October 25, 2024

কালিয়াগঞ্জের বালাস গ্রামের একসময়কার বিখ্যাত পুতুল নাচ আজ অবলুপ্তির পথে–

1 min read

কালিয়াগঞ্জের বালাস গ্রামের একসময়কার বিখ্যাত পুতুল নাচ আজ অবলুপ্তির পথে

পন চক্রবর্তী, কালিয়াগঞ্জ ১২ সেপ্টেম্বর:উত্তর দিনাজপুর জেলার বালাস গ্রামের একসময়কার ঐতিহ্যবাহী মনোরঞ্জনের হাতিয়ার পুতুল নাচ বর্তমানে অস্তিত্বের চরম সঙ্কটে। একটা সময় দাপিয়ে বেড়ানো কালিয়াগঞ্জ ব্লকের বালাস গ্রামের প্রখ্যাত পুতুল নাচ একসময় শুধু উত্তর দিনাজপুর বা দক্ষিণ দিনাজপুর নয় সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে অত্যন্ত বিশাল বাজার করেছিল ।আজ এই মুহূর্তে তা চরম আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে পরে তা বন্ধ হবার উপক্রম। উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ থেকে ১০ কিমি দূরে একদা পুতুল নাচের জন্য বিখ্যাত ছিল। বালাস গ্রাম। যেখানে সেই সব দিনের, যারা কাঠের পুতুলকে দিয়ে সারা রাজ্য শুধু নয় ভিন রাজ্যের বিভিন্ন আনচে কানাচেতে নিয়ে গিয়ে মানুষকে আনন্দ দিতেন ।

আজ তারা সেই গ্রামেই আছেন, আছে তাদের কাঠ পুতুলও, তবে পুরোপুরি শিল্পীদের মাটির বাড়িতে এক কোণাতে অগোছালো অবস্থায় রেখে দিয়েছে।বিগত দিনের স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে প্রবীন এক পুতুল নাচ শিল্পী তারিণী কান্ত সরকার, হরো গবিন্দ ,ললিত মোহন সরকার,কমল সরকার জানান, দাদা ভাই পুতুল নাচ নামে তাদের বালাশ গ্রামের এই পুতল নাচ একটা সময় শুধু জেলায় নয়, রাজ্যের মানুষদের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।সেই সময় এই পুতুল নাচ দেখতে সাধারণ মানুষেরা ভীষন ভীড় করত।

একেকটি পালার নাম যেমন ছিল, শকুন্তলা,লায়লা মজনু, ভক্তপ্রল্লাদ, রাজা হরিশচন্দ্র সহ আরো বেশ কিছু। তবে আজ আর নেই সেই পুতুল নাচ,আছে শুধু একরাশ বেদনা আর বিগত দিনের স্মৃতি।তাদের আক্ষেপ তারা শিল্পী হয়েও শিল্পী ভাতা পান না। অনেকে লোকশিল্পী ভাতা পেলেও তাদের কপালে এখনো জুটল না এই ভাতা।এদিকে এই গ্রামেরই শিল্পী কমল সরকার পুরোনো দিনের কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘একটা সময় ছিল যখন এই গ্রামের শিল্পীরা একত্রিত হয়ে নিজেরাই কাঠের পুতুল তৈরী করে পুতুল নাচ দেখাতাম মানুষকে আনন্দ দিতাম।

 

কিন্তু আজ আর নেই। শুধু রয়ে গেছে কাঠের সেই পুতুল গুলি।’ কমল বাবু জানান যে, পুতুল নাচকে কেন্দ্র করে তারা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় একটা সময় দাপিয়ে বেড়িয়েছিলেন। আজ পাশ্চাত্য সাংস্কৃতির দাপট ও বোকা বাক্সের দাপটে লুপ্ত হয়ে গেছে সেই পুতুল নাচ।

 

কেউ আর তাদের এই শিল্পকে গুরুত্ব দেয় না। তাই বাধ্য হয়ে রুটি রুজির তাগিদে গ্রামের শিল্পীরা পুতুল নাচ দেখানো বাদ দিয়ে অন্য পেশার দিকে ঝুঁকেছেন। এদিকে অপর এক পুতুল নাচ শিল্পী বলেন একটা সময় তাদের এই পুতুল নাচ এতটাই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল যে রাশিয়াতে যাওয়ার আমন্ত্রণ তারা পেয়েছিলেন। কিন্তু তখন বাড়ির মানুষেরা এতটা দূরে তাদের যেতে না দেওয়ায় তাদের যাওয়া হয়নি। শিল্পীদের বিশ্বাস সরকার যদি বালাস গ্রামের

পুতুল নাচকে উৎসাহ দিতে সরকারি সাহায্য করে তাহলে তাদের পুতুল নাচের সাথে যুক্ত বেশ কর্মী এই শিল্পকে পুনরায় বাঁচিয়ে তুলতে পারে।শিল্পীদের আক্ষেপ সরকার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সাংস্কৃতিকে বাচাতে নানান ধরনের চেষ্টা করেলেও, তাদের এই পুতুল নাচকে বাচাতে কোন দিনই এগিয়ে আসেনি ।অথচ গ্রাম্য পুতুল নাচের মাধ্যম মানুষকে সচেতন করবার একটি বড় হাতিয়ার ছিল।উত্তর দিনাজপুর জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর যদি বালাস গ্রামের পুতুল শিল্পীদের নুতন করে উৎসাহিত করতে পারে তাহলে তারা আবার নুতন উদ্যোগ নিয়ে কাজে নামতে ইচ্ছুক।

উত্তর দিনাজপুর জেলার তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের জেলা আধিকারিক রানা দেবদাস এক সাক্ষাৎকারে বলেন তিনি বালাস গ্রামের পুতুল নাচের শিল্পীদের সাথে দেখা করে তাদের সমস্যার কথা শুনে কি ভাবে বালাস গ্রামের বিখ্যাত পুতুল নাচের দলটিকে আবার লোকসংস্কৃতির আঙিনায় যুক্ত করা যায় তার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *