"ভাষা আন্দোলন এর ইতিহাস ও বর্তমান সময়"
1 min readআকাশ চাকী:উত্তর দিনাজপুর: :সাল টা ১৯৪৭,পূর্ব পাকিস্তানে(বর্তমান বাংলাদেশ)কেবলমাত্র উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার চক্রান্ত করা হয়,এবং বাংলাকে মুছে ফেলে সমগ্র পাকিস্তানে কেবলমাত্র উর্দুকেই স্কুল ও মিডিয়াতে ব্যবহার করার প্রস্তাব করা হয় একই সঙ্গে মুদ্রার নোট এবং স্ট্যাম্প থেকে বাংলা মুছে ফেলে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রী ‘ফজলুর রহমান’ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেন।ঠিক সেই সময় বাঙালি জনগণ বিক্ষুব্ধ হয় পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালী ছাত্ররা জাতীয় ভাষা হিসেবে উর্দু ঘোষণা করার প্রতিবাদে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে,এই ক্রোধের আগুন ব্যাপক আকার ধারণ করে ১৯৫২ সালে,জাতীয় ভাষা উর্দু করার প্রতিবাদে বিভিন্ন ছাত্র নিজেদের জন্য এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য,বাংলা ভাষা রক্ষার জন্য আমৃত্যু সংগ্রাম করার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেন।২১ শে ফেব্রুয়ারি সকাল নয়টায়, ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে জড়ো হতে শুরু করে। সশস্ত্র পুলিশ বেষ্টিত ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সোয়া এগারোটার দিকে,ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রবেশ দ্বারে জড়ো হয়ে প্রতিবন্ধকতা ভাঙ্গার চেষ্টা করে। ছাত্রদের একটি দল ঢাকা মেডিকেল কলেজের দিকে দৌড় দেয় এবং বাকিরা পুলিশ পরিবেষ্টিত ক্যাম্পাসে মিছিল করে।
উপাচার্য পুলিশকে গুলি চালানো বন্ধ এবং ছাত্রদেরকে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার আদেশ দেন। তবে,ছাত্ররা চলে যাবার সময়, পুলিশ ১৪৪ ধারা লঙ্ঘনের জন্য কিছু ছাত্রকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের সংবাদ পেয়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা পূর্ব বাংলা গণপরিষদ অবরোধ করে এবং গণপরিষদে তাদের প্রস্তাব উপস্থাপনের দাবি জানায়। ছাত্রদের একটি দল বিল্ডিং এর মধ্যে দ্রুত ঢোকার চেষ্টাকালে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায় এবং তাতে “সালাম”,”রফিক”,”বরকত”,”জব্বার” সহ অনেক ছাত্র নিহত হয়। হত্যাকাণ্ডের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে, সারা শহর জুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। দোকানপাট, অফিস ও গনপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং ধর্মঘট শুরু হয়। আইনসভায়, মনোরঞ্জন ধর, বসন্তকুমার দাস, শামসুদ্দিন আহমেদ এবং ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সহ ছয় বিধায়ক মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিনকে আহত ছাত্রদের হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার দাবি জানান এবং শোকের চিহ্ন হিসেবে গণপরিষদ মুলতবির দাবি করেন। মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ, শরফুদ্দীন আহমেদ, শামসুদ্দীন আহমেদ খন্দকার এবং মশিউদ্দিন আহমেদ সহ সরকারি দলের কিছু সদস্য এই প্রস্তাবে সমর্থন দেন।তবে নুরুল আমিন এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।এই ঘটনার প্রতিবাদে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ জানাতে পরের দিন ২২ শে ফেব্রুয়ারি পুণরায় রাজপথে নেমে আসে। তারা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে শহীদদের জন্য অনুষ্ঠিত গায়েবি জানাজায় অংশগ্রহণ করে।ভাষাশহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য ২৩ শে ফেব্রুয়ারি এক রাতের মধ্যে মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে গড়ে ওঠে একটি স্মৃতিস্তম্ভ, যা সরকার ২৬ শে ফেব্রুয়ারি গুঁড়িয়ে দে
য়। একুশে ফেব্রুয়ারির এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলন আরও বেগবান হয়। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করলে ৯ মে অণুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
য়। একুশে ফেব্রুয়ারির এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলন আরও বেগবান হয়। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করলে ৯ মে অণুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
তখন থেকে প্রতি বছর এ দিনটি জাতীয় ‘শোক দিবস’ হিসেবে উদ্যাপিত হয়ে আসছে। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনায় ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা ১মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি এবং পরে একাধিক্রমে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষকবৃন্দ, ঢাকাস্থ বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তাবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন এবং সর্বস্তরের জনগণ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন।এই সময় “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি,আমি কি ভুলিতে পারি” গানের করুণ সুর বাজতে থাকে।
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বরের সাধারণ অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশ একটি প্রস্তাব জমা দেয় এবং অন্যান্য ২৮ টি দেশের সমর্থনে UNESCO জমা দেওয়া খসড়া প্রস্তাবটি গ্রহণ করে।এই প্রস্তাবের ভিত্ততেই ‘UNESCO’ ২১শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।এই সিদ্ধান্ত নি:সন্দেহে সাধুবাদযোগ্য, বিশ্বের প্রতিটি দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে নিজের মাতৃভাষা পরম সমাদরের বস্তু,আপন ভাষার মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব সকল দেশের সকল মানুষের।২১ শে ফেব্রুয়ারির মত একটি ঐতিহাসিক দিনকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করার মধ্য দিয়ে প্রতিটি মানুষকে তার মাতৃভাষার প্রতি দায়িত্বশীল করে তোলার একটি শুভ প্রচেষ্ঠা নিহিত আছে।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ২১ শে ফেব্রুয়ারি কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করার উৎসাহ লক্ষ করা হচ্ছে,ব্যতিক্রম আমাদের দেশেও হয় না,তবে খুবি দু:খের কথা,কোনো কোনো জায়গায় মাতৃভাষা আজও উপেক্ষিত, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সেই উপেক্ষা কাঠিয়ে ওঠার দিন,মাতৃভাষার গৌরব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে “মাতৃভাষার অপবাদ দূর হোক,যুগশিক্ষার উদ্বেল ধারা বাঙালি চিত্তের শুষ্ক নদীর রিক্ত পথে বান ডাকিয়ে বয়ে যাক,দুই কূল জাগুক পূর্ণ চেতনায়,ঘাটে ঘাটে উঠুক আনন্দ ধ্বনি”এই শপথ নেওয়ার দিন।।