October 26, 2024

প্রাক্তন মহাসচিব কোফি আন্নান প্রয়াত

1 min read
বয়স জনিত সমস্যায় ছিলেন বেশ কিছুদিন ধরেই। কিন্তু আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষায় বারবার তা অগ্রাহ্য করেছেন। গত বছরও শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের দূরবস্থা সরেজমিনে দেখতে ছুটে এসেছিলেন বাংলাদেশে। শনিবার সকালে থেমে গেল রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রাক্তন মহাসচিব কোফি আন্নানের লড়াই। তাঁর টুইটার হ্যান্ডলে পরিবার এবং কোফি আন্নান ফাউন্ডেশনের তরফে জানানো হয়েছে, কিছুদিনের শারীরিক অসুস্থতার পরে এদিন শান্তিতে সুইৎজারল্যান্ডে প্রয়াত হয়েছেন প্রাক্তন নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০।
১৯৯৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০০৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দু’দফায় রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব ছিলেন আন্নান। পূর্বসূরি বুত্রোস ঘালির পরে তিনি ছিলেন রাষ্ট্রপুঞ্জের শীর্ষপদে আফ্রিকা মহাদেশের দ্বিতীয় প্রতিনিধি। আন্নানের প্রয়াণে শোক প্রকাশ করে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের টুইট, ‘কোফি আন্নান ছিলেন কল্যাণের পথপ্রদর্শক। আজ শোকসন্তপ্ত বিশ্বের শরিক আমিও। অশান্ত এই সময়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাঁর উত্তরাধিকারই আমার প্রকৃত অনুপ্রেরণা’। আন্নানের স্ত্রী নানে এবং তিন সন্তানকে সমবেদনা জানিয়েছেন অ্যান্তোনিও।
১৯৩৮ সালের ৮ এপ্রিল ব্রিটিশ গোল্ড কোস্টের (বর্তমানে ঘানা) এক বর্ধিষ্ণু খ্রিস্টান পরিবারে আন্নানের জন্ম। দিনটি ছিল শুক্রবার। তাঁর ঠাকুরদা ছিলেন স্থানীয় আকান জনজাতি গোষ্ঠীর প্রধান। আকান ভাষায় শুক্রবারকে বলা হয়ে ‘কোফি’। ওই জনজাতির রেওয়াজ মেনে বারের নামে আন্নানের নামকরণ করেন তাঁর ঠাকুরদা। ঘানার কেপ কোস্টের এক শিশনারি বোর্ডিং স্কুল থেকে ১৯৫৭ সালে পাশ করেন আন্নান। সে বছরই ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি পেয়ে গোল্ড কোস্ট হয় ঘানা। এরপর ‘কুমাসি সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কলেজে’ শিক্ষাপর্বের পর উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় পাড়ি দেন তিনি। মিনেসোটার ম্যাকলেস্টার কলেজে অর্থনীতির ছাত্র হিসেবে ভর্তি হন। এরপর জেনেভার ‘দ্য গ্রাজুয়েট ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ’-এ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পাঠও শেষ করেন তিনি। সুইৎজারল্যান্ডে ম্যানেজমেন্টের পাঠক্রমও শেষ করেন।
১৯৬২ সালে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ (হু)-য় বাজেট অফিসার পদে যোগ দিয়েছিলেন আন্নান। এরপর সত্তরের দশকে ঘানায় ফিরে পর্যটন নিগমের আধিকারিকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ১৯৮০ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের প্রধানের পদে যোগ দিয়েছিলেন আন্নান। সেই বছরই রাষ্ট্রপুঞ্জের সহকারী মহাসচিবের দায়িত্ব পান। উপর্যুপরি তিন দফায় ওই দায়িত্ব পালনের পরে সংগঠনের শীর্ষপদের জন্য মনোনীত হন তিনি। ২০০১ সালে ইরাকে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধে সচেতনতা গড়ে তোলার স্বীকৃতিতে রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং তার মহাসচিব আন্নান যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। দারিদ্র এবং শিশুমৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রণে সপ্তম মহাসচিব আন্নানের ভূমিকাও প্রশংসিত হয়েছিল রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে।
রাষ্ট্রপু্ঞ্জের মহাসচিব পদথেকে অবসরের পরেও আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকার রক্ষায় নিরলস ভাবে কাজ করে গিয়েছেন আন্নান। নিজের ফাউন্ডেশনের পাশাপাশি নেলসন ম্যান্ডেলা প্রতিষ্ঠিত শান্তি ও মানবাধিকার সংগঠন ‘দ্য এল্ডার্স’-এর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে ছিলেন তিনি। ২০০৭ সালে ‘দ্য এল্ডার্স’-এর প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই ওই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন আন্নান। ২০১৩ সাল থেকে ছিলেন চেয়ারম্যান পদে। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তি মিশনের প্রধান ছিলেন তিনি। গৃহহারাদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের দায়িত্বও সামলেছেন। মায়ানমারে অশান্তিতে উৎখাত হওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাহায্যে গঠিত রাষ্ট্রপুঞ্জের কমিশনেরও নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। কেনিয়ায় রাজনৈতিক অশান্তি এবং গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতির অবসানেও ভূমিকা নিয়েছিলেন সক্রিয়ভাবে।
মাস চারেক আগে তাঁর ৮০ তম জন্মদিনে এক সাক্ষাৎকারে আন্নান বলেছিলেন, ‘আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রপুঞ্জের ভূমিকায় কিছু খামতি রয়েছে। তবে আমি কট্টর আশাবাদী, পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন হবে। যতদিন বাঁচব, সেই আশাই সঞ্চারিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।’ আশার আলো জ্বালিয়ে রেখেই বিদায় নিলেন আন্নান। — সংবাদসংস্থা
বার্নে: বয়স জনিত সমস্যায় ছিলেন বেশ কিছুদিন ধরেই। কিন্তু আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষায় বারবার তা অগ্রাহ্য করেছেন। গত বছরও শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের দূরবস্থা সরেজমিনে দেখতে ছুটে এসেছিলেন বাংলাদেশে। শনিবার সকালে থেমে গেল রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রাক্তন মহাসচিব কোফি আন্নানের লড়াই। তাঁর টুইটার হ্যান্ডলে পরিবার এবং কোফি আন্নান ফাউন্ডেশনের তরফে জানানো হয়েছে, কিছুদিনের শারীরিক অসুস্থতার পরে এদিন শান্তিতে সুইৎজারল্যান্ডে প্রয়াত হয়েছেন প্রাক্তন নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০।


(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

১৯৯৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০০৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দু’দফায় রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব ছিলেন আন্নান। পূর্বসূরি বুত্রোস ঘালির পরে তিনি ছিলেন রাষ্ট্রপুঞ্জের শীর্ষপদে আফ্রিকা মহাদেশের দ্বিতীয় প্রতিনিধি। আন্নানের প্রয়াণে শোক প্রকাশ করে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের টুইট, ‘কোফি আন্নান ছিলেন কল্যাণের পথপ্রদর্শক। আজ শোকসন্তপ্ত বিশ্বের শরিক আমিও। অশান্ত এই সময়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাঁর উত্তরাধিকারই আমার প্রকৃত অনুপ্রেরণা’। আন্নানের স্ত্রী নানে এবং তিন সন্তানকে সমবেদনা জানিয়েছেন অ্যান্তোনিও।
১৯৩৮ সালের ৮ এপ্রিল ব্রিটিশ গোল্ড কোস্টের (বর্তমানে ঘানা) এক বর্ধিষ্ণু খ্রিস্টান পরিবারে আন্নানের জন্ম। দিনটি ছিল শুক্রবার। তাঁর ঠাকুরদা ছিলেন স্থানীয় আকান জনজাতি গোষ্ঠীর প্রধান। আকান ভাষায় শুক্রবারকে বলা হয়ে ‘কোফি’। ওই জনজাতির রেওয়াজ মেনে বারের নামে আন্নানের নামকরণ করেন তাঁর ঠাকুরদা। ঘানার কেপ কোস্টের এক শিশনারি বোর্ডিং স্কুল থেকে ১৯৫৭ সালে পাশ করেন আন্নান। সে বছরই ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি পেয়ে গোল্ড কোস্ট হয় ঘানা। এরপর ‘কুমাসি সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কলেজে’ শিক্ষাপর্বের পর উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় পাড়ি দেন তিনি। মিনেসোটার ম্যাকলেস্টার কলেজে অর্থনীতির ছাত্র হিসেবে ভর্তি হন। এরপর জেনেভার ‘দ্য গ্রাজুয়েট ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ’-এ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পাঠও শেষ করেন তিনি। সুইৎজারল্যান্ডে ম্যানেজমেন্টের পাঠক্রমও শেষ করেন।
১৯৬২ সালে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ (হু)-য় বাজেট অফিসার পদে যোগ দিয়েছিলেন আন্নান। এরপর সত্তরের দশকে ঘানায় ফিরে পর্যটন নিগমের আধিকারিকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ১৯৮০ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের প্রধানের পদে যোগ দিয়েছিলেন আন্নান। সেই বছরই রাষ্ট্রপুঞ্জের সহকারী মহাসচিবের দায়িত্ব পান। উপর্যুপরি তিন দফায় ওই দায়িত্ব পালনের পরে সংগঠনের শীর্ষপদের জন্য মনোনীত হন তিনি। ২০০১ সালে ইরাকে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধে সচেতনতা গড়ে তোলার স্বীকৃতিতে রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং তার মহাসচিব আন্নান যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। দারিদ্র এবং শিশুমৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রণে সপ্তম মহাসচিব আন্নানের ভূমিকাও প্রশংসিত হয়েছিল রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে।


(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

রাষ্ট্রপু্ঞ্জের মহাসচিব পদথেকে অবসরের পরেও আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকার রক্ষায় নিরলস ভাবে কাজ করে গিয়েছেন আন্নান। নিজের ফাউন্ডেশনের পাশাপাশি নেলসন ম্যান্ডেলা প্রতিষ্ঠিত শান্তি ও মানবাধিকার সংগঠন ‘দ্য এল্ডার্স’-এর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে ছিলেন তিনি। ২০০৭ সালে ‘দ্য এল্ডার্স’-এর প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই ওই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন আন্নান। ২০১৩ সাল থেকে ছিলেন চেয়ারম্যান পদে। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তি মিশনের প্রধান ছিলেন তিনি। গৃহহারাদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের দায়িত্বও সামলেছেন। মায়ানমারে অশান্তিতে উৎখাত হওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাহায্যে গঠিত রাষ্ট্রপুঞ্জের কমিশনেরও নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। কেনিয়ায় রাজনৈতিক অশান্তি এবং গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতির অবসানেও ভূমিকা নিয়েছিলেন সক্রিয়ভাবে।


(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

মাস চারেক আগে তাঁর ৮০ তম জন্মদিনে এক সাক্ষাৎকারে আন্নান বলেছিলেন, ‘আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রপুঞ্জের ভূমিকায় কিছু খামতি রয়েছে। তবে আমি কট্টর আশাবাদী, পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন হবে। যতদিন বাঁচব, সেই আশাই সঞ্চারিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।’ আশার আলো জ্বালিয়ে রেখেই বিদায় নিলেন আন্নান।


(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *