জনগনের চোখে বিধায়কের মৃত্যু, হাজারো প্রশ্নে সরগরম বিস্তীর্ণ এলাকা।
1 min readজনগনের চোখে বিধায়কের মৃত্যু, হাজারো প্রশ্নে সরগরম বিস্তীর্ণ এলাকা।
জয়ন্ত বোস, কালিয়াগঞ্জ।পশ্চিমবঙ্গের হেমতাবাদ বিধানসভার বিধায়ক দেবেন্দ্র নাথ রায় মৃত অবস্থায় এখন এই মুহূর্তে সংবাদ শিরোনামে। জেলা, রাজ্য,দেশ এবং বিদেশ থেকেও সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন মাধ্যমে সাইক্লোনের মতো সংবাদের ঝড় যেমন আছড়ে পরছে তেমনি জনগনের হাজারো প্রশ্নের ঝড় বিধায়ক দেবেন্দ্র নাথ রায়ের মৃত্যু কে ঘিরে। এদিকে একই সাথে বিধায়কের মৃত্যুর ঘটনা প্রসঙ্গে রাজনৈতিক মঞ্চে চলছে তর্ক বিতর্কের আস্ফালন। বিষয়টি শুরু ১৩ তারিখ সোমবার ভোরবেলায় বালিয়া মোড়ে এক দোকানের বারান্দায় গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলতে দেখেন কতিপয় জনগন। আস্তে আস্তে এই খবর রটতে থাকায় সময়ের সাথে সাথে হাজারো জনসমাগমে জনগন দেখছে বিধায়ক ঝুলছে সাথে হাজারো প্রশ্ন। আর এই প্রশ্নে সরগরম এলাকা, সরগরম জেলা, রাজ্য, দেশ এবং সোশ্যাল মিডিয়া থেকে রাজনৈতিক প্লাটফর্ম।
হাজারো প্রশ্নের বিষয় সমূহ জানতেই আজকের এই প্রতিবেদন বিধায়ক দেবেন্দ্র নাথ রায়ের মৃত্যু রহস্য। এককথায় আত্মহত্যা নাকি খুন। বিষয়টি বর্তমানে সম্পূর্ণ বিচার ব্যবস্থার তত্ত্বাবধানে হলেও জনগনের হাজারো প্রশ্নকে গুরুত্ব দিতেই হচ্ছে কারন জনগনের ভোটে নির্বাচিত বিধায়ক দেবেন্দ্র নাথ রায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু রহস্য কে ঘিরে।এই প্রতিবেদনে জনগনের হাজারো প্রশ্ন তুলে ধরা হলো।
উক্ত জায়গায় মৃত অবস্থায় দেবেন্দ্র নাথ রায়কে ঝুলে থাকতে দেখে অধিকাংশ মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন বিধায়ক দেবেন্দ্র নাথ রায় কে খুন করে ঝুলিয়ে রেখে দেওয়া হয়েছে। অল্প সংখ্যক জনগন প্রশ্ন তুলেছেন বিধায়ক কেন আত্মহত্যা করলেন । এর উত্তর তো বিচার্য বিষয় কিন্তু দানা বাঁধছে বেশ কয়েকটি জনগনের প্রশ্নে। বিধায়ক দেবেন্দ্র নাথ রায়ের মৃত দেহের ঝুলন্ত অবস্থা দেখে বলেছেন ভূমি থেকে কমপক্ষে এক ফুট উঁচুতে তার পা ছিল তবে কিসের উপর উঠে তিনি দড়ির ফাঁসটি গলায় লাগালেন।
আবার কেউ প্রশ্ন তুলেছেন নিজের হাত ঐভাবে কেউ বেঁধে গলায় ফাঁস লাগাতে পারে কিনা। দেবেন্দ্র নাথ রায় বাড়ি থেকে রাত্রি ১ টা নাগাদ যদি বেড়িয়ে যান বা কেউ যদি তাকে ডেকে নিয়ে যান বা ঐ রাতে কেউ যদি বাড়ি থেকে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যান তাহলে রাত ১টা থেকে ভোর বেলা অব্দি এই দীর্ঘ সময় দেবেন্দ্র নাথ রায়ের বাড়ির লোকজন খোঁজাখুঁজি করলেন না, পুলিশ কে খবর দিলেন না কেন এই নিয়েও জনগনের প্রশ্ন। এমনকি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে নিজেই দরজা খুলে যদি বেড়িয়ে যান বা কেউ এসে ওত রাত্রে ডাকলে বা ঘড় থেকে তাকে অপহরণ করলে পাশের ঘড়ে থাকা বাড়ির মানুষজন কি টের পেলেন না। বিধায়কের মৃত্যুর রহস্য সময়ের সাথে সাথে ঘুরপাক খাচ্ছে জনসাধারণের কাছে এক বিষ্ময়কর প্রশ্নের মধ্যে দিয়ে। যেমন অনেকে বলছেন তার কাছে সুইসাইড নোটে ব্যাক্তি বা ব্যাক্তিদের যে নাম পাওয়া গেছে ( তদন্তের সাপেক্ষে গোপন রাখা হয়েছে) সেই সুইসাইড নোট টি তিনি আগে থেকেই লিখে নিয়ে গিয়ে আত্মহত্যা করেছেন নাকি তিনি যদি আচমকাই খুন হয়ে থাকেন তাহলে ঐ সময়ে পেন কোথায় পেলেন বা খুন হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে খুনিরা তাকে দিয়ে কি সুইসাইড নোট লিখিয়ে নিয়েছিলেন। দেবেন্দ্র নাথ রায় একজন পোড় খাওয়া বামপন্থী আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন রাজনীতি করে আসা জনপ্রতিনিধি যিনি পরবর্তীতে বিধায়ক হয়ে বিজেপি রাজনৈতিক দলে নাম লিখিয়েছেন তিনিতো সমাজবিরোধী মানুষ ছিলেন না যে তাকে খুন হতে হলো, এই প্রশ্ন নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন এলাকাবাসী। ঝুলন্ত অবস্থায় বিধায়কের জামার পকেটে নাকি তার মোবাইল পাওয়া গিয়েছে। সেই মোবাইলের কল লিস্ট তদন্ত সাপেক্ষে বের করা যেতে পারে ওত রাত্রে তার মোবাইলে কে বা কারা তাকে ফোন করে ডেকেছিল সেই নামের তালিকা , এই নিয়েও প্রশ্ন জনগনের। তবে বিস্তীর্ণ এলাকার জনগন এমনটাই ভাবছেন আত্মহত্যা করলে তিনিতো ঘড়ের মধ্যে বা বাড়ির আশেপাশেই রাতের অন্ধকারে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করতে পারতেন , কেন বা বাড়ি থেকে কমপক্ষে এক থেকে দেড় কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে রাস্তার পাশে দোকানের বারান্দা টিকে বেছে নিলেন যেখানে ভোরের আলোতে সহজেই মানুষের চোখে পরতে পারে। এর মধ্যেই অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন সুইসাইড নোট টি কি দেবেন্দ্র নাথ রায়ের নিজস্ব হাতের লেখা নাকি অন্য হাতের লেখা। তবে বিধায়ক দেবেন্দ্র নাথ রায় রাত্রে সঠিক কখন ঘড় থেকে বাহিরে বের হয়ে আসেন তার সঠিক বা আনুমানিক সময় টি বাড়ির লোকজন বলতে সক্ষম হয় সেখানে এই নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন জনগন যে বাড়ির লোকজন কেন ওত রাত্রে নীরব ছিলেন। আবার অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বামপন্থী আন্দোলনের সাথে যুক্ত থেকে হঠাৎ এক আবেগের তাড়নায় রাজনৈতিক প্লাটফর্ম ত্যাগ করে বিজেপি দলে যোগদানের সাথে রাজনৈতিক জীবন অবরোধ হয়ে যাওয়ায় নাকি তার রাজনৈতিক জীবনের ব্যার্থতা, বিফলতা ও নৈরাশ্যের বহিঃপ্রকাশ এই আত্মহত্যা বলে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। কেউ কেউ বলছেন সমবায় সমিতির প্রচুর টাকা আত্মসাৎ করার এক চরমতম গ্লানি তাকে কুড়ে কুড়ে এই আত্মহত্যার পথ বেঁছে নিতে সাহায্য করেছে। হাজারো প্রশ্ন থাকবেই বিধায়ক দেবেন্দ্র নাথ রায়ের মৃত্যু কে ঘিরে, আত্মহত্যা নাকি খুন করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে, এই মুহূর্তে রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ সি,আই,ডি অফিসাররা রায়গঞ্জে পৌঁছে গিয়ে তদন্ত শুরু করেছেন। আসল রহস্য উদঘাটন হোক নিরপেক্ষ ভাবে সকলেই চাইছেন। রাজনৈতিক রং এর পারদ চড়তে শুরু করেছে। বিধায়কের রহস্য মৃত্যুর প্রতিবাদে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ১২ ঘন্টার উত্তরবঙ্গ বন্ধ ডেকেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপি। বিজেপি রাজনৈতিক দল সরাসরি দায় চাপিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের উপর এবং তৃণমূল কংগ্রেস নাকি বিধায়ক কে খুন করে ঝুলিয়ে দিয়েছে। অপরদিকে তৃণমূল কংগ্রেস জেলা নেতৃবৃন্দ ও রাজ্য নেতৃত্ব বিজেপির করা এই অভিযোগ কে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও অপপ্রচার বলে জানিয়েছেন। তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব বিধায়ক দেবেন্দ্র নাথ রায়ের মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করে তদন্তের উপর আস্থা রেখে আসল রহস্যের উদঘাটন হোক এমনটাই চেয়েছেন এমনকি তদন্তে যদি উদঘাটন হয় দেবেন্দ্র নাথ রায় খুন হয়েছেন তাতে করে খুনীদের সনাক্ত করে আইন মোতাবেক উপযুক্ত শাস্তি হোক সেই বক্তব্য প্রকাশ করেছেন। এদিকে উত্তর দিনাজপুর জেলা বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস নেতৃত্বরা বলেছেন বিধায়ক দেবেন্দ্র নাথ রায় আত্মহত্যা করেছেন তবুও সঠিক তদন্তের দাবী করেছেন। বিধায়কের এই মৃত্যু কে ঘিরে জনগনের চোখে যেমন বিধায়ক ঝুলছেন এই দৃশ্য একদিকে ঠিক অপরদিকে এই মৃত্যু কে ঘিরে জনগনের মুখে হাজারো প্রশ্ন।