ্নের প্রেক্ষাপট কিন্তু সেই ইংরেজ আমলে। সময় বদলেছে, বদলেছে প্রেক্ষাপট। তার সাথে সাথে কি তবে বদল এল রাজনৈতিক দল গুলির নীতিতেও। বর্তমানে কেন্দ্রের ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। তাই আতস কাঁচের তলায় সবার আগে আসছে তাঁদের নাম। ক্ষমতা যত বৃদ্ধি পেয়েছে, ততই সাধারণ থেকে রাজনৈতিক মহলের চোখে পড়েছে বিজেপির অতি হিন্দুত্ববাদীতা। কিন্তু শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী কি নিজে অতি হিন্দুত্ববাদী ছিলেন? বোধহয় না। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী কখনোই মুসলিম বিরোধী ছিলেন না। অপছন্দের তালিকায় ছিল মৌলবাদ। মূলত নোয়াখালি গণহত্যার পর নয়া বাংলার কথা ভেবেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ। পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন গান্ধীজীও। তিনি বলেছিলেন, ‘হয় নোয়াখালী ছাড়ো, নয়তো মরো।’ কারণ, তৎকালীন সময়ে বঙ্গে সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিমদের হাতে আক্রান্ত হয়েছিল সংখ্যা লঘিষ্ঠ হিন্দুরা। শুরু হল পূর্ব বঙ্গ ছাড়ার পালা।স্বাধীন হয়েছে ভারত, শান্ত হল বাংলা। পূর্ব বঙ্গবাসীরা পেল নয়া ঠিকানা। বছরের পর বছর বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বাস করেছে, করছে ভারতের মাটিতে। বর্তমান সময়ে তবে কেন এত বেশী করে চোখে পড়ছে অতি হিন্দুত্ববাদী আচরণ। আর শ্রদ্ধেয় শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী যা করেছিলেন সার্বিক উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে করেছিলেন। মুসলিম বিদ্বেষের কোন কারণ বা ব্যক্তি স্বার্থের কথা মাথায় রেখে নয়। প্রতিবেদন শুরুর প্রথমের উদ্ধৃতিটি ছিল বিজেপি নেতা জয় ব্যানার্জীর। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর মুর্তি কালিমালিপ্ত এবং ভাঙচুর করার প্রতিবাদ জানালেও, অন্যান্য মনিষীদের মুর্তির অবমাননার ব্যাপারে একটি শব্দও খরচ করেননি তিনি। পক্ষপাতী রাজনীতি আদৌ কি কখনো শিখিয়েছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী? আর পঞ্চাশের মন্বত্বরের কথা কি ভুলে গিয়েছেন বিজেপি নেতারা। নাহলে ফুটপাথবাসীদের সাহায্য না করে, দুধ দিয়ে শুদ্ধিকরণ কি করে করছেন তাঁরা!