October 26, 2024

বালুরঘাটে থিয়েটারের ওয়েবিনার: আতঙ্ক কাটিয়ে থিয়েটার ফিরবেই

1 min read

বালুরঘাটে থিয়েটারের ওয়েবিনার: আতঙ্ক কাটিয়ে থিয়েটার ফিরবেই

তপন চক্রবর্তী বালুরঘাটের ‘থিয়েটার এবং’ ও ‘পাশে আছি দক্ষিণ দিনাজপুর’-এর উদ্যোগে ‘কোভিড পরবর্তী থিয়েটার কোন্ পথে?’ শীর্ষক ওয়েবিনারে অংশ নিলেন চার বিশিষ্ট নাট্যচিন্তক, থিয়েটার চর্চায় যাদের নাম সুবিদিত- সৌতি চক্রবর্তী, পরিমল ত্রিবেদী, পার্থপ্রতিম দেব এবং অমিতাভ কাঞ্জিলাল।কথা সমন্বয়ে প্রথম পর্বে ছিলেন নাট্যকর্মী তুহিন শুভ্র মন্ডল।সমগ্র ব্যবস্থাপনায় কৃষ্ণেন্দু সিংহ।চারজন খ্যাতিমান আলোচকের কথায় গভীর ভাবেই উঠে আসে কোভিড পরবর্তী পৃথিবী ও থিয়েটারের নানান দিকনির্দেশ।বিশিষ্ট নাট্য নির্দেশক- ডিজাইনার- অভিনেতা- নাট্য শিক্ষক সৌতি চক্রবর্তীর দৃষ্টিভঙ্গীকে যদি চুম্বকে ধরা হয় তাহলে উঠে আসে এই আঁধার সময়ে আর অল্প অপেক্ষা করার কথা, মিনিমালিস্টিক অ্যাপ্রোচের কথা, থিয়েটার পলিসি আর থিয়েটারের একটা অর্গানাইজড পরিকাঠামোর কথা।সত্যিই তো তাই ।থিয়েটারের কোন সুশৃঙ্খল গঠন কাঠামো নেই, কোন নীতি নেই।কোন প্রকার নাট্যশিল্পী দেরই কোনই নিরাপত্তা নেই।সৌতি বাবুর কথায় উঠে আসে কোভিড পরবর্তী থিয়েটারে আমাদের সংস্কৃতির শিকড়ে ফেরার কথা।মালদা মালঞ্চের কর্ণধার, বিশিষ্ট নাট্যকার- নির্দেশক পরিমল ত্রিবেদী আবার প্রবল ভাবে উচ্চারণ করেন ভয়হীনতার কথা।তার কথায় ‘ ভয় পেলে চলবে না।’

তার সাথে সাথেই তিনি মনে করিয়ে দেন প্রবল ভাবে এই কোভিড আতঙ্ক তৈরির খেলায় রাজনৈতিক সভা- সমাবেশ হলেও থিয়েটারের জন্য হল পাওয়া দুষ্কর।লোকনাট্য শিল্পীরা যারা সমৃদ্ধ করে আমাদের থিয়েটারকে তারা কেমন আছেন এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মনে করিয়ে দিতে ভোলেন না তিনি।আরেক বিশিষ্ট নাট্যকার নির্দেশক- অভিনেতা- নাট্য শিক্ষক পার্থপ্রতিম দেব জোরালো ভাবে উচ্চারণ করেন নাট্যশিল্পীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার প্রসঙ্গ।যথার্থ বলেছেন তিনি। নেই তো সেটা। একজন নাট্যশিল্পী অসুস্থ হলে বা বিপদে পড়লে তার হয়ে কে বা কারা বলবেন? আছে কেউ? বা নির্দিষ্ট ফোরাম ?নেই।থিয়েটারের মানুষরাও কি একতাবদ্ধ ও সংঘবদ্ধ? পরিষ্কার উত্তর: না।তাহলে ? কোভিড পরবর্তী থিয়েটার তা ভাববার পরিসর তৈরি করেছে। সেটা ভাবতেই হবে-দাবী তার।আত্মসমালোচনার প্রসঙ্গ এনেও তিনি বলেন একটি নাট্যদলের সঙ্গে আরেক নাট্যদলের সম্পর্কের কথা।আমরা কেউ কারও নাট্য মঞ্চায়ন দেখিনা।আবেগী উচ্চারণে বাস্তবকে প্রতিস্থাপন করেছেন তিনি।আবার শিলিগুড়ির প্যাশনেট পারফরমার্স- এর কর্ণধার, বিশিষ্ট নাট্যকার- নির্দেশক অমিতাভ কাঞ্জিলাল অসামান্য বাগ্মীতায় জোরের সাথে তুলে ধরেন – কোভিড পরবর্তী পৃথিবীর এবং থিয়েটার কোন্ পথের প্রসঙ্গে বৈশ্বিক ও রাষ্ট্রের কোভিড জুজু দেখানোর কথা,পৃথিবীর পরিবেশিক সঙ্কটের কথা,সাসটেইনিবিলিটির কথা,লকডাউনে ভারতের অসংগঠিত শ্রমজীবী মানুষের সীমাহীন দুর্দশার প্রসঙ্গ।ক্যায়স থিয়োরি আর রিপল এফেক্টের বিষয় এনে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন রাজনীতি- সমাজ- অর্থনীতির দিকটি ।তার কথায় কোভিড পরবর্তী পৃথিবীতে তাই থিয়েটারকে প্রবল ভাবে ফিরতেই হবে।’সুখী সময়ে থিয়েটার বাঁচেনা’ বলেই তার অভিমত। তাই নিজেরাও বিশালকায় একটি নাট্যপ্রযোজনা নিয়ে ফিরছে তাদের দল- শিলিগুড়ির প্যাশনেট পারফরমার্স।এর মাধ্যমেই মনে করিয়ে দিতে চান আতঙ্কহীন আত্মবিশ্বাসী মানুষের কথা, রাষ্ট্রের বিপ্রতীপে দাঁড়িয়ে যারা মানুষের হয়েই সুস্পষ্ট উচ্চারণ করবে।এক নাট্যমোদির কথার সূত্র ধরে বলতে হয়- থিয়েটারের বিষয় নিয়ে এমন সুগভীর ও প্রবল আলোচনা সাম্প্রতিক কালে হয়নি।যেখান থেকে কোভিড পরবর্তী থিয়েটারের কোন্ পথে হাঁটা উচিত তার একটা পরিষ্কার দিকনির্দেশ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। এখানেই ‘থিয়েটার এবং’ ও ‘ পাশে আছি দক্ষিণ দিনাজপুর’- এই ওয়েবিনারের সার্থকতা।নতুন প্রজন্মের নাট্যকর্মী- শিল্পীদের জন্য কি বার্তা দেবেন তারা? ব্যবস্থাপক কৃষ্ণেন্দু সিংহের এই প্রশ্নের উত্তরে অমিতাভ কাঞ্জিলাল জানান- এখন গিয়ে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াও, আর তার পরে তোমার সুগভীর পর্যবেক্ষণ আর এই সময়ের সীমাহীন যন্ত্রণা নিয়েই মঞ্চে দাঁড়াও।প্রবল ভাবে দাঁড়াও।পার্থপ্রতিম দেব বলেন – নতুন প্রজন্মের নাট্যশিল্পীরা আরেকটু প্রস্তুত হয়ে আসুক।আরেকটু নিজেদের পরিশীলিত করুক।এই অস্থির সময় থেকেও আলো খুঁজে নিয়ে নিয়ে সম্ভাবনার সফল রুপায়ন করুক।পরিমল বাবু , আর অপেক্ষা না করে, এই আরোপিত ভয়ের পরিবেশ জয় করে থিয়েটারের আঙিনায় প্রবেশের আহ্বান করেন নতুন দের কাজে এবং সবার কাছেই। সৌতি বাবু বলেন- আলো ফুটবেই। আর একটু অপেক্ষা।থিয়েটার আবার পরিচিত ছন্দে যাত্রা শুরু করবে।কাল না হলেও পরশু সেই সকাল থিয়েটারের হবেই।সঞ্চালক ও নাট্যকর্মী তুহিন শুভ্র মন্ডল জানান ‘ খুব গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে।এখান থেকে পরবর্তী পথনির্দেশ পাওয়া যাবে।’ পাশে আছি দক্ষিণ দিনাজপুর পেজের অ্যাডমিন কৃষ্ণেন্দু সিংহ জানান- আগামী 12 সেপ্টেম্বর এই সংক্রান্ত পরবর্তী ওয়েবিনার হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *