October 26, 2024

করোনা দমনে মায়ের পুজোর প্রস্তুতি রাধিকাপুর এর  উদগ্রামে

1 min read

করোনা দমনে মায়ের পুজোর প্রস্তুতি রাধিকাপুর এর  উদগ্রামে

পিয়া গুপ্তা চক্রবর্তী, উত্তর দিনাজপুর রাজ্যে ক্রমেই বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এ দিকে হাতে গোনা আর মাত্র কিছুদিন তার পর মায়ের আগমন। করোনা আবহের মাঝেও কিন্তু মায়ের আগমনের প্রতীক্ষায় চেয়ে রয়েছেন উদগ্রাম বাসী। মায়ের আগমন ঘটলেই করোনা নামক দুষ্টের দমন ঘটবে এটা বিশ্বাস এখন উত্তর দিনাজপুর রধিকাপুরের উদগ্রামের প্রতিটি মানুষের।প্রায় চারশো বছরের ও বেশি পুরানো ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ ব্লকের রাধিকাপুর গ্রামপঞ্চায়েতের উদগ্রামের দুর্গাপূজা।উদগ্রামের মানুষদের বিশ্বাস ও ভক্তি এতটাই যে গ্রামে কোনও বড় বিপদের উৎপত্তি ঘটলেই বাসিন্দারা ছুটে আসেন দেবী দুর্গার কাছে। করোনা আবহে যখন বিগ বাজেটের পুজো গুলো এবারের পুজোর জৌলুস ও বাজেট কমিয়ে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। ঠিক তখনই উদগ্রাম বাসী এখন থেকেই পুজোর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। প্রতিবারের তুলনায় এবারে বড়ো করে মায়ের পুজোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।উদগ্রামের দুর্গা পুজোকে ঘিরে নানা ইতিহাসের উপকথা জড়িয়ে আছে৷ সময়ের সঙ্গে অনেক নিয়ম নীতির পরিবর্তন হয়েছে৷ কিন্তু প্রাচীনতার ছোঁয়াচ রয়েছে আজও এই পুজোয় ।

জানা যায় একসময় বাংলাদেশের দিনাজপুরের রাজবাড়ি থেকে কামানের গোলার গগনভেদি শব্দ শোনার পরই রাধিকাপুরের উদগ্রামে শুরু হত দেবী দুর্গার বোধন। এমনটাই রীতি ছিল সেই সময় ।যদিও আজ সেই সব শুধুই গল্পগাঁথায় পরিণত হয়েছে। কালের নিয়মে অনেক কিছুই পাল্টে গেছে৷ এখনও এখানে কাঁটাতারের বেড়া দেশভাগের যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছে৷আজ দুই বাংলাতেই নেই কোনও রাজা বা নেই তাদের রাজ্যপাট কামানের গোলার শব্দও আজ আর মেলেনা। তবে নিয়ম নিষ্ঠাভরে দেবোত্তর সম্পত্তির উপার্জন আর ভক্তদের দানের টাকায় পূজা হয়ে আসছে উদগ্রামে।মাঝে টাঙ্গন নদী ও সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়াজাল আজ দুই বাংলা কে বিভাজন করে দিলেও আজও এই শারদীয়া উৎসবে উদগ্রামের পুজোকে ঘিরে উদ্দীপনায় খামতি নেই। প্রতি বছর ষষ্ঠী থেকে দশমী উন্মাদনার সেই এক ছবি দেখা যায়। কামান দাগার আওয়াজ না থাকলেও, পুরনো প্রথা মেনে সময়মতো দেবী দশভূজার ঘট বসানো হয়। পুজোর চারটে দিন গোটা গ্রামজুড়ে চলে নিরামিশ ভোজন।

চারশো বছরের ও পুরনো উদগ্রামের দুর্গাপূজা এখানকার দেবী দুর্গা এতটাই জাগ্রত বলে বিশ্বাস সাধারণ মানুষের যে সেই প্রাচীনকাল থেকে আজও গ্রামে কোনও বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান থাকলে সর্বপ্রথম মন্দিরেই নেমন্তন্ন পত্র দিয়ে আসেন বাসিন্দারা। এমনকি ছায়ামন্ডপ তৈরি করে ছেলেমেয়েদের বিয়েও দেওয়া হয় এই মন্দিরের চাতালে। মাহাত্ম্যের কারণে জাগ্রত দেবী দুর্গার পূজাতে চারটে দিন হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে সীমান্তের এই অঁজ পাড়াগাঁ উদগ্রাম মন্দিরে। এই পূজাতে কোনও চাঁদা তোলা হয়না। মন্দিরের নিজস্ব সাত বিঘে জমিতে গ্রামের লোকেরাই ফসল ফলিয়ে সেই ফসল বিক্রির টাকা ও ভক্তদের দানের অর্থ দিয়ে পূজা হয় দেবীর।ষষ্ঠীর দিন থেকে পাঁচদিন ধরে চলে মঙ্গলচন্ডির গান। অষ্টমীতে এখানে বলির প্রচলন রয়েছে। পুজা উপলক্ষে মন্দির প্রাঙ্গনে বসে মেলা। দশমীতে বিসর্জনের রীতি নেই এখানে। সারা বছর দেবীর প্রতিমা মন্দিরেই বিরাজমান থাকে। জন্মাষ্টমীর পরদিন দেবীর ভাসান হয়। শুধু এই জেলার নয়, মালদা,শিলিগুড়ি, বালুরঘাট থেকে ভক্তরা আসেন মায়ের কাছে মানত করতে।তবে হাতেগোনা কয়েকজন মানুষ হাতে পাসপোর্ট আর ভিসা নিয়ে আজও আসেন ওপর বাংলা থেকে ছুটে উদগ্রামের দেবীর মাহাত্ম্যের টানে। উদ গ্রামে স্মৃতী হিসেবে এখনও রয়েছে দুর্গামন্দিরের সামনে থাকা দুই বাংলার মানুষের হাতে গড়া তুলসী বেদী।পুজোর ক’দিন গ্রামের মানুষ খুব একটা বাইরে কোথাও যান না৷ দেবী দুর্গার মৃন্ময়ী মূর্তি আজও বংশ পরম্পরায় তৈরি করে চলেছেন একই মৃৎশিল্পীর পরিবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *