October 28, 2024

বাংলায় একুশের বিধানসভা নির্বাচন বিজেপির কাছে ধর্মযুদ্ধ কেন?

1 min read

বাংলায় একুশের বিধানসভা নির্বাচন বিজেপির কাছে ধর্মযুদ্ধ কেন?

১৬ ডিসেম্বর, বুধবার। জয়ন্ত বোস, কালিয়াগঞ্জ উঃ দিনাজপুর।আর কয়েকটা মাস। তার আগে আর কয়েকটা দিনের অপেক্ষা, তারপরেই নতুন বছর কে সাদর আমন্ত্রনের অপেক্ষায় সকলে। দুইহাজার একুশ সাল। দুইহাজার কুড়ি কে বিদায় জানানোর জন্য সকলে মুখিয়ে আছে কারণ বিশব ত্রাস করোনা ভাইরাস একাই শেষ করে দিয়েছে মানবজাতির অস্তিত্ব কে। তাই সকলে নতুন উদ্যমে নতুন করে বাঁচতে নতুন বছরকে সুস্বাগতম জানাতে সকলেই দিন গুনছে। এমনি পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভার নির্বাচন দিন ঘনিয়ে আসছে। নির্বাচন মানেই সাজসাজ রব, গনতন্ত্রের আঙ্গিনায় গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের মেলা। বাংলার দশ কোটি মানুষ নির্বাচিত করবে আগামী বিধানসভায় ক্ষমতাসীন হবেন কোন রাজনৈতিক দল। ২৯৪ আসন বিশিষ্ট পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার জনগন ভোটাধিকারের মাধ্যমে বেছে নেবেন আগামী ৫ বছরের জন্য তাদের রাজনৈতিক প্রতিনিধি কে। এখন থেকেই চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মহারণ এর প্রস্তুতি পর্ব।

প্রধানতঃ এবার ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন। তৃণমূল কংগ্রেস, বিজেপি এবং বাম- কংগ্রেস জোট। তাই শুরু হয়ে গেছে প্রচার পর্ব। সকলের কাছে একটাই প্রশ্ন পরিবর্তন নাকি প্রত্যাবর্তন। দীর্ঘ ৩৪ বছর বাম জমানা অস্তমিত হয়ে ২০১১ সালে পরিবর্তনের ডাক দিয়ে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত মা মাটি মানুষের সরকার। এই দশ বছরে বাংলার মানুষ কি পেয়েছে আর কি দেখেছে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব নিকাশ চলছে আনাচে কানাচে। আর এই হিসাবের খাতা খুলে জনগনের দরবারে উপস্থিত হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃত্বরা। কিন্তু সুকৌশলে তৃণমূল কংগ্রেস মানুষের দরজায় পৌঁছে যাচ্ছে দশ বছরের মা মাটি মানুষ সরকারের রিপোর্ট কার্ড নিয়ে বঙ্গধ্বনি পদযাত্রায় এবং দুয়ারে দুয়ারে সরকার নামক কর্মসূচির মাধ্যমে। এই দশ বছরে বাংলার জনগন অনেক কিছুই পেয়েছে বলে অরাজনৈতিক ব্যাক্তিরা যেমন বুক চিতিয়ে প্রশংসা করে বলছেন তেমনি এই দশ বছরে অনেক কিছুই দেখেছেন সেটাও বলছেন। সমব্যাথি প্রকল্পে গরিব হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ কে দাহ বা কবরস্থ করার সময় ২০০০ টাকা সরকারি প্রাপ্য থেকে শুরু করে বিশ্ব নন্দিত সারা জাগানো কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী সাথে রুপশ্রী, খাদ্য সাথী, স্বাবলম্বন, আনন্দধারা, গতিধারা, ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান, রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রশংসনীয় মিশন নির্মল বাংলা, শিশুসাথী, পথ সাথী, গীতাঞ্জলি, লোকপ্রসার, শিক্ষাশ্রী, যুবশ্রী, খেলাশ্রী, সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ ইত্যাদি জনহিতকর প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারি পরিষেবা বাংলার জনগন ঘরে ঘরে পেয়েছে। আবার দেখেছে এই দশ বছরে এই সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় তৃণমূল কংগ্রেস দলের নেতাদের ক্যারিশমা যেমন কাটমানির রমরমা ব্যবসা, উঠতে বসতে চলনে বলনে নেতাদের আত্ম অহংকার, চাকরি দেওয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কম্পিটিশন, কুড়ে ঘড় থেকে বিশাল অট্টালিকা, দামি চারচাকা গাড়ি সহ সোনার চেন ও হাতে ব্রেসলেট পরে নেতাদের উত্থান এবং ইগোর টানে চরমতম গোষ্ঠি কোন্দল বজায় রেখে নিজেদের অস্তিত্ব কে জাহির করার কৌশল যা দিনের পর দিন ২০১১ সালের পরিবর্তনের ডাক দেওয়া বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পন্ন বড় ব্যানারটি কে ছিদ্র করে দিয়েছে। আর এই ছিদ্র টি আরো বৃহৎ আকার ধারন করেছে এই দশ বছরে সারদা নারদার যুগলবন্দী। এসবের মাঝে আজ বাংলার মসনদ দখলের জন্য রাজনৈতিক বাকযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। ঠিক এই পরিস্থিতিতে বিজেপি আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন কে কেন্দ্র করে তাদের নেতৃত্বরা বলতে শুরু করেছেন এযেন ধর্মযুদ্ধ। কুরুক্ষেত্রে ধর্ম যুদ্ধ হয়েছিল কৌরব ও পান্ডব দের মধ্যে। সত্যের জয় হয়েছিল আর এটাই ছিল ধর্ম। এখানে বিজেপি যে ধর্মের যুদ্ধ বলতে চাইছেন সেখানে তো আগে তাদের কতৃক সত্যের প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন আছে। কিন্তু কোথায় সেই প্রতিশ্রুতি সত্যের বন্ধনে জনগন বিশ্বাস করেছিল প্রত্যেক নাগরিক তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ্য টাকা পাবেন। পেয়েছেন কি দেশের মানুষ, এই বাংলার মানুষ? না পাওয়া যায় নি, সত্য প্রতিষ্ঠিত হয় নি, আর হয় নি বলেই ধর্ম টা কি আজ মিথ্যা? বাংলার মানুষের জন্য আগামী ৫ বছরে বিজেপি যদি বৃহত্তর পরিষেবা দিতে বাংলার মসনদ কে পাখির চোখের মতো দেখতে পান সেখানে পরিষেবা বলতে জনগনের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের কথা উঠে আসবে। ইতিমধ্যে দেশের মানুষ কি মোদী জীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার কতৃক সেই আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের আওতাভুক্ত হয়েছেন? নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের লাগাম ছাড়া দাম, পেট্রল ডিজেলের নিত্যদিন মূল্যবৃদ্ধি, সরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোকে বেসরকারীকরণ করার উদ্যোগ ইত্যাদি পরিকল্পনা নিয়েই কি বাংলার মসনদ দখলের ধর্মযুদ্ধ নাকি চিন পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলে জনগনের সেন্টিমেন্ট কে বাক্সবন্দী করা এবং হিন্দু মুসলিম ধর্মীয় বিভাজন কে হাতিয়ার করে ধর্মযুদ্ধের জিগির তোলা? তবে যাইহোক , দেশভাগের সময় ইংরেজদের কূটনৈতিক চালে বাংলাকে দুই টুকড়ো করা হয়েছিল ঠিক ধর্মের জিগির তুলে উন্নয়নের বাতাবরণ কে পিছনে ঠেলে ফেলে এই বাংলাকে যেন আর দুভাগ করা না হয়। শ্রীরামচন্দ্র পূজনীয় দেবতা হিন্দুধর্মের মানুষদের কাছে যেনামে একটা সেন্টিমেন্ট কাজ করে এক ভক্তি রসে। কিন্তু সেই ভক্তিরসে উদ্বেলিত তথাকথিত নিজেদের বড় হিন্দু বলে জাহির করা বিজেপি নেতৃত্ব, কর্মী সমর্থকরা একটু দয়া করে ব্যাখ্যা দেবেন উঃ প্রদেশে, বিহারে নিম্নবর্ণের হিন্দুদের উপর উচ্চবর্ণের হিন্দুদের অত্যাচার কেন? তারাতো সকলেই উচ্চারণ করেন ” জয় শ্রীরাম ” , তাহলে এখানে কোন ধর্মের ইংগিত বহন করছে বিজেপির সকল নেতৃত্বরাই ব্যাখ্যা দেবেন। তবে পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজনৈতিক মোকাবিলা করার মধ্য দিয়ে বাংলার মসনদ দখলের জন্য বিজেপি কোন ধর্মযুদ্ধের কথা বলছে তা একমাত্র বিজেপি নেতৃত্বরাই জানেন, এখানে জনগনের স্বার্থে জন পরিষেবাটাই আদতে কতখানি উন্মোচিত হবে সেটাই বাংলার মানুষ ভাববে প্রত্যাবর্তন নাকি পরিবর্তন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *