October 24, 2024

ইতিহাস চর্চায় নক্ষত্র পতনঃচলে গেলেন ঐতিহাসিক অনিরুদ্ধ রায়

1 min read
সুতীর্থ দেব কোলকাতা, ৮ ডিসেম্বর; চলে গেলেন মধ্যযুগের ইতিহাস চর্চার অন্যতম পথিকৃত অধ্যাপক অনিরুদ্ধ রায়(১৯৩৬- ২০১৮)। ৭ই ডিসেম্বর গভীর রাতে কোলকাতায় নিজবাসভবনে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। কর্মক্ষেত্রে প্রথমে কোলকাতার চারুচন্দ্র কলেজে ইতিহাসের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান। পরবর্তীতে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণা। পরে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। দীর্ঘ চার দশক ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে থেকে কাজ করেছেন তিনি। বাংলার বাইরে ও  বিদেশে গিয়ে তিনি নানা সময়ে নানা বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। বাংলার ও ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শোকবার্তা এসে পৌছেছে। বাংলাদেশ থেকেও এসেছে শোকবার্তা।


(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

 প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ইরফান হাবিব, শিরিন মুসভি, ইসরাত আলম সহ অনেকে ব্যাক্তিগতভাবে শোকবার্তা পাঠিয়েছেন। তাঁর বহু ছাত্র- ছাত্রী বর্তমানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, অধ্যাপক -অধ্যাপিকা এবং কলেজেও বহু অধ্যাপক – অধ্যাপিকা কাজ করছেন।


(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২। তাঁর মৃত্যুতে বাংলার তথা ভারতের ইতিহাস জগতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। কোলকাতার বাসবভনে তাঁর অনুগামীদের ভীড় প্রমাণ করে অনিরুদ্ধ রায়ের জনপ্রিয়তা কেমন ছিল। বিভিন্ন ইতিহাস সম্মেলনে বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদ ও ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি কংগ্রেস এর বার্ষিক সম্মেলনে তাঁর উপস্থিতি অন্য মাত্রা এনে দিত। একেবারে সহজ সরল জীবন যাপন করতেন তিনি। সকলের সাথে তাঁর গভীর আত্মিক সম্পর্ক। 
 চুরুট মুখে নিয়ে হাসি মুখে সকলের সাথে মেতে উঠতেন আড্ডায়। পরবর্তী মধ্যযুগ এবং আদি ঔপনিবেশিক বাংলা ও ভারতের একজন নিরলস ইতিহাস কর্মী হিসেবে আজীবন কাজ করে গেছেন। আর্কাইভাল গবেষণার পথ প্রদর্শক অনিরুদ্ধ রায় চলে গেলেও রেখে গেছেন অসাধারণ কিছু গবেষণা। যা ইতিহাস প্রেমী সকলের কাছে অমুল্য সম্পদ। তাঁর লেখা গ্রন্থগুলির মধ্যে ‘ট্রেড পলিটিক্স এন্ড প্লান্ডার’, ‘দি মারাঠাস এট ক্যাম্বে’, ‘টাউন সিটিস অফ মেডিয়াভাল ইন্ডিয়া- এ ব্রিফ সার্ভে’, ‘মারসেন্ট এন্ড দি স্টেট; দি ফ্রেঞ্চ অফ ইন্ডিয়া’, ‘দি রেবেল নবাব অফ আউদ ;রিভল্ট অফ ভিজির আলি খান’,’এডভেঞ্চার, ল্যান্ডওনার্স, এন্ড রেবেলসঃ বেঙ্গল’ হল অন্যতম ।


(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

 বাংলা গ্রন্থগুলোর  মধ্যে ‘মধ্যযুগের ভারতীয় শহর’, ‘মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান- পতন’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। যৌথ ভাবে তিনি লিখেছেন ‘মুর্শিদাবাদ আফেয়ার্স, রেকর্ডস অফ বেরহাম্পুর কালেক্টরেট’, ‘মসুলিপত্তম এন্ড ক্যাম্বেঃ এ হিস্ট্রি অফ টু টাউন্স’ ইত্যাদি গ্রন্থ।  এছাড়া বেশ কয়েকটি গ্রন্থ তাঁর সুযোগ্য সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে।  ‘হিস্ট্রি অফ ডেকান, মেডিয়াভেল এন্ড মডার্ন’, ‘টিপু সুলতান এন্ড হিজ এজ- এ কালেকশন অফ সেমিনার পেপার্স’ হল তাঁর কয়েকটি বিখ্যাত সম্পাদনা গ্রন্থ। তাঁর লেখাতে বাস্তবতা, যুক্তিনির্ভরতা ও বস্তুনিষ্টতা ইতিহাসপ্রেমীদের  উৎসাহ ও আগ্রহ বাড়ায় । অনিরুদ্ধ রায় বিভিন্ন ইতিহাসকেন্দ্রিক সংগঠনের সদস্য ও কর্মকর্তা হিসেবে আজীবন কাজ করে গেছেন। ২০০৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তিনি পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদের সভাপতির পদ অলংকৃত করেছিলেন। ঐ সময়ে তাঁর সম্পাদনায় বেশ কয়েকটি মূল্যবান ইতিহাস গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। মুন্সীরাম মনহরিলাল পাব্লিশার্স, এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশনা, প্রগ্রেসিভ  পাব্লিশার্স এর মত গুরুত্বপুর্ণ প্রকাশনী থেকে তাঁর অসংখ্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্র-পত্রিকায় তাঁর অগণিত গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।  এরূপ একজন ইতিহাস অন্বেষকের চলে যাওয়া খুব স্বাভাবিকভাবেই ইতিহাস গবেষণার জগতে বিরাট ঘাটতি যা কোনদিনই পুরন হবার নয়।


(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});


(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

6 thoughts on “ইতিহাস চর্চায় নক্ষত্র পতনঃচলে গেলেন ঐতিহাসিক অনিরুদ্ধ রায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *