December 5, 2024

"প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড "

1 min read
 দেবাঞ্জলী চক্রবর্তীকলকাতা :বরসো রে মেঘা মেঘা/বরসো  রে মেঘা…. বরসে রে মেঘা বরসো”……ঠিক ধরেছেন উত্তর-ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জির কথাই বলছি  । তবে অনেকেই জানেন না হয়তো এই চেরাপুঞ্জি বাংলাদেশ থেকে কতদূর।
বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে চেরাপুঞ্জি সোজাসুজি মাত্র  কুড়ি কিলোমিটারেরও কম।
বিশ্বের বৃষ্টিবহুল এই এলাকা, সেখানে আষাঢ় কিংবা শ্রাবণের বৃষ্টি উপভোগ এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।তাই বৃষ্টির মরসুমে ঘুরে আসুন চেরাপুঞ্জি, সাথে মেঘালয়ের রাজধানী শিলং ।

কথিত আছে দার্জিলিং যদি  রূপের রানী হয় তাহলে শিলং হচ্ছে রাজা।শিলংয়ের দূরত্বের চেয়ে সামান্য বেশি, সময়ও কিঞ্চিত্ বেশি লাগতে পারে। তবে সীমান্ত পার হয়ে যখন পাহাড়চূড়ার আঁকাবাঁকা পথে চলতে থাকবেন তখন মনে হবে “এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো ……”    চলার পথে আপনাকে সঙ্গ দেবে চারপাশের অসাধারণ সুন্দর সব পাহাড়। কখনও আপনাকে চারপাশ থেকে ঢেকে দেবে মেঘ।

 প্রকৃতির মধ্যে নিজেকে মনে হবে  বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে পরা পরিযায়ী পাখি। কখনওবা পাহাড়ের   ঢালে সরু রাস্তার  পাশেই গভীর খাদ। এ যেন  এক ভয়ঙ্কর সুন্দরপ্রাকৃতিক  দৃশ্য।আগে একে “প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড ” বলা হত ।

হোটেলের জানলা দিয়ে অবিরাম বৃষ্টির ধারা পাহাড়ের কোল বেয়ে পড়ার দৃশ্য অনুধাবন করার মজাই আলাদা।শহুরে কল কারখানার দূষণ থেকে বহুদূরে শান্ত পাহাড়ের কোলে মেঘের দেশে নিজের সাথে নিজেকে অথবা পরিবারের সাথে টুকরো টুকরো মেঘের ফালির স্পর্শ  অঙ্গে অনুভব করে খুঁজে পাওয়ার মূল্য কিন্তু দুর্মূল্য। পথে পাবেন পাইন ও নাসপাতির অরণ্য ।কযলার খাদান তো কোথাও ছোটো বড় টিলা কোথাও বা আবার ছোটো ছোটো কবরস্থান ।


সেভেন সিস্টার ফলস্: কথিত আছে সাত বোনের নামে এই জলপ্রপাতটি নামাঙ্কিত ।সবচেয়ে লম্বা জলপ্রপাত যা সাতটি ধারায় নেমে গেছে।
মোসমাই কেভ: সবচেয়ে আকর্ষণীয় দ্রষ্টব্য হল মোসামাই কেভ। এক আরণ্যক পরিবেশে এই প্রাকৃতিক গুহায় প্রবেশের অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে রোমাঞ্চকর। গুহার ভিতরে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা আছে। আগে পর্যটকেরা টর্চ ও গাইডের সাহায্যে এই গুহায় প্রবেশ করতেন। এখন আলোর ব্যবস্থা থাকায় সে প্রয়োজন হয় না। কখনও বসে, কখনও সরু ফাঁকের মধ্যে দিয়ে শরীরকে গলিয়ে এগিয়ে যেতে হয়।


গুহার ভিতরে প্রাকৃতিক উপায়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা আকৃতিকখনও মানুষের মুখ, কখনও হাঁস বা পাখি। গুহার এক মুখ দিয়ে প্রবেশ করে রোমাঞ্চের স্বাদ নিয়ে আর এক মুখ দিয়ে প্রস্থান।চেরাপুঞ্জির অন্যান্য দ্রষ্টব্য স্থান  হল কেইনরেম ফলস, খো-রামা, সাংকারাংগ পার্ক, মোসামাই ফলস, ডাইনথলেন ফলস, নংগিথিয়াং ফলস, রামকৃষ্ণ মিশন  প্রভৃতি।

লিভিং রুট ব্রিজ:   মাওলিনং-এ লিভিং রুট ব্রিজ
চেরাপুঞ্জির বিস্ময়কর আকর্ষণ ডবল ডেকার লিভিং রুট ব্রিজ। জৈবপ্রযুক্তির এই সেতু বহু প্রাচীন।  রবার গাছের শিকড় পেঁচিয়ে এই সেতুর সৃষ্টি। মেঘালয় ছাড়া পৃথিবীতে কোথাও আর এই অসামান্য প্রাকৃতিক শৈলী দেখা যায় না। কষ্টকর পথের জন্যই পর্যটক সমাগম খুব কম। এটি দেখতে হলে চেরাপুঞ্জিতে রাত্রিবাস আবশ্যিক

মাওলিনং: এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ
্ছন্ন গ্রামের শিরোপা অর্জন করেছে এই গ্রাম। শিলং থেকে দূরত্ব ৯০ কিলোমিটার। শিলং থেকে মাওলিনং-এর যাত্রাপথে উমতিয়াংশি নদীর কিছু পরেই পথবিভাজন । “
cleanliness is godliness ” – এই কথাটির যথার্থ ও বাস্তবায়িত রূপ হচ্ছে ভারতের উত্তর পূর্ব অঞ্চলের শিলং এর মাওলিনং গ্রাম।
নারটিযাং: নারটিয়াং জয়ন্তিয়া পাহাড়ের এক  বিউটি স্পট। এখান থেকে  পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায় । নারটিয়াংয়ের মূল আকর্ষণ মনোলিথ পার্ক।
সব মিলিয়ে মেঘের শহরে কটাদিন দারুণ কাটিয়ে আসতেই পারেন।
থাকবেন কোথায়: চেরাপুঞ্জিতে রাত্রিবাসের জন্য আছে মেঘালয় পর্যটনের হোটেল চেরাপুঞ্জি হলিডে রিসর্ট (ফোন: ০৯৬১৫৩-৩৮৫০০, ০৯৪৩৬১-১৫৯২৫) 

যোগাযোগ:  কলকাতা থেকে গুয়াহাটি স্টেশন ।শিলং 104কি .মি এখান থেকে। MTC র বাসের সার্ভিস আছে এখান থেকে সকাল 6a.m-5p.mঅথবা ভাড়ার গাড়ি ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *