লকডাউনের মধ্যে কালিয়াগঞ্জের সুমিস্ট ফল লিচু বেঁচে থাকার রসদ জুগিয়ে আসছে
1 min readলকডাউনের মধ্যে কালিয়াগঞ্জের সুমিস্ট ফল লিচু বেঁচে থাকার রসদ জুগিয়ে আসছে
তপন চক্রবর্তী-কালিয়াগঞ্জের কাঁচা লঙ্কা একসময় পশ্চিমবঙ্গ,বিহার ও আসামের চাহিদা মিটালেও বর্তমানে কালের পরিবর্তনে আজ সেসব দিন হারিয়ে গেছে।তবে কালিয়াগঞ্জের কাঁচালঙ্কাকে টেক্কা দিয়ে বর্তমানে সেই স্থান দখল করেছে কালিয়াগঞ্জের বিখ্যাত সুমিষ্ট ফল লিচু।আর এই জৈষ্ঠ মাসে একগোছা কালিয়াগঞ্জের সুমিস্ট লিচু যদি জামাই সষ্ঠীর ডালিতে শ্বশুর বাড়িতে না দিতে পারে তাহলে বাবা জামাইদের যেমন মন ভরেনা তেমনি নুতন সব শ্বাশুরীদের মন ভরে না।তাই জামাই সষ্ঠীতে কালিয়াগঞ্জের জামাইদের এখানকার লিচু না হলে জামাই সষ্ঠী পুরোপুরি হয়না।কালিয়াগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামে বেশ কিছু দিন ধরেই লিচু বাগানের প্ৰতি লিচু চাষিদের বাগান করবার দিকে ব্যাপক ঝোঁক বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মধ্যে কালিয়াগঞ্জ একটি লিচুর বড় ব্যবসা কেন্দ্র হয়ে উঠেছে বলা যায় আর সেই কারণেই কালিয়াগঞ্জ রেল স্টেশন চত্বরে গড়ে উঠেছে লিচুর বিরাট আরত কেন্দ্র।এখন জৈষ্ঠ মাসের প্রথম থেকে ভোর সাড়ে চারটা থেকে পাঁচটার মধ্যে বিভিন্ন গ্রাম থেকে লিচু চাষিরা তাদের লিচু বাগানের লিচু ভোর বেলায় নিয়ে এসে হাজির হয় লিচুর পাইকারদের কাছে লিচু বিক্রি করবার জন্য।শুনলে অবাক হবার কথা।
বিহারের কাটিহার থেকে কালিয়াগঞ্জ হয়ে রাধিকাপুরে একটি প্যাসেঞ্জা র ট্রেন রাত সাড়ে দশটায় কালিয়াগঞ্জ স্টেশনে এলে বিহারের সালমারি,বারসই,মুকুরিয়া থেকে প্রচুর মহিলারা লিচু ক্রয় করতে এসে রাতে স্টেশনে এসেই প্লাটফর্মে বিছানা করে ঘুমিয়ে পরে।ভোরবেলা স্টেশনের পাশে লিচুর আরত থেকে বস্তাবন্দি লিচু নিয়ে ভোর পাঁচটার ট্রেনে লিচু নিয়ে বিহারে চলে যায়।শুধু বিহার কেন দক্ষিণ দিনাজপুর,মালদা থেকেও লিচুর পাইকাররা এসে লিচু নিয়ে যাচ্ছে।কালিয়াগঞ্জ রেল স্টেশন চত্বর সকাল বেলা শুধু লাল আর লালে
এক অপরূপ দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠে।বিহারের বারসই থেকে আসা ইয়াসিন আলী ভোর বেলায় কালিয়াগঞ্জ রেলস্টেশনে লিচু নিয়ে ট্রেনে উঠবার সময় জানতে চাইলাম বিহার থেকে এখানে লিচু নিতে আসেন কেন প্রশ্ন করলে ইয়াসিন আলী বলেন কালিয়াগঞ্জের লিচু বাবু আমার ও আমার চার জনের পরিবারের বাঁচার রসদ যোগায়।লকডাউনে সব ব্যবসা শেষ হয়ে গেছে।এটাই এখন আমাদের বাঁচিয়ে রাখছে।সালমারীর মহিলা লিচু ব্যবসায়ী বন্দনা পাসওয়ান বলেন কালিয়াগঞ্জের লিচু বিহারে খুব ভালো চলে।
এটা করেই তিন ছেলেপুলে ও আমরা দুজন কোন রকমে খেতে পারছি বাবু।এই মুহূর্তে কালিয়াগঞ্জের লিচুর দাম কত জিজ্ঞাসা করলে বিহারের মুকুরিয়ার লিচু ব্যবসায়ী সহদেব কুজুর বলেন কালিয়াগঞ্জের লিচু আমরা কিনে থাকি একহাজার লিচু ৪০০টাকা দিয়ে।কিন্তূ বিহারে এই লিচু আমি বিক্রি করে একহাজার লিচু ৬৫০ টাকা দিয়ে।প্রতিদিন তিনবস্তা চারবস্তা লিচু কিনে নিয়ে যাই।খুব ভালো লাভ হয় এবং একটা লিচুও থাকেনা।
এই করোনার সময়ে গেল বার থেকে কালিয়াগঞ্জে এসে লিচু নিয়ে ব্যবসা করি।কালিয়াগঞ্জের অনন্তপুরের লিচু চাষি খগেন দেবশর্মা এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন এবার লিচুর দাম আমরা ভালো পাচ্ছি।তাছাড়া লিচুর গাছ একবার বড় হয়ে গেলে আর ভয় থাকেনা।লিচুর খেতে তেমন কোন খরচ নেই।লিচু গাছে এলে রাতে বাদুর ছাড়াও কিছু পাখি খুব লিচু খেয়ে নষ্ট করে।সেই কারণে আমরা গাছের উপর বড় নেট দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়।তাছাড়া কোন কোন সময় রাত জেগে পাহারাও দিতে হয়।এবার লিচুর দাম আরো বাড়বে জামাই ষষ্ঠীর সময়।তাই আশায় আশায় বুক বেঁধে আছি এই লকডাউনের সময়।