October 24, 2024

আপনি যদি নিজেকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তাহলে ‘অভ্যাস’ও কিন্তু আপনার দাস হতে পারে

1 min read
আমরা বলি, মানুষ অভ্যাসের দাস। আপনি যদি নিজেকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তাহলে ‘অভ্যাস’ও কিন্তু আপনার দাস হতে পারে। সফল মানুষদের কিছু অনুকরণীয় অভ্যাসের কথা শোনা যাক। হয়তো এই অভ্যাসগুলো রপ্ত করলে আপনিও উপকার পাবেন।ঘুম সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে দীর্ঘ দিন ধরে প্রচারণা চালাচ্ছেন আরিয়ানা হাফিংটন। ঘুমের ব্যাঘাত যেন না ঘটে, সেজন্য ঘুমানোর ৩০ মিনিট আগে থেকে তিনি মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না
১. নিয়ম করে ঘুমান


পরীক্ষার আগে কিংবা কাজের চাপে কখনো কখনো আমরা ‘ঘুম’কে অবহেলা করি। অনেক বড় বড় দায়িত্বের ভার কাঁধে থাকার পরও কিন্তু সফল মানুষেরা নিয়ম মেনে ঘুমান। টিভি ব্যক্তিত্ব এলেন ডিজেনারেস যেমন প্রতিদিন আট ঘণ্টা ঘুমান। মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস, নারী উদ্যোক্তা আরিয়ানা হাফিংটন ও আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস প্রতিদিন ৭ ঘণ্টা ঘুমান। পেপসির প্রধান নির্বাহী ইন্দ্রা নুয়ি ঘড়ি ধরে ৫ ঘণ্টা ঘুমান নিয়ম মেনে। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান তাঁরা। নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে গেলে আমাদের শরীরের লুকানো দেহঘড়িটা কার্যকর থাকে। তাই ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর অভ্যাস করুন। ঘুম কম হলে শরীর ও মনে হতাশা ভর করে, কাজের আগ্রহ কমে যায়। সপ্তাহখানেক চেষ্টা করলেই আপনার ঘুমকে নিয়মে বেঁধে ফেলতে পারবেন।

২. ভোরের আলো দেখুন
নিয়ম করে ঘুমাতে গিয়ে রাত তিনটায় ঘুমাবেন আর সকাল দশটা-এগারোটায় উঠবেন, সেটা কিন্তু ঠিক হবে না। অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক প্রতিদিন ভোর ৩টা ৪৫ মিনিটে ঘুম থেকে ওঠেন। টুইটারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জ্যাক ডর্সির ঘুম ভাঙে ভোর পাঁচটায়। দ্য রক খ্যাত হলিউড অভিনেতা ডোয়াইন জনসন প্রতিদিন ভোর ৪টায় ওঠেন। এই অভ্যাস তৈরির জন্য আগে ঘুমানোর সময় মুঠোফোন দূরে রাখার অভ্যাস করুন। সকালের জন্য প্রতিদিন কিছু নির্দিষ্ট কাজ ঠিক করে নিন, তাহলে প্রতিদিন সকাল-সকাল ঘুম ভাঙবেই। টানা ৩ সপ্তাহ সকালে ওঠার চেষ্টা করতে পারলে আপনার সকালে ওঠার অভ্যাস গড়ে উঠবে।
নিয়মিত শরীরচর্চা করেন মার্ক জাকারবার্গ
৩. নিয়মিত ব্যায়াম করুন
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সপ্তাহে ৬ দিন ৪৫ মিনিট করে ব্যায়াম করেন। যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখনো একইভাবে ব্যায়াম করতেন তিনি। আমরা অনেকেই আক্ষেপ করি বলি, কাজের চাপে ব্যায়াম করার সময় পাচ্ছি না! অথচ ভেবে দেখুন, যুক্তরাষ্ট্রের এই সাবেক প্রেসিডেন্ট তাঁর শত কাজের ভিড়ে শরীরচর্চাকেও একটা ‘গুরুত্বপূর্ণ কাজ’ হিসেবেই বিবেচনা করেন। ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা রিচার্ড ব্র্যানসন প্রতিদিন কাজ শুরুর আগে দৌড়ানো থেকে শুরু করে পাহাড়ে চড়ে এক ঘণ্টা ঘাম ঝরান। টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব অপরাহ্ উইনফ্রে প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত দুবার করে ২০ মিনিটের জন্য ধ্যান করেন। বয়স ৬০ পেরিয়েছে, এখনো প্রতিদিন অনন্ত ৪৫ মিনিট সময় দেন ব্যায়ামাগারে। আপনিও প্রতিদিন অন্তত ৪০ মিনিট হাঁটুন কিংবা দৌড়ান। বাড়িতেই ব্যায়াম করার অভ্যাস করুন। নিয়মিত ব্যায়ামে শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে।
বিল গেটস প্রতি সপ্তাহে অন্তত একটি বই পড়েন
৪. অনেক বই পড়ুন
বিখ্যাতজনদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা শত কাজের মধ্যেও নিয়মিত বই পড়েন। মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস বছরে ৫০টি বই পড়েন, প্রতি সপ্তাহে পড়েন অন্তত একটি। ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গও ২০১৫ সাল থেকে সপ্তাহে একটি করে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলেছেন। ধনকুবের ওয়ারেন বাফেট প্রতিদিন গড়ে ৬০০ থেকে ১০০০ পৃষ্ঠা পড়ার চেষ্টা করেন। আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত বই পড়ার বাইরে নন-ফিকশন ধরনের বই দিয়ে শুরু করুন। শুরুটা করতে পারেন বারাক ওবামার লেখা ড্রিমস ফ্রম মাই ফাদার কিংবা নেলসন ম্যান্ডেলার জীবনী দিয়ে। প্রথম দিকে অনভ্যাসের কারণে বই পড়তে বিরক্তি লাগতে পারে। শুরুতে প্রতিদিন ৫-৬ পৃষ্ঠা করে পড়ুন। যানজটে বসে থাকার সময়টা বই পড়ে কাজে লাগান।
৫. প্রতিদিন সকালে নাশতা করুন
ব্যস্ততার কারণে অনেকে সকালে নাশতা খেতে চান না। আপনার সারা দিন কতটা কর্মোদ্দীপ্ত হবে, তা কিন্তু নির্ভর করে সকালের নাশতার ওপর। অপরাহ্ উইনফ্রে প্রতিদিন সকালে ডিম ও টোস্ট খান। মিশেল ওবামা ও বারাক ওবামাও সকালে ডিম দিয়ে নাশতা সারেন। গায়িকা বিয়ন্সের পাতে সকালে থাকে ডিম, সবজি ও লো-ফ্যাট দুধ। অভিনয়শিল্পী এমা ওয়াটসনের টেবিলে রুটি আর ডিম থাকে সকালের নাশতায়।
৬. প্রতিদিনের একটা পরিকল্পনা জরুরি
বিল গেটস, রিচার্ড ব্র্যানসন আর এলন মাস্ক প্রতি রাতে আগামীকাল কী কী করবেন, তা ঠিক করে নেন। কর্মপরিকল্পনা ঠিক করে রাখলে তাড়াহুড়া করে কোনো কাজ করতে হয় না। ঘুমানোর আগে পরদিনের পরিকল্পনা এক টুকরো কাগজে লিখে রাখতে পারেন। কয়েক দিন এই নিয়ম মেনে চললে নিজের অগ্রগতি আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।
৭. ফেসবুক ও ই-মেইলের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার
নারী উদ্যোক্তা ও লেখক আরিয়ানা হাফিংটন প্রতিদিন ঘুমানোর ৩০ মিনিট আগে থেকে ফেসবুক আর ই-মেইল ব্যবহার করেন না। শুধু তা-ই নয়, ঘুম থেকে ওঠার এক ঘণ্টা পরে তিনি ই-মেইল পড়েন। এ ছাড়া সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটানোর সময় তিনি ফেসবুক বা ই-মেইল থেকে দূরে থাকেন। লিংকডইনের সিইও জেফ ওয়েনার ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিনে ২ ঘণ্টার বেশি সময় দেন না। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই ফেসবুকে চোখ রাখবেন না। আবার রাতে ঘুমানোর অন্তত ১ ঘণ্টা আগে ফেসবুক আর মুঠোফোন থেকে দূরে থাকুন।
৮. নোট নিন
সেকালের বিখ্যাত মার্কিন লেখক মার্ক টোয়েন থেকে শুরু করে একালের উদ্যোক্তা মার্ক জাকারবার্গ—সফলদের মধ্যে অনেকেরই একটা জায়গায় মিল। তাঁরা সব সময় কোনো ভাবনা মাথায় এলে কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য পেলে সেটা টুকে রাখেন। ক্লাসে, অফিসের মিটিংয়ে কিংবা নিজের একাকী সময়েও একটা নোটবুক সঙ্গে রাখতে পারেন।
৯. প্রতিদিন নতুন কিছু শিখুন
মার্ক জাকারবার্গ শত ব্যস্ততার মধ্যেও ম্যান্ডারিন ভাষা শিখেছেন। মার্কিন উদ্যোক্তা শন পার্কার কিংবা অভিনয়শিল্পী অ্যাস্টন কুচারও প্রতিদিন নতুন কিছু না কিছু শেখার চেষ্টা করেন। এই আগ্রহ আমাদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বিস্তৃত করে। আপনি হয়তো সাইকেল চালাতে জানেন না, সময় করে শিখে ফেলছেন না কেন? নতুন কিছু শেখার আনন্দ আপনাকে অন্যান্য ক
াজেও আগ্রহ জোগাবে। নতুন একটা ভাষা শিখতে পারেন। এই অভ্যাস আপনার মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াবে।
১০. মেধাবী ও বুদ্ধিমান বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান
মার্ক জাকারবার্গের নাকি বিল গেটসের সান্নিধ্য খুব পছন্দ। আবার বিল গেটস নাকি ওয়ারেন বাফেটের সঙ্গ পছন্দ করেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষকদের ভিড়ে কিংবা মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে খুব আগ্রহ নিয়ে সময় ব্যয় করেন এই সফল মানুষেরা। এভাবে তাঁরা নতুন কিছু শিখতে, জানতে চেষ্টা করেন। আপনিও নতুন নতুন বন্ধু তৈরির চেষ্টা করতে পারেন। বিভিন্ন বিতর্ক উৎসব, প্রতিযোগিতা বা কুইজে অংশ নিয়ে নতুন বন্ধু তৈরি করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *