October 26, 2024

জাতীয় স্তরের ক্যারাটের ব্ল্যাকবেল্ট খেতাব পাওয়া স্মৃতিকনা চরম আর্থিক সঙ্কটে-

1 min read

জাতীয় স্তরের ক্যারাটের ব্ল্যাকবেল্ট খেতাব পাওয়া স্মৃতিকনা চরম আর্থিক সঙ্কটে-

সুব্রত সাহা রায়গঞ্জ উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের ক্যারাটের জাতীয় স্তরের ব্লাকবেল্ট খেতাব পাওয়া স্মৃতিকনা আজ চরম আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে পড়ে তাকে সাইকেলে চড়ে কুরিয়ার সার্ভিসের রানারের কাজ করতে হচ্ছে।

স্মৃতিকনাকে ক্যারাটের কিট ফেলে দিয়ে তাকে এখন বইতে হচ্ছে চিঠির ব্যাগ।স্মৃতিকনার স্বপ্ন ছিল ক্যারাটের মাধ্যমেই তার জীবন গড়ে তুলবে।কিন্তু আর্থিক সঙ্কট তার স্বপ্নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াল।লকডাউনের কারনে মায়ের শাড়ীর ব্যবসা যেমন বন্ধ হয়ে গিয়েছে ঠিক একই ভাবে ক্যারাটের প্রশিক্ষণ দেবার কাজও লকডাউনের কারনে বন্ধ হয়ে আছে।তাই সংসারের হাল ধরতে স্মৃতিকনাকে পড়াশোনা,ক্যারাটে বাদ দিয়ে বেছে নিতে হয়েছে বাধ্য হয়ে কুরিয়ার সাভিসের কাজ।

এখন সকাল সাড়ে আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত সাইকেল চালিয়ে চিঠি বিলি করার কাজেই সে ব্যাস্ত।স্মৃতিকনা বলেন কোন কাজই তার কাছে ছোট নয়।বড় কিছু হতে গেলে কষ্ট করতেই হবে।একদিন না একদিন সে তার স্বপ্ন পূরণ করবেই বলে প্রতিজ্ঞা করে।ছোটোবেলাতেই বাবা-মাকে পৃথক হয়ে যেতে দেখেছেন স্মৃতিকণা । দুই ছেলে-মেয়েকে মানুষ করতে মা লক্ষ্মী কুন্ডু পাড়ি দিয়েছিলেন দিল্লিতে । বাড়িতে ভাইয়ের দায়িত্বটা পুরোপুরিভাবে নিজের কাঁধে নিয়ে নিয়েছিলেন স্মৃতিকণা । পরিবার ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি ছোটো থেকেই তাঁকে মানসিকভাবে শক্ত করে তুলেছিল ৷ পাশাপাশি পছন্দের খেলা হিসেবে ক্যারাটেকেই বেছে নিয়েছিলেন তিনি ।

2012 সালে ক্যারাটে জীবনের শুরু ৷ পরের বছরই জেলাস্তরের ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম স্থান অধিকার করেন ৷ এরপর জেলাস্তরের বিভিন্ন ক্যারাটে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে পালকে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক মুকুট ৷ 2015 থেকে 2017 পর্যন্ত অর্জন করেছেন ব্লু বেল্ট, ব্রাউন বেল্ট ও ব্ল্যাক বেল্ট ৷2018 সালে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনোর পর রায়গঞ্জের পলিটেকনিক কলেজে ভরতি হন স্মৃতিকণা ৷ এরপর পাকাপাকিভাবে রায়গঞ্জে বসবাস করতে শুরু করে কুণ্ডু পরিবার । দিল্লি থেকে ফিরে এসে অনলাইনে শাড়ির ব্যবসা শুরু করেন স্মৃতিকণার মা । আয় ভালোই হচ্ছিল । কিন্তু বাধ সাধল লকডাউন । আচমকা বন্ধ হয়ে গেল শাড়ির ব্যবসা । ঘরে তখন নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা । বড় মেয়ে হিসেবে পরিবারের হাল ধরতে তাই পথে নামতে হয় স্মৃতিকণাকে ৷ একটি ক্যুরিয়ার সংস্থায় কাজ নেন ৷ শুরু হয় পুরানো সাইকেলে করে বাড়ি বাড়ি ক্যুরিয়ার ডেলিভারির কাজ ৷ যে কম্পানিতে তিনি কাজ করেন সেখানে 70 জন মোট ডেলিভারি বয় রয়েছেন । তাঁদের মধ্যে একমাত্র মেয়ে হিসেবে এই কাজ করছেন স্মৃতিকণা সেই থেকে আজ পর্যন্ত সাইকেল চালিয়ে জীবন যুদ্ধে লকডাউনকে পরাস্ত করতে লড়ে যাচ্ছেন মেয়েটি । পড়াশোনা একেবারেই বন্ধ ৷ আর জীবনের প্রথম প্রেম ক্যারাটেও স্মৃতিকণার জীবন থেকে এখন অনেক দূরে ৷ সারাদিনের খাটাখাটনির পর ক্যারাটে নিয়ে এগোনোর কথা ভাবাটা এখন বিলাসিতা বলে মনে হয় ৷ তবে ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে ক্যারাটে নিয়ে ফের ভাবা শুরু করবেন, জানিয়েছেন স্মৃতিকণা 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *