October 26, 2024

তৃণমূল-বিজেপি যেন পৃথক দুই মেরু

1 min read
প্রীতম সাঁতরাঃ একদল যদি হাঁ করলে হাওড়া বলে, তো অপর দল বলবে হাবড়া। একে অপরের কট্টর বিরোধিতা করাই যেন অলিখিত দেওয়াল লিখন। নির্বাচিত কয়েকটি ক্ষেত্র ছাড়া ভারতীয় রাজনীতির এটাই অবশ্য দস্তুর। তৃণমূল-বিজেপি ক্ষেত্রেও তাই সাপে নেউলে সম্পর্ক ব্যতিক্রম নয়। বঙ্গ সরকার জখন কেন্দ্র দখলের স্বপ্নাচ্ছন্ন। তখন বিজেপি দখল করতে চাইছে বাংলার মসনদ। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বাংলার রাজনৈতিক দৃষ্টি বরাবরই ভিন্ন মাত্রার। ভারতের অন্যান্য জেলায় যতটা গেরুয়া শিবির যতটা সহজে জয় লাভ করেছে, বাংলার মাটিতে সেই কাজ যে ততটা সহজে সম্ভব নয় তা নির্ঘাত বুঝেছে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। অন্তত শনিবার অমিত শাহের মন্তব্য থেকে সেটাই বোধগম্য হল। ‘শ্যামাপ্রসাদের ভূমিতে বিজেপি ক্ষমতায় না আসলে ১৯টি রাজ্য জেতার দাম নেই’, অগুনতি কর্মী সমর্থকদের সামনে সদর্প ঘোষণা বিজেপি সর্ব ভারতীয় সভাপতির। 
প্রয়োজনে বাংলার জেলায় জেলায় সভা করতেও তিনি প্রস্তুত। কারণ অমিত জানিয়ছেন, তিনি বাংলা বিরোধী নন মমতা বিরোধী। তাই মেয়ো রোডের সভা থেকে তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করতে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়লেন না অমিত শাহ। এনআরসি, সিন্ডিকেট কিছুই বাদ গেল না অমিত শাহের ভাষণ থেকে। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের প্রেক্ষাপট আগেই তৈরি করে গিয়েছিলেন। এবার যেন ভোটের দামামা বাজিয়ে দিলেন বিজেপির প্রথম সারির এই নেতা। এদিনও যথারীতি ব্যবহার করা হল ধর্মীয় তাস। ‘মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে প্রচার করুন। ২০১৯ সালে ২২টি আসন নিশ্চিত করতে হবে। তারপর ২০২১ সালে ক্ষমতায় আসব আমরা। বিজেপি ক্ষমতায় এলে দুর্গাপুজোর বিসর্জন আটকাবে না, স্কুলে স্কুলে সরস্বতী পুজোও হবে।’ সর্বপরি উপস্থিত কর্মী সমর্থকদের সামনে একপ্রকার বিনীত সুরেই বললেন, ‘তিনটি দলকেই সুযোগ দিয়েছেন বাংলার মানুষ। এবার একটা সুযোগ দিন নরেন্দ্র মোদীকে। বাংলায় উন্নয়ন করব আমরা।’ 
তৃণমূল সরকার এখনও অবশ্য সমগ্র দেশবাসীর কাছে ‘একটা সুযোগ দিন’ জাতীয় কিছু জানায়নি। তারা এখন ব্যস্ত ফেডারাল ফ্রন্ট ঘোছানোর কাজে। তৃণমূল সুপ্রিমো দিল্লী দিল্লী পাড়ি দিয়েছেন বার কয়েক। যে এনআরসি ইস্যু নিয়ে বিজেপি সাহসিকতার বিউগল বাজাচ্ছে, সেই নাগরিকপঞ্জিকার সর্বাধিক বিরোধিতা এসেছে মমতা সরকারের পক্ষ থেকেই। আর কেনই বা করবে না। বিজেপির পর সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল হিসাবে মানুষ এখনও চেনে কংগ্রেসকেই। হাত শিবিরের সাথে পাল্লা দিতে স্পট লাইট কেড়ে নেওয়া আবশ্যিক। অন্তত অন্যান্য বিরোধী শিবির বা সম্ভাব্য ফ্রন্ট শরীকদের তুলনায় সে কাজ বেশ ভালই সেরে রাখছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে কংগ্রেস শিবিরের পক্ষ থেকে এত দিন মমতার প্রধানমন্ত্রী পদ প্রার্থী হওয়া নিয়ে আমতা আমতা করত। তারাও বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে সমর্থনের ব্যাপারে সম্মতি জানিয়েছেন। চন্দ্রবাবু নাইডু বা ফারুক আব্দুল্লারা তো আগেই মুখ্যমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে, কেন্দ্রর পিছনে ছুটতে গিয়ে রাজ্যপাঠকে অবহেলা করছেন না তো মমতা? বাংলায় সিন্ডিকেটের মত অভিযোগ উঠলেও, তার সপক্ষে কিন্তু সক্তপোক্ত কোনো প্রমাণ নেই। আর নারদা-সারদার মত ইস্যু এখনও তদন্তের বিষয়। বস্তুত কাঠুয়া, আলোয়ারের মত কোনো ঘটনাও এখনও পর্যন্ত এ রাজ্যে ঘটেনি। বা বিতর্কিত কোনো সিদ্ধান্তও নেয়নি দল। আর ২১ জুলাইয়ের সভাস্থলে লাখোলাখো কর্মী সমর্থকদের সমাবেশ মমতা জনপ্রিয়তার প্রমাণ বলেই মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *