ভাঙ্গন শুরু, আতঙ্কে কয়েক হাজার পরিবার।
1 min readভাঙ্গন শুরু, আতঙ্কে কয়েক হাজার পরিবার।
মালদা-গত কয়েকদিন থেকে গঙ্গার কালিয়াচক 2 নম্বর ব্লকের বাঙ্গীটোলা এলাকা ও বৈষ্ণবনগর এলাকায় ভাঙ্গন শুরু । আতঙ্কে কয়েক হাজার পরিবার। রিং বার থেকে গঙ্গার দূরত্ব মাত্র 30 মিটার।গত দু-তিন দিন থেকে বাঙ্গীটোলা ও বৈষ্ণবনগরের গঙ্গার ভাঙন শুরু হয়েছে। জল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে গঙ্গা তার ধ্বংসলীলা শুরু করেছে। সেচ দপ্তর এই ভবনের উপরে সতর্ক দৃষ্টি রাখলেও কালিয়াচকের বাঙ্গীটোলা ও বৈষ্ণবনগর এলাকায় চরম আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।কালিয়াচক 2 নম্বর ব্লকের বাঙ্গীটোলা এলাকায় ভাঙ্গন শুরু হয়েছে।
গত এক সপ্তাহ ধরে ধীরে ধীরে ভাঙ্গন হলেও রবি ও সোমবার এই ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। গঙ্গা প্রায় 40/ 50 ফিট ঢুকে গেছে। গঙ্গার ধার বরাবর 15 থেকে 20 বিঘা জমি গঙ্গা করবে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে গঙ্গা থেকে বাঁধের দুরত্ত 25 থেকে 30 ফিট ও নেই ।
ফলে ভাঙ্গনের পাশাপাশি গোটা কালিয়াচক 2 নম্বর ব্লকে বন্যার সম্ভাবনা প্রবল হয়েছে। ফলে গঙ্গার তীরবর্তী বাঙ্গীটোলা অঞ্চলের কয়েক হাজার পরিবার চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ এক সপ্তাহ ধরে এখানে শেষ দপ্তরের আধিকারিক বা কোন রাজনৈতিক নেতা মাথা দেখতে আসেনি । সেচ দপ্তর ভাঙন রোধের জন্য কোন কাজ করছে না। স্থানীয় বাঙ্গীটোলা অঞ্চলের প্রধান গোটা বিষয়টি বিডিও কে জানিয়েছেন। সেচ দপ্তর জানিয়েছে “ওই এলাকার পরিস্থিতির উপরে আমাদের পূর্ণাঙ্গ নজর আছে। প্রয়োজন হলে আমরা সেখানে বিশেষভাবে ভাঙ্গনরোধে র এর কাজ করবো।
“কালিয়াচক 2 নম্বর ব্লকের বাঙ্গিটোলা অঞ্চলের জোতকস্তুরী এলাকা। গঙ্গা এখানে সবচেয়ে বেশি ইউ আকার করে ভিতরের দিকে ঢুকে গেছে। প্রতিবছর কমবেশি এই এলাকায় ভাঙ্গন দেখতে পাওয়া যায়। বাঙ্গীটোলা থেকে পঞ্চনন্দপুর পর্যন্ত নদীর ধার বরাবর একটি রিং বাধ থাকলেও এই এলাকায় বাধের দূরত্ব সবচেয়ে কম । 2003 এর প্রলয়ঙ্করী ভাঙ্গনের পর খুব বড় ধরনের ভাঙ্গন দেখা যায় এখানে। এই সময়ের গঙ্গার ভাঙ্গনে কেবি ঝাউবোনা গ্রাম পঞ্চায়েতের দশ-বারোটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ এই বাঁধের ধার বরাবর বাংলা গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে বসবাস করছে। নদী ভাঙ্গন বেড়ে যাওয়ায় এই গ্রামগুলির মানুষের আতঙ্ক সবচেয়ে বেশি বেড়েছে । মূলত পঞ্চনন্দপুরের গোলকটোলা, পাঁচকুড়িটোলা, খাসমাহাল , গোলকটোলা ,দড়িদিয়ারা গৌড়পাড়া কামালতিপুর কামালউদ্দিনপুর ।পূর্ব গোলকটোলার বাসিন্দা দিলীপ মন্ডল এর অভিযোগ গত 5 তারিখ থেকে কোন গল্প করে সেখানে গঙ্গা কাটছে রবি ও সোমবার ব্যাপকহারে কেটেছে । প্রায় 25 30 ফিট গঙ্গা ভিতরে ঢুকে গেছে। রাখার বরাবর দশ-বারো ঘন্টা কেটে নিয়েছে ।রিং বার থেকে খুলনার দূরত্ব 25 30 ফিট মাত্র। আমরা প্রধান পঞ্চায়েত সেচ দপ্তরের সবাইকে জানিয়েছি । কেউ ব্যাপার টা দেখতেও আসেনি।৫ কোড়িটোলার বাসিন্দা কৃষ্ণচন্দ্র মন্ডল জানান , “১৯৯৮——– ২০০৩ সালের ভাঙ্গনে গোটা কেবি জামানা গঙ্গা করবে চলে গেছিল এদের বেশির ভাগ মানুষ গঙ্গার ধার বরাবর বাঙ্গি টোলার পিছনে বসবাস করছে। গত কয়েকবছর গঙ্গার ভাঙন থেমে যাওয়ায় আমরা নিশ্চিন্ত ছিলাম। এবারের হঠাৎ ভাঙ্গন শুরু হওয়ায় আমাদের চরম আতংক শুরু হয়ে যায়। প্রশাসনের কাছে আমাদের অনুরোধ ভাঙন রোধের জন্য তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নেন । নইলে আর থামা যাবে না। নদী বাঁধ অব্দি চলে এলে মোটা মালদা জেলা ভাসিয়ে দিবে।”বাঙ্গীটোলা অঞ্চলের প্রধান সানতারা খাতুন জানিয়েছেন ,” আমরা খোঁজ পেয়েছি আমি বিষয়টি বিডিও কে জানিয়েছি। এখনই ভাঙ্গন থামানা গেলে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা থেকেই যাবে গোটা ব্লকে।দপ্তরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার প্রভাত সামন্ত জানিয়েছেন, মানিকচক থেকে ফারাক্কা পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে অল্পস্বল্প হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমাদের প্রতিটি পয়েন্টের উপর নজর আছে । যত জোতকস্তুরিতে ভাঙ্গনের খবর পেয়েছি। আমাদের নজর আছে। প্রয়োজনমতো আমরা সব ব্যবস্থা নেব।”এদিকে অকাল ভাঙন শুরু হয়েছে শনিবার থেকে কালিয়াচক-৩ নম্বর ব্লকের চকবাহাদুরপুর, সূর্যপাড়া, সরকারপাড়া এলাকায়।ফলে আতঙ্কিত এলাকাবাসী। প্রায় ১৮ বিঘা জমি চলে গেছে গঙ্গাগর্ভে । প্রায় ২০০ মিটার রাস্তা ভাঙনের কবলে। নতুন করে গঙ্গা শুরু করেছে তার ধ্বংসলিলা। ফলে আতঙ্কে রয়েছে পারচকবাহাদুরপুরের বাসিন্দারা। কখন তাঁদের বাড়িঘর তলিয়ে যাবে, এই আশঙ্কায় দিন অতিবাহিত হচ্ছে তাঁদের। তিনসপ্তাহ আগে কৃষ্ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চকবাহাদুরপুরে দ্বিতীয় দফার ভাঙন শুরু হয়। কিছুটা ভাঙনের পর গঙ্গা থেমে যায় । শনিবার ভোররাত থেকে শুরু হয়েছে আবার ভাঙন। জানা গেছে, পারচকবাহাদুরপুর থেকে হোসেনপুর যাওয়ার রাস্তাটি ভাঙনে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এই রাস্তার প্রায় ২০০ মিটার চলে গেছে গঙ্গায়। কৃষ্ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পাশেই মুর্শিদাবাদের কুলিদিয়ারা। কুলিদিয়ারা-সহ মালদার কালিয়াচক-৩ ব্লকের চকবাহাদুরপুর, সূর্যপাড়া, সরকারপাড়ায় শুরু হয়েছে ভাঙন। প্রায় ১৮ বিঘা জমি চলে গেছে গঙ্গায়। মূলত পটল, ভুট্টা, পাটের জমি ছিল।স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত চাষি সুধীর মন্ডল, জয়দেব মন্ডল জানান , ‘”আমাদের অনেকের জমি চলে গেছে গঙ্গায়। আমাদের ২ বিঘা জমি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এই জমিই ছিল আমাদের উপার্জনের একমাত্র সম্বল।এখন অসহায় হয়ে পড়েছি। এবার কী করে সংসার চালাবো, কিছুই বুঝতে পারছি না।’”এদিকে জেলা সেচ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এখন গঙ্গা, ফুলহারের জল বাড়ছে। অন্যদিকে মহানন্দার জল কমছে। রবিবারের হিসেব অনুযায়ী গঙ্গা এখন বিপদ সীমার কাছাকাছি বইছে। গঙ্গার জলস্তর ২৪.৪৫ মিটার। বিপদসীমা ২৪.৬৯ মিটার। ফুলহারও বিপদসীমার কাছাকাছি। জলস্তর ২৭.২৭ মিটার এবং মহানন্দার জলস্তর ২০.৫৫ মিটার।সেচ দপ্তরের জেলা নির্বাহী বাস্তুকার প্রণব সামন্ত বলেন,‘”চকবাহাদুরপুর এলাকায় যেখানে ভাঙন শুরু হয়েছে, কিছুটা অংশ ফরাক্কা ব্যারেজ দেখভাল করে। কিছুটা জেলা সেচ দপ্তরের অধীনে। শনিবার ভোররাত থেকে ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছি। সকুল্লাপুরেও আমাদের নজর আছে।”