মালদহে দলকে চাঙ্গা করতে জেলা নেতৃত্বকে নির্দেশ দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মালদহে দলকে চাঙ্গা করতে জেলা নেতৃত্বকে নির্দেশ দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার থেকে উত্তরবঙ্গ সফরে এসেছেন তিনি। সোমবারই শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ উৎসবের উদ্বোধনে ডাক পেয়েছিলেন মালদহ জেলার তৃণমূল সভানেত্রী তথা রাজ্যসভার সাংসদ মৌসম নুর। সেখানে মৌসমের সঙ্গে কথা বলেন এবং এই নির্দেশ দেন তৃণমূল সুপ্রিমো।মৌসম বলেন, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে দলনেত্রী মালদহে ভালো ফল আশা করছেন। সেই বিষয়টি তিনি আমাকে জানিয়েছেন। ভালো ফলের জন্য সংগঠন মজবুত করতে হবে। সেব্যাপারে নেত্রী আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন।উল্লেখ্য, রাজ্যে গত দশ বছরে তৃণমূল দাপট দেখালেও মালদহে ঘাসফুল শিবির সেভাবে মাথাচাড়া দিতে পারেনি। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এজেলায় একটি আসনেও শাসক দল জয়ের মুখ দেখতে পায়নি। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও তৃণমূলকে শূন্য হাতেই ফিরতে হয়।
পরপর নির্বাচনে খারাপ ফলাফল নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলাতেও হতাশার সুর শোনা গিয়েছে। এর আগে মালদহ জেলা সফরে এসে এনিয়ে তিনি কিছুটা উষ্মা প্রকাশও করেছেন। দলের নেতানেত্রীদের পাশাপাশি জেলাবাসীর উপরেও তিনি যে অভিমান করেছেন তা তাঁর বক্তব্যে বুঝিয়ে দিয়েছেন। একইসঙ্গে জেলাবাসীর কাছে দলকে সাদরে গ্রহণ করার আবেদন জানিয়েছেন।গত লোকসভা নির্বাচনে বিধানসভা ভিত্তিক ফলাফলে দক্ষিণ মালদহের কোনও আসনেই তৃণমূল এগিয়ে ছিল না। উত্তর মালদহের অন্তর্গত রতুয়া এবং হরিশ্চন্দ্রপুর আসনে তৃণমূল প্রার্থী মৌসম ‘লিড’ পেয়েছিলেন। তবে জেলার ১২টি আসনে ২০১৬ সালের তুলনায় তৃণমূল বেশি ভোট পেয়েছিল। সেই বিষয়টি দলকে চাঙ্গা করেছে। তবে জেলায় গোষ্ঠীকোন্দল তৃণমূল নেতৃত্বের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্লক ও অঞ্চল কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বকে নাস্তানাবুদ হতে হয়। তার আগে কংগ্রেস থেকে আসা নেতাকর্মীদের নিয়েও তৃণমূলের অন্দরে দ্বন্দ্বের পরিস্থিতি তৈরি হয়।গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে জেলার বেশ কিছু জায়গায় সংগঠন দুর্বল হয়ে পড়ে। বিধায়ক ও ব্লক সভাপতিদের অনুগামীরা সমান্তরালভাবে সংগঠন করতে থাকেন। তারফলে দলের ঐক্য নষ্ট হয়ে যায়। বিষয়টি জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। জেলা নেতৃত্বের মধ্যেও দূরত্ব তৈরি হয়েছে। নেতানেত্রীরা মাঝেমধ্যেই একে অপরের বিরুদ্ধে তোপ দাগছেন। বছরখানেক আগে জেলার দুই পুরসভায় অনাস্থা প্রস্তাব আনার সময় জেলা নেতৃত্ব কার্যত দু’ভাগে ভাগ হয়ে যায়। দ্বন্দ্বের সেই চোরাস্রোত এখনও চলছে।জেলার গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্বও বিব্রত। বিধানসভা নির্বাচনের আগে যাতে তা মাথাচাড়া না দেয়, তারজন্য রাজ্য নেতৃত্ব প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছে। সমস্যা সমাধানে ভোটকৌশলী প্রশান্ত কিশোরের টিমের লোকজনও জেলার নেতাদের মধ্যে সমন্বয় বজায় রেখে চলছেন। এবারের বিধানসভা নির্বাচন তাই তৃণমূলের কাছে কার্যত চ্যালেঞ্জের বিষয়।বিজেপি মালদহে সাংগঠনিকভাবে অনেকটাই শক্তিশালী। মণ্ডল ও জেলা কমিটি গঠন করে বিজেপি অনেকদিন আগেই ময়দানে নেমে পড়েছে। তারা ভিত মজবুত করতে উঠেপড়ে লেগেছে। শক্তিশালী বিজেপির সঙ্গে লড়াই করার জন্য তৃণমূলের ভিতও শক্ত করা প্রয়োজন বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত।জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলেন, আমরা সারাবছর মানুষের সঙ্গে ছিলাম। করোনা পরিস্থিতির সময় বিরোধীদের ময়দানে দেখা যায়নি। ওইসময় আমরা নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে মানুষের দরজায় গিয়েছিলাম। ফলে মানুষের কাছে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ভোটের জন্য বেশকিছু রণকৌশল তৈরি করতে হয়। তা আমরা করব। লোকসভা নির্বাচনের রেশ কেটে গিয়েছে। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে আমরা আগের তুলনায় ভালো ফল করব। নেত্রীর নির্দেশমতো জেলায় আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিষয়টি বিরোধীদের রটনা।