January 11, 2025

ইসলামপুরের ঐতিহ্যবাহী,সুস্বাদু সূর্যাপুরী আম চাষকে রক্ষা করতে উদ্যানপালন বিভাগকে এগিয়ে আসা উচিৎ

1 min read

ইসলামপুরের ঐতিহ্যবাহী,সুস্বাদু সূর্যাপুরী আম চাষকে রক্ষা করতে উদ্যানপালন বিভাগকে এগিয়ে আসা উচিৎ

তপন চক্রবর্তী-একটি এলাকা,একটি জাতি,একটি ভাষা,একটি সমাজ সংস্কৃতি নিয়ে একটি ফলের নাম।যার নাম ‘সূর্যাপুরী আম”।এই রকম মেল বন্ধন পৃথিবীতে কোথাও আছে বলে জানা নেই।অনুমান করা হচ্ছে সূর্যবংশীয় শাসকদের বস বাংলার শুর বংশীয় রাজার অনুসরনে এর নামকরণ হতে পারে।মূল সূর্যাপুরের কিছু অংশ এখন নেপালে এবং কিছু অংশ বিহারে।অবশিষ্ট অংশ পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে।এই বিস্তীর্ণ এলাকায় এক ধরনের আম পাওয়া যায় যার নাম সূর্যাপুরী আম।এই আম খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এর বিশেষত্ব সবাইকে ভাবায়।সূর্যাপুর এলাকায় শুধু মাত্র এই আম হয়ে থাকে। উত্তর দিনাজপুর জেলার অন্য কোথাও এই আম হয়না।সূর্যাপুর এলাকা ছাড়া অন্য কোথাও এই আম গাছের চারা লাগলে

 

এই আম তার স্বাদ গন্ধ সব।হারিয়ে ফেলে।শুধু তার স্বাদ বা গন্ধ হারায় তা নয় সেই আম গাছের আম একেবারে টক হয়ে যায়ও।আসলে প্রকৃতি,মাটি আর আবহাওয়ার সাথে এক নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করেছে এই সূর্যাপুরী আম।সূর্যাপুরী আমের উৎপাদন ক্ষেত্রকে সূর্যাপুর এলাকা হিসাবে গন্য করা হয়।কথিত আছে সৈয়দ দস্তর খানের দরবারে সূর্যা পুরী আমের বিশেষ কদর ছিল।বাংলার সুবেদার ইসলাম খাঁ নিজেই এই আম খুব পছন্দ করতেন এবং সম্রাট জাহাঙ্গীরকে এই আম উপহার দিতেন।সূর্যাপুরের সেই আমলের মানুষ এই আম চাষকে অর্থকরী ফসল হিসাবে আম চাষকে দেখেন নি।পরিবারের খাবার জন্য প্রয়োজনীয় সূর্যাপুরী আম গাছ লাগাতেন বলে জানা যায়। প্রয়োজনীয় আম নিয়ে অতিরিক্ত আম হাটে বাজারে গরুর গাড়িতে নিয়ে গিয়ে সবাইকে বিলিংকরে দিতেন।উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি বাজারে সূর্যাপুরী আমের

প্রচুর চাহিদা তার স্বাদের গুনে।একদা সকলের ঘরে সূর্যাপুরী আম গাছ থাকা একপ্রকার রে-ওয়াজ ছিল।তাই এখনও সূর্যাপুরী জনজাতির বাড়িতে দুই একটি সূর্যাপুরী আম গাছ পাওয়া যায়।বর্তমানে সে আমের সেই আম তার পূর্ব পরিচয় ও জৌলুস হারাতে বসেছে।জানা যায় এই আমের স্বাদ দীর্ঘ সময় ধরে নাকে মুখে লেগে থাকে।মধ্যম আকারের এই আম অনেকটা বাংলার ৫ হেরফের মত দেখতে।এই আমের ভেতরটা মাংস ও রস যুক্ত।এই আমের ভেতর কোন প্রকার আশ থাকেনা।সূর্যাপুরী আমের আটি মাঝারি আকারের হয়ে থাকে।

