October 29, 2024

দীর্ঘদিন লাগাম বিহীন সাংগঠনিক প্রক্রিয়া এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ নেতাদের কর্মজীবন একুশের নির্বাচনের প্রাক্কালে বেগ দিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস কে।

1 min read

দীর্ঘদিন লাগাম বিহীন সাংগঠনিক প্রক্রিয়া এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ নেতাদের কর্মজীবন একুশের নির্বাচনের প্রাক্কালে বেগ দিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস কে।

৬ ডিসেম্বর বুধবার। জয়ন্ত বোস, কালিয়াগঞ্জ,উঃ দিনাজপুর।পশ্চিমবঙ্গে একুশের বিধানসভা নির্বাচন সরকারি ভাবে ঘোষনার অপেক্ষায়। নতুন বছরের শুরু থেকেই বাজার গরম প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ছোট বড় রাজনৈতিক সভা ঘিরে। এর মধ্যেই চলছে পালাবদলের যাত্রাপালা, মান- অভিমান ভাঙ্গানোর বৈঠক, ইস্তফার সুর, অন্তর্নিহিত বিশ্বাস অবিশ্বাস রুদ্ধশ্বাসের নাটক, একে অপরের বিরুদ্ধে কুৎসিত ভাষা প্রয়োগের অপসংস্কৃতির মার্জিত রুচির পরিচয়।

১৯৯৮ সালে তৈরী হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস নামক রাজনৈতিক দলের। সুদীর্ঘ পথে বিভিন্ন আন্দোলনের মাধ্যমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায়নের চেয়ারে থাকা ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট পরিচালিত সরকার কে ২০১১ সালে সিংহাসনচ্যুত করে ক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশ করে সরকার গঠন করে তৃণমূল কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেস দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বসেন মুখ্যমন্ত্রীর আসনে। সরকার পরিচালনার দায়িত্ব মাথায় নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরের সাথে যোগসুত্র স্থাপনে বাংলার মানুষের জন্য একাধিক বিভিন্ন প্রকল্পের পরিষেবা প্রদান করার কাজে সদা ব্যাস্ত থাকতে হয়েছে তাঁকে। ঠিক সেদিন থেকেই অর্থাৎ ২০১১ সাল থেকেই দলের সংগঠন কে মজবুত ভিতের উপর দাঁড় করাতে এবং দল ও সরকারের মধ্যে একটি সমন্বয় সেতু গড়ে তুলতে কোথাও যেন একটা ছন্দপতন অদৃশ্য ঘুনো পোকার আক্রমনে ভিতরটা ফাঁপা হতে থাকে যার দৃশ্য মাত্র ১০ বছরের মাথায় ভিষনভাবে পরিলক্ষিত।

 

বাংলার মানুষের কাছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাথে একটি সেতু বন্ধনে বিভিন্ন পরিষেবা রট লেভেল পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করতেই সময় দিতে হয় একজন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কে এবং এই সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়েছেন কিন্তু পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক শক্তিকে দৃঢ় ভিতের উপর দাঁড় করানোর জন্য যে সময় সেটা তিনি পান নি , এমনকি দাঁড় করানোর মতো সুদক্ষ একজন রিপ্রেজেন্টেটিভের অভাববোধ থেকেই গেছে তৃণমূল কংগ্রেসের। সুব্রত বক্সি কে সেই দায়িত্ব তিনি এবং তৃণমূল কংগ্রেস দল দিয়েছিল তবে সুব্রত বক্সি দলের সাংগঠনিক শক্তি কে প্রমোট করেছেন বটে কিন্তু তিনি কোনো সময় ভালো একজন সুদক্ষ সাংগঠনিক কারিগর হয়ে উঠতে পারেন নি মুকুল রায়ের স্থলাভিসিক্ত হয়ে। বুথ লেভেল থেকে অঞ্চল, ব্লক, শহর, জেলা এবং রাজ্য পর্যায়ে সহস্রাধিক নেতা বনে গেছে রাতের অন্ধকারে সেখানে কেউ কর্মী হতে চায় নি অর্থাৎ সাংগঠনিক শৃঙ্খলা এবং সাংগঠনিক পদ্ধতির পরিচালনার অভাবে সকলে নেতা বনে গিয়েছিলেন এই ১০ টি বছরের মধ্যে। এর ফলে বুৎপত্তিগত ভাবে এত পরিমান দাদার উৎপত্তি হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস দলে যেখানে একে অপরকে বলে দেখ আমি কত বড় হনু। সাংগঠনিক ভাবে ঐ তথাকথিত নেতা নিজের বুথ কে দলের স্বার্থে শক্তিশালী করতে পারে নি সেই মহোদয় ধোপ দুরস্ত সাদা পাজামা পাঞ্জাবী কিংবা ইস্ত্রি করা জামা প্যান্ট পরিহিত মঞ্চের নেতা বনে গিয়েছিলেন। পঞ্চায়েত কিংবা পৌরসভার, জেলা পরিষদের, বিধায়ক দের , মন্ত্রী দের যে কাজের সীমার মধ্যে থাকা উচিত ছিল সেখানে তাদের সেই দায়িত্ব কে কোনোরকমে পালিত করে দেখা গিয়েছে দলের সংগঠনের দায়িত্বে সামনের সারিতে আসার কম্পিটিশন। এক ব্যাক্তি একাধিক পদের লালসায় সংগঠনের তোয়াক্কা না করে তথাকথিত তৃণমূল কংগ্রেসের হাই প্রোফাইল নেতাদের তৈল মর্দন করেই বসে গিয়েছিলেন সংগঠনের আসনে যেখানে রাজনৈতিক দলীয় সংগঠন কি জিনিস সেটাই জানে না। এতে করে তৃণমূল কংগ্রেসের লোগোর প্রতি , দলের প্রতি আনুগত্য না থেকেও নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন দাদা হিসেবে এবং তৈরি করেছেন অনুগামী। কার অনুগামী ? প্রশ্ন করলেই উত্তর আসে দাদার অনুগামী কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের অনুগামী মুখ দিয়ে উচ্চারণ করবার সাংগঠনিক শিক্ষার অভাব টাই আজ কুড়ে কুড়ে বেগ দিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস দলকে। আর রাজ্যের প্রতিটি জেলার বুথ লেভেল থেকে শীর্ষ লেভেল পর্যন্ত এত দাদা নামক নেতার জন্ম হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে যেখানে কায়েম করেছেন নিজেদের ব্যাক্তিগত স্বার্থ। আর যতবেশি এই স্বার্থ চরিতার্থ করতে সকলেই কম্পিটিশন করা শুরু করেছিলেন ততবেশি জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করেন এই সকল স্বার্থপর দাদা নামক নেতারা। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বহুমুখী বিভিন্ন জনহিতকর পরিষেবা এই দশ বছরে পাওয়ার পরেও কেন জানি জনসাধারণ একটু হোঁচট খাচ্ছেন। জনসাধারণের মানবিকতার জায়গাটা কে দিনের পর দিন হ্যামারিং করেছে এই সকল রাজ্য জুড়ে বেনোজলের নেতারা। বিনা ইনভেস্টমেন্টে রোজগার করার একমাত্র পিঠ স্থান তৈরী করে ফেলেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা অভাবজনিত প্লাটফর্ম কে ব্যবহার করে। এই দশটি বছরে প্রতিটি জেলায় গ্রাম থেকে শহরের আনাচে কানাচে প্রকৃত অর্থে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি আনুগত্য সম্পন্ন একজন নেতা তৈরী হয় নি, তৈরী হয়েছে আম্বানি, টাটা, বিড়লা গোছের নেতাদের এবং তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, ব্যবহার দিনের পর দিন তৃণমূল কংগ্রেস দলের প্রতি আনুগত্য প্রেমি সাধারন কর্মীদের , সমর্থকদের বিষিয়ে তুলেছে। রাজনৈতিক নীতি কে সম্পূর্ণ ভাবে বিসর্জন দিয়ে এখন চলছে স্বার্থ নীতি প্রয়োগের কম্পিটিশনের খেলা। আর এই খেলার মাঝে নদী ভাঙ্গনের মতো অন্য দল থেকে ভাঙ্গিয়ে নিয়ে এসে সেই তথাকথিত বেনোজলদের সামনের সারিতে দাঁড় করিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস প্রতি আনুগত্য প্রেমি আদীদের সেন্টিমেন্টে আঘাত হানতে যথেষ্ট ছিল। অন্য দল থেকে আসতেই পারে বানের জলের মতো কিন্তু সংগঠনের পদাধিকারীর আসনে বসিয়ে দেওয়াটাই হয়েছে একটা সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের নমুনা। তবুও এখনো পর্যন্ত বাংলার মানুষ ধর্মকে প্রাধান্য দিয়ে আগামী নির্বাচনকে বিচার বিশ্লেষণ করবে কিনা আগামী দিন বলবে তবে ইতিমধ্যেই বেগ পেতে হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস দলকে। বিশেষ করে মুখ দেখাদেখি করে রাজনৈতিক সংগঠন তৈরী করতে গিয়ে প্যারালাল সংগঠন মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে এবং বৃহত্তর ব্যাক্তি স্বার্থে গোষ্ঠী কোন্দলে জেড়বার অবস্থায় বর্তমান তৃণমূল কংগ্রেস সংগঠন রাজ্যের প্রতিটি জেলায়। এতগুলো প্রতিবন্ধকতা কে কাটিয়ে উঠার আপ্রান প্রয়াসে রাজ্য তৃণমূল সংগঠন ময়দানে নেমেছেন এবং তাদের ঐক্যবদ্ধ লড়াই একুশের নির্বাচনে দিকে পা বাড়িয়ে আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *