তপন চক্রবর্তী–উত্তর দিনাজপুর--রবিবার উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ নদী ও পরিবেশ বাঁচাও কমিটির উদ্যোগে শহরের পার্বতী সুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয়ের মুক্ত মঞ্চে কালিয়াগঞ্জের দখল হয়ে যাওয়া শ্রীমতি নদীকে তার হৃত গৌরব ফিরিয়ে এনে শহরকে দূষণ মুক্ত করতে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
সেমিনারের উদ্বোধন করেন কালিয়াগঞ্জ পৌর সভার চেয়ারম্যান কার্তিক চন্দ্র পাল।পৌর সভার চেয়ারম্যান কার্তিক পাল বলেন আমরা ছোট বেলা থেকেই শুনে এসেছি এই শ্রীমতি নদী দিয়ে একসময় বড় বড় নৌকা যাতায়াত করেছে।কিন্তু পরবর্তীতে আমরা দেখেছি এই শ্রীমতি নদীই অনেকের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে।
শুধু তাই নয় রায়তি সম্পত্তির সমস্ত কাগজ পত্রও তাদের কাছে রয়েছে।কার্তিক পাল বলেন শ্রীমতি নদীর সংস্কারের ব্যাপারে কালিয়াগঞ্জ পৌর সভার কোনরকম সাহায্যের প্রয়োজন হলে সবসময় পৌর সভা পাশে থাকবে বলে তিনি জানান।বিশিষ্ট পরিবেশবিদবালুরঘাট থেকে আগত বিশিষ্ট পরিবেশবিদ তুহিন শুভ্র মন্ডল বলেন নানান সমস্যায় দুই দিনাজপুরের বেশ কিছু নদী মানুষের খামখেয়ালিপনায় দীর্ঘদিন ধরে বিলীন হবার পথে।
ঠিক একই কায়দায় কালিয়াগঞ্জের শ্রীমতি নদীর নাব্যতা হারিয়েছে এলাকার মানুষের ব্যক্তিগত স্বার্থের কারনে নদীকে ব্যবহার করে।এলাকার পরিবেশকে বাঁচাতে গেলে প্রথমেই শ্রীমতি নদীর সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে।একমাত্র এলাকার মানুষেরাই পারে সরকারের মাধ্যমে শ্রীমতি নদীর সংস্কার করতে।কালিয়াগঞ্জ নদী বাঁচাও ও পরিবেশ কমিটি যে উদ্যোগ নিয়েছে তা সময়োপযোগী।
আমরা পরিবেশ আন্দোলনের সাথে যারা যুক্ত তারা সবসময় এই আন্দোলনের পাশেই থাকবো বলে উপস্থিত সবাইকেও এই ভালো কাজের পাশে থাকবার জন্য আহ্বান জানান।রায়গঞ্জ থেকে আগত বিশিষ্ট চিকিৎসক তথা পরিবেশবিদ ডাঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য পরিবেশ নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন আমরা নিজেরাই জানিনা সামান্য ব্যক্তিগত স্বার্থের লোভে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কি বিশাল ক্ষতি করতে চলেছি।সরকারের উচিত শ্রীমতি নদীর প্রকৃত তথ্য উদঘাটন করে অবিলম্বে কালিয়াগঞ্জের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া একসময়কার স্রোতস্বিনী শ্রীমতি নদীর সেই আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা।তিনি বলেন কালিয়াগঞ্জ নদী বাঁচাও কমিটি আজ যে আলোচনা চক্রের ব্যবস্থা করেছে তার জন্য উদ্যোক্তাদের সাধুবাদ জানান। শিলিগুড়ি থেকে আসা পরিবেশবিদ অশেষ দাস বলেন সরকার পরিবেশ নিয়ে অনেক কর্মসূচি নিলেও আমরা দেখতে পারছি উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এমন কিছু নদী আছে যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে চলেছে।
অথচ সরকার ইচ্ছা করলেই শ্রীমতির মত নদীগুলোকে সংস্কারের আওতায় এনে এলাকার পরিবেশের উন্নয়নে সুফল পেতে পারে অতি সহজেই।শুধু দুটো গাছ লাগালেই পরিবেশের উন্নয়ন কখনই হয় সম্ভব নয়।কালিয়াগঞ্জের পরিবেশের প্রকৃত উন্নয়ন ঘটানো তখনই সম্ভব যখন শহরের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া শ্রীমতি নদীকে সম্ভাব্য মৃত্যুর হাত থেকে সংস্কারের মাধ্যমে বাঁচানো সম্ভব হবে।তাই নদী বাঁচাও ই পরিবেশ কমিটির আজকের এই উদ্যোগকে অভিনন্দন জানান। আলোচনা চক্রে ব্যক্তব্য রাখেন হরিরামপুর থেকে আগত পরিবেশ কর্মী জাহিরুদ্দিন আহম্মেদ।অনুষ্ঠানে কালিয়াগঞ্জ পার্বতী সুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নন্দন সাহাও ব্যক্তব্য রাখেন।অনুষ্ঠানের সভাপতি তথা অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলা শাসক জয়দেব সাহা অনুষ্ঠানে আগত কালিয়াগঞ্জ পৌর সভার চেয়ারম্যান কার্তিক পাল সহ শিলিগুড়ি,বালুরঘাট,রায়গঞ্জ ও হরিরামপুর থেকে আগত পরিবেশ বিদদের স্বাগত জানিয়ে বলেন কালিয়াগঞ্জ নদী ও পরিবেশ বাঁচাও কমিটির উদ্দ্যেগে অনুষ্ঠিত পরিবেশ সম্পর্কীয় আলোচনা চক্রে যে স্তরের আলোচনা হয়েছে তাতে আমরা সমৃদ্ধ হয়েছি।আমাদের নতুন সংগঠন পরিবেশ নিয়ে কাজ করবার অনেক রশদের খোঁজ অবশ্যই পেয়েছে।যা চলার পথে অনুপ্রেরণা যোগাবে বলেই তার মনে হয়েছে।অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন সংগঠনের সভাপতি তপন চক্রবর্তী।পরিবেশ সম্পর্কীয় আলোচনা চক্রে পরিবেশের উপর বাউল সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট বাউল সংগীত শিল্পী বিনয় মোহন্ত ও মেঘনাথ সিংহ।কালিয়াগঞ্জ পৌর এলাকার র্বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছাত্র ও ছাত্রী ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও উপস্থিত ছিলেন।পরিবেশ সম্পর্কীয় আলোচনার সমগ্র অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পরিচালনা করেন সংগঠনের গুরুত্বপূর্ন সদস্য ভানু কিশোর শর্মা।