এই আম দীর্ঘ সময় ধরে হাতের তালুতে নাড়াচারা করলে দেখা যায় এই আমের ভিতরটা সম্পূর্ণভাবে রসালো হয়ে যায়।এই পদ্বতিকে সূর্যাপুর এলাকার মানুষ বলে থাকে “কটি কানা’ করে সূর্যা পুরী আম খাওয়া।এই আম শুধুমাত্র ভিতর থেকে মানুষের মনে আগ্রহ জাগায় তা নয় এই আম পরিণত হলে এর রঙ হলদে হয়ে যায়।খুব কম সময় লাল রঙের আবছা দেখা যায়।এই আমের বোটা তুলনামূলক ভাবে নরম হয়।সূর্যাপুরী আম পাকা অবস্থায় নিজেই ঝরে পড়ে যায়।এই আমের ফলন প্রচুর পরিমানে হয়ে থাকে।এই আম কাঁচা অবস্থায় ।

পেরে রেখে পাকিয়ে খেলে যে স্বাদ পাওয়া যায় তার থেকে কয়েকগুণ গাছ পাকা আমের আলাদা স্বাদ পাওয়া যায়।এত মর্যাদা সম্পন্ন সূর্যাপুরী আম আজকাল বাজারে দুষ্প্রাপ্য।তার কারণ সূর্যাপুরী জনসমাজের মত সূর্যাপুরী আমও আজ গভীর সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে চলছে।এক সময় বিহারের পূর্ণিয়া,আরারিয়া,কিশনগঞ্জ বাংলাদেশের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, তেঁতুলিয়া এলাকা ও নেপালের কিছু কিছু এলাকায় এই আমের প্রচুর গলন হত।এত মর্যাদা সম্পন্ন সূর্যাপুরী আম আজকাল বাজারে দুষ্প্রাপ্য।

তার কারণ সূর্যাপুরী জনসমাজের মত সূর্যাপুরী আমও আজ গভীর সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে চলছে।এক সময় বিহারের পূর্ণিয়া,আরারিয়া,কিশনগঞ্জ বাংলাদেশের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, তেঁতুলিয়া এলাকা ও নেপালের কিছু কিছু এলাকায় এই আমের প্রচুর ফলন হত।বর্তমানে সূর্যাপুরী আম বাজারে খুব কম চোখে পড়ে।যে সামান্য পরিমাণ আম বাজারে ওঠে তাও কিনতে মানুষ ভয় পায়।

তার কারণ এই আমে বর্তমানে এক প্রকার পোকার উপদ্রব দেখা যায়।গত ১৯৯৫ সাল থেকে সূর্যাপুরী আমে এই পোকা রোগ প্রকটভাবে দেখা যায়।এই সময় থেকে সূর্যাপুর এলাকায় প্রচুর চা বাগান করবার জন্য এলাকার ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা যায়।এলাকাবাসীদের ধারণা চা বাগান ব্যপক আকারে হবার কারনেই নাকি এই পোকার উপদ্রপ ঘটেছে।তবে এর কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।এই পোকা যেমন আমের মধ্যে পাওয়া যায়।তেমনি আম গাছেও প্রচুর দেখা যায়।সূর্যা পুরী আমে বাইরে থেকে বোঝা যায়না এ আমে পোকা আছে।এই সমস্যা দুর্যাপুরী আম চাষিদের ভাবিয়ে তুলেছে বলে জানা যায় যারা আম বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করতে চায় তারা নুতন করে সূর্যাপুরী আমগাছের চারা লাগাতে চায়না।ইসলামপুর মহকুমার সূর্যাপুর এলাকার মানুষদের দাবি রাজ্য সরকারের উদ্যানপালন দপ্তরের উচিৎ সূর্যাপুরের এই ঐতিহ্যপূর্ন আমকে বাঁচিয়ে রাখতে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ বলেই তারা মনে করেন।সূর্যাপুরী আমকে টিকিয়ে রাখতে যেমন গবেষণা প্রয়োজন তেমনি সূর্যাপুরী মানুষদের পরিবার পিছু কম করেও এই আম বাঁচিয়ে রাখতে এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ রাজ্যের উদ্যানপালন বিভাগের।

6 thoughts on “ইসলামপুরের ঐতিহ্যবাহী,সুস্বাদু সূর্যাপুরী আম চাষকে রক্ষা করতে উদ্যানপালন বিভাগকে এগিয়ে আসা উচিৎ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *