দক্ষিণ দিনাজপুরের শোলা শিল্পী মধুমঙ্গলের শোলার কাজ বিশ্বে সমাদৃত
1 min readদক্ষিণ দিনাজপুরের শোলা শিল্পী মধুমঙ্গলের শোলার কাজ বিশ্বে সমাদৃত
তপন চক্রবর্তী-কালিয়াগঞ্জ(উত্তর দিনাজপুর)–দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুর ব্লকের মুস্কি পুরের মধুমঙ্গল মালাকার তার হাতের শোলা শিল্পের কাজ দেখিয়ে শুধু পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতের মুম্বাই শহরই নয় বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে তার হাতের শোলা শিল্প আজ ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে।বাবা প্রয়াত তরুণীকান্ত মালাকারের হাত ধরেই শোলা শিল্পের কাজ
শিখেছিলেন ছেলে মধুমঙ্গল মালাকার।মাত্র যখন মধুবাবুর বয়স যখন মাত্র ২১ সেই সময় কলকাতার জাহাঙ্গীর আর্ট গ্যালারীর মেলা দিয়ে তার পথ চলা শুরু হবার পর থেকে তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি।পরবর্তীতে মধুমঙ্গল বাবু ভারতবর্ষের রাজধানী দিল্লি,মাদ্রাজ,বোম্বে গোয়া বেঙ্গালুরু সহ তার শোলার কাজ ভারতবর্ষের সর্বত্র বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি মেলায় গিয়ে পুরস্কৃত হয়।
এরপর ১৯৯৬ আমেরিকার হিউস্টন শহরে ষোড়শ বঙ্গ উৎসবে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সেই উৎসবে অংশগ্রহণ করেন।এর পর থেকে তার হাতের সুদৃশ্য শোলা শিল্পের সম্ভার নিয়ে মধু মঙ্গল বাবু সুদূর সানফ্রান্সিস্কো,স্কটল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড,বার্সিলোনা,মাদ্রিদ,ফিলাডেলফিয়া শহরের
মত বড় বড় শহরে গিয়ে তার হাতের শোলার কাজ দেখিয়ে সবার মনকে আকৃষ্ট করেন।ভারতের একটি গ্রাম থেকে গিয়ে কিভাবে বিদেশের বিভিন্ন শহরে মধুমঙ্গল বাবু কোন জাদুমন্ত্রে সেদেশের মানুষদের আকৃষ্ট করেছেন জানতে চাইলে মধুমঙ্গল বাবু বলেন ভালো
জিনিসের কদর সারা বিশ্বের সর্বত্র।সাধারণ মানুষের জন্য ভালো কিছু সৃষ্টি করলে আপনি সুদূর জঙ্গলের একটি গ্রামে থাকলেও সেখানে গিয়ে সেই পছন্দের জিনিসটি মানুষ সংগ্রহ করবেই।আপনার হাতের কোন কোন শোলার তৈরি শিল্পের জন্য আপনার এত বিশ্বব্যাপী নামডাক?এই প্রশ্নের উত্তরে মধুমঙ্গলবাবু বলেনতিনি এমন জিনিষ শোলা দিয়ে
বানিয়ে থাকেন তা যে কোন মানুষের পছন্দ হতেই হবে।তিনি বলেন তার হাতের শোলার কাজের মধ্যে তাজিয়া,পীরের ঘোড়া, মনসার পট,অথাই পাথায়,দেবদেবীর বুকবন্ধ প্রভৃতি।মধু বাবুর কথা থেকে জানা যায় তিনি সৃষ্টি শীল কাজ তৈরি করতেই বেশি আনন্দ পেয়ে থাকেন।মধুবাবু এক প্রশ্নের উত্তরে জানান সম্প্রতি মুম্বাই ফিল্ম ডিভিশনের উদ্দ্যোগে একবছরব্যাপী গয়না ও শোলার শিল্প নিয়ে একটি কর্মসালা প্রদর্শনী ও উৎপাদিত
সামগ্রীর বিপণনের ব্যবস্থ্যা করেছিলেন।সেই প্রদর্শনীর মূল উদ্দেশ্য ছিল চলচিত্র জগতে নূতনত্বের সৃষ্টি ও তার ব্যবহার।মধুবাবু এক প্রশ্নের উত্তরে জানান সম্প্রতি মুম্বাই ফিল্ম ডিভিশনের উদ্দ্যোগে একবছরব্যাপী গয়না ও শোলার শিল্প নিয়ে একটি কর্মসালা প্রদর্শনী ও উৎপাদিত সামগ্রীর বিপণনের ব্যবস্থ্যা করেছিলেন।সেই প্রদর্শনীর মূল উদ্দেশ্য ছিল চলচিত্র জগতে নূতনত্বের সৃষ্টি ও তার ব্যবহার।সেখানে ফিল্ম ডিভিশনের প্রদর্শনীতে যথেষ্ট সুনাম পেয়েছেন।এই সুবাদে ফিল্ম ডিভিশনের অনেকের সাথেই তার
পরিচয় হয়।মধুমঙ্গল বাবু বলেন পশ্চিম বঙ্গ থেকে ফিল্ম ডিভিশনের সেই প্রদর্শনী ও ওয়ার্কশপে একমাত্রতিনিই ডাক পেয়েছিলেন।মধুবাবু বলেন এই সব বড় ধরনের ওয়ার্কশপ ও প্রদর্শনীতে শুধু মাত্র আমার শোলার জিনিষ বিক্রি করবার জন্য যাই তা একদম নয়।ওখানে গিয়ে অংশগ্রহনকারী বিভিন্ন শিল্পিদের সাথে মেল বন্ধন ঘটে ও অনেক কিছু শেখা যায়।শুধু শোলা দিয়ে যে হাত,নাক,কান ও গলার মালা ,ঘর সাজানোর উপকরণ,মালা মুকুট,চুলের খোপার ফুল তৈরি করা যায় সে ধারণা অনেকেরই ছিলনা।শোলার তৈরি গহনা খুব হাল্কা হবার কারনে অতি সহজেই মানুষকে আকর্ষণ করে থাকে।মুম্বাই ফিল্ম ডিভিশনের কর্মকর্তাদের তার শোলার তৈরী জিনিসপত্র দেখে উচ্ছসিত প্রসংশা করেন।এটাই তার কাছে সবচেয়ে বড় পাওনা।মধুমঙ্গল বাবু আক্ষেপ করে বলেন পাঁচপুরুষ ধরে শোলার কাজ আমরা করে চলেছি।আমার ইচ্ছা ছিল আমরা কিরকম শোলার কাজ এতদিন ধরে করে আসছি শুধু রাজ্যই নয় ভারতবর্ষই নয় বিশ্বকে যদি দেখাতে পারতাম মনে শান্তি পেতাম।শোলার সূক্ষ্ম কাজ কত রকমের হয় তা আমি দেখানোর সুযোগ পেয়েছি বিশ্ববাসীকে।এত ভালো কাজের জন্য রাজ্য থেকে কোন পুরস্কার পেয়েছেন কি?তার উত্তরে মধুমঙ্গল বাবু বলেন না রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কোন পুরস্কার পাবার আমার সৌভাগ্য আজও হয়নি। তবে পুরস্কার পাওয়া নিয়ে কোন আক্ষেপ নেই।আক্ষেপ আছে আজও এ রাজ্যে শোলা শিল্পের কোন ভালো বাজার রাজ্য সরকার তৈরী করতে পারেনি।রাজ্য সরকার এসব দিকে নজGর দিলে শোলা শিল্পের সাথে অনেক যুবকরা যুক্ত হতে পারবে।শোলা শিল্পকে নিয়ে এত সুন্দর কাজ করার পরেও যদি রাজ্য সরকার নজর না দেয় এটাই দুঃখ আমার